Advertisement
২০ মে ২০২৪
International News

কূটনৈতিক স্বস্তিতে ভারত, মোদীর হাসিও চওড়া অতএব

ডোকলামে চিনের একতরফা আগ্রাসনের অভিযোগ এবং রাস্তা তৈরির চেষ্টাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি যে ভাবে উত্তপ্ত হয়েছিল, ভারত এবং চিন যে ভাবে বড়সড় সামরিক প্রস্তুতি সেরে ফেলেছিল, গত পাঁচ দশকে তেমন ছবি বেনজির।

ব্রিকস সম্মেলন। ছবি:রয়টার্স।

ব্রিকস সম্মেলন। ছবি:রয়টার্স।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৩৫
Share: Save:

স্বস্তি পাওয়ার যথেষ্ট অবকাশ তৈরি হল। এই স্বস্তির নেপথ্যে কী— মোদী সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য, নাকি আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সুফল, নাকি ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব— সে নিয়ে বিতর্ক চলতে দেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু ডোকলামকে কেন্দ্র করে ভারত-চিনের মধ্যে প্রলম্বিত উত্তেজনা, শেষ পর্যন্ত সামরিক সঙ্ঘাত এড়িয়েই সে উত্তেজনার প্রশমন, প্রশমনের কয়েক দিনের মধ্যেই এক আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক উষ্ণতার আভাস এবং চিনের মাটিতে আয়োজিত ব্রিকস শিখর সম্মেলনের মঞ্চ থেকে পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলির নাম উল্লেখ করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা যে ভাবে পর পর এল, তাতে একটা কূটনৈতিক অভিমুখ তথা ধারাবাহিকতা অত্যন্ত স্পষ্ট। এই ধারাবাহিকতার জন্য সাধুবাদই প্রাপ্য নয়াদিল্লির। এবং নয়াদিল্লির কাণ্ডারী যে হেতু নরেন্দ্র মোদীই আজ, সে হেতু সাধুবাদ নরেন্দ্র মোদীরও প্রাপ্য।

ডোকলামে চিনের একতরফা আগ্রাসনের অভিযোগ এবং রাস্তা তৈরির চেষ্টাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি যে ভাবে উত্তপ্ত হয়েছিল, ভারত এবং চিন যে ভাবে বড়সড় সামরিক প্রস্তুতি সেরে ফেলেছিল, গত পাঁচ দশকে তেমন ছবি বেনজির। সঙ্কটকালে আস্ফালন, বাগ্‌যুদ্ধ, হুঁশিয়ারি দেদার শোনা গিয়েছে হয়তো। কিন্তু দুই বৃহৎ শক্তি শেষ পর্যন্ত সঙ্ঘাতে জড়ায়নি। ভুটান-চিন সীমান্ত থেকে ভারত সেনা ফিরিয়ে নিয়েছে। চিনও রাস্তা তৈরির কাজ স্থগিত করেছে। রাস্তা তৈরি আটকানোই কিন্তু মূল লক্ষ্য ছিল নয়াদিল্লির। চিনের সঙ্গে পুরোদস্তুর সামরিক সঙ্ঘাতে না গিয়ে আলোচনায় রফা খুঁজে নেওয়াও নয়াদিল্লির লক্ষ্য ছিল। লক্ষ্যে যে পৌঁছতে পেরেছে নয়াদিল্লি, সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।

ব্রিকস সম্মেলনের কয়েকটা দিন আগেই স্বাভাবিকতা ফিরল ডোকলামে। কিন্তু শিয়ামেনে করমর্দনের সময় মোদী-চিনফিং-এর মুখ দেখে অনেকেরই সম্ভবত মনে হয়েছে, ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দীর্ঘ দিন কোনও সঙ্কটের মুখই দেখেনি। এও এক কূটনৈতিক পরিণতমনস্কতারই পরিচয়।

এ বারের ব্রিকস শিখর সম্মেলনে অবশ্য ভারতের জন্য আরও ইতিবাচক মুহূর্ত অপেক্ষায় ছিল। সেই মুহূর্ত লুকিয়ে ছিল যৌথ বিবৃতিতে। ব্রিকসের ইতিহাসে এই প্রথম বার পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলির নাম করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বার্তা দেওয়া হয়েছে।

ব্রিকসের পূর্ববর্তী সম্মেলন ভারতে আয়োজিত হয়েছিল। সেই মঞ্চ থেকেও পাক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। আয়োজকের তরফ থেকেই সে চেষ্টা হয়েছিল। চেষ্টা সফল হয়নি। এ বার সম্মেলনের আয়োজক পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতম মিত্র চিন। কিন্তু সেই চিনের মাটি থেকেই পাক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির নামোল্লেখ হল এবং দ্ব্যর্থহীন নিন্দা হল। নয়াদিল্লির কূটনৈতিক যাত্রাপথে নিঃসন্দেহে এ এক পরম প্রাপ্তি। ভারতের স্বস্তি পাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর হাসিও আজ চওড়া হতেই পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE