Advertisement
E-Paper

ব্যর্থ 

এ বার প্রশ্ন: বিজেপি রাজ্য সভাপতির এই বিবেচনাহীনতা কি শাস্তিমূলক পদক্ষেপের যোগ্য নহে? উত্তরের প্রতীক্ষা করিতেছে পশ্চিমবঙ্গীয় সমাজ।

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৩১
রাম নবমীতে অস্ত্র নিয়ে মিছিলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

রাম নবমীতে অস্ত্র নিয়ে মিছিলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

গত বৎসর নিষেধাজ্ঞা দিয়াছিল রাজ্য প্রশাসন। এই বৎসর জাতীয় নির্বাচন চলিতেছে, সুতরাং নিষেধাজ্ঞা আসিয়াছিল খোদ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ হইতে। তবু গত বৎসরও যে রকম অকুতোভয়ে বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রামনবমীর সশস্ত্র মিছিল ও জমায়েত ঘটাইয়াছিল, এই বারও একই ঘটনা ঘটিতে দেখা গেল। রামনবমী নামক একটি অনতিশ্রুত উৎসবে পশ্চিমবঙ্গের একাংশের মানুষ মাতিয়া উঠিল। বলা বাহুল্য, এই অংশটি সামাজিক নহে, রাজনৈতিক। সমাজ নহে, রাজনীতিই এই নবলব্ধ উৎসবের হেতু ও লক্ষ্য। তাই, কস্মিনকালেও যে উৎসব এই রাজ্যে ঘটিতে দেখা যায় নাই, তাহার মাহাত্ম্য প্রচারে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ স্বয়ং গদা-তরবারি হাতে রামনবমী মিছিলে নামিয়া পড়িলেন। তাঁহার বিচিত্র সশস্ত্র ভঙ্গিমার ছবি প্রথমত টেলিভিশনে, ও দ্বিতীয়ত ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াইয়া পড়িবার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে একটি আলাদা মেজাজ তৈরি হইয়া গেল। বিভিন্ন জায়গায় জমায়েত ও তৎপরবর্তী গোষ্ঠীসংঘর্ষ বাধিয়া গেল। ঠিক যে বিপদের কারণে প্রশাসন কিংবা নির্বাচন কমিশন অস্ত্রব্যবহার বিষয়ে সতর্ক করিয়াছিল, বহু ক্ষেত্রে সেই বিপদ প্রায় অবধারিত হইয়া উঠিল। আসানসোলের সন্নিকটে বরাকরে ১৪৪ ধারা জারি হইল, কেন্দ্রীয় বাহিনী অবতীর্ণ হইল। নেতারা আগুন লইয়া খেলিলেন। রাজনীতি এবং ভোটের জন্য তাঁহাদের কাছে এই আগুন অতি আরাধ্য— শান্তি, সংহতি, স্থিতি ইত্যাদি বিষয়কে খুব সহজে সেই আগুনে বলি দেওয়া যায়।

এ বার প্রশ্ন: বিজেপি রাজ্য সভাপতির এই বিবেচনাহীনতা কি শাস্তিমূলক পদক্ষেপের যোগ্য নহে? উত্তরের প্রতীক্ষা করিতেছে পশ্চিমবঙ্গীয় সমাজ। নির্বাচন কমিশনের আদেশ সরাসরি অমান্য করিয়া একটি জাতীয় দলের রাজ্য স্তরের প্রধান নেতার এমন সদর্প ও স্পর্ধিত আচরণের পরও যদি কোনও শাস্তি প্রদত্ত না হয়, তবে বুঝিতে হইবে এই দেশে নিষেধাজ্ঞা বস্তুটিই সম্পূর্ণত অসার হইয়া গিয়াছে, নির্বাচন কমিশন নামক প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বও কিছুমাত্র অবশিষ্ট নাই। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, খড়্গপুরের মহকুমাশাসক দিলীপ ঘোষের প্রতি সম্প্রতি যে শো-কজ় নোটিসটি দিয়াছেন, তাহা কিন্তু প্রধানত রামনবমীর দিন প্রশাসন ও মহকুমাশাসকের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করিবার জন্য, অন্য কোনও কারণে নয়। জাতীয় নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট চলাকালীন যে এক উচ্চপদস্থ নেতা নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করিলেন, সেই জন্য নয়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নাগরিক পরিসরে প্রকাশ্য অস্ত্র হাতে লইয়া মিছিল করা উচিত কি না, অন্য কেহ অন্য কোনও সময় এমন কাজ করিয়াছে কি না, করিলে তাহাদের উপরও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য কি না, ইত্যাদি তর্কবিতর্ক গত কয়েক বৎসর ধরিয়া অনেক শোনা গিয়াছে। এই বৎসরের পরিস্থিতিটি কিন্তু সম্পূর্ণ ভাবেই বিশেষ, তাই এই সব তর্কবিতর্কের ঊর্ধ্বে। নির্বাচনের সময় কেন সামাজিক স্থিতির বিষয়টি অতীব গুরুত্ব দিয়া বিবেচনা করিতে হয়, কেন সংখ্যালঘু কিংবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ভয় দেখাইতে হয় না, বরং তাহাদের আশ্বস্ত রাখিয়া ভোটপ্রদানে উৎসাহিত করিতে হয়, এই সাধারণ কথাটি যে কোনও বোধযুক্ত নাগরিকেরই বুঝিবার কথা। কিন্তু এই বৎসর দেখা গেল, প্রধানমন্ত্রী হইতে শুরু করিয়া কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের বিজেপি নেতারা প্রায় প্রত্যহ নির্বিকার ভাবে সেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করিতেছেন। পশ্চিমবঙ্গের রামনবমীর ভয়াবহতাকে সেই বৃহত্তর প্রেক্ষিতেই দেখিতে হইবে। সমাজের শান্তি ও স্থিতি রক্ষা এখানে প্রথম ও প্রধান কর্তব্য ছিল। বাৎসরিক বিতর্কের গণ্ডি ছাপাইয়া রামনবমী এই বৎসর দেশের গণতন্ত্র রক্ষার প্রশ্ন হইয়া উঠিয়াছিল। এবং শেষ পর্যন্ত, প্রশাসন হইতে নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি সমাজের প্রতি তাহাদের দায়িত্ব পালন করিতে ব্যর্থ হইল।

BJP Dilip Ghosh Ram Navami
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy