নিজের বাসভবন সংলগ্ন কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।— নিজস্ব চিত্র।
প্রতীক্ষিত ক্ষণটা এল অবশেষে। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরে বাংলায় যে অভূতপূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্ম হয়েছে, তাকে কী চোখে দেখছেন রাজ্যের প্রধান শাসক তথা সাম্প্রতিক সময়ে এ রাজ্যের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল গোটা বাংলা। অপেক্ষায় ছিলেন সম্ভবত জাতীয় রাজনীতির অনেক কুশীলবও। ফলাফল পর্যালোচনার জন্য দিন দুয়েক সময় নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে সব সেরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন। দীর্ঘ আলাপচারিতার অবকাশও তৈরি করলেন। কিন্তু যে ধাক্কা তাঁর দল খেল এ বারের নির্বাচনে, তার কারণ বিশ্লেষণে যেন সে ভাবে যেতেই চাইলেন না।
সাংবাদিক সম্মেলনে আগাগোড়া আক্রমণাত্মক থাকার চেষ্টাই করতে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু সে চেষ্টা সর্বাংশে সফল হল কি? কখনও মনে হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসন্তুষ্ট তথা বিরক্ত। কখনও মনে হল তিনি খানিক অসহায় বোধ করছেন। কখনও আবার মনে হল তিনি ঈষৎ বিভ্রান্ত।
তৃণমূলনেত্রী প্রথমত মানলেন না যে, এ বারের জনাদেশ কিছুটা হলেও ধাক্কা দিয়েছে তাঁর দলকে। আর দ্বিতীয়ত তিনি অন্তত তিন রকম তত্ত্বের অবতারণা করলেন বিজেপির উত্থানের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে। এক) প্রবল সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটানো হয়েছে এবং টাকা দিয়ে ভোট কেনা হয়েছে। দুই) ‘রিগিং’ বা ‘সেটিং’ বা ‘প্রোগ্রামিং’ হয়েছে। তিন) মনে হয় একটু বেশি কাজ করে ফেলেছিলাম, এ বার একটু দলটা বেশি করে করব।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
এই বিভ্রান্তিটা কাম্য নয়। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটিয়ে এবং টাকা ছড়িয়ে বিজেপি ১৮টি আসনে জিতেছে— এমন অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলতেই পারেন। কিন্তু এই তত্ত্বের সঙ্গে ‘একটু বেশি কাজ করে ফেলেছিলাম’ তত্ত্বের খুব একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। আর ‘সেটিং’ তত্ত্বের বাস তো এ সবের থেকে অনেক অনেক দূরে। যদি ‘সেটিং’-ই বিজেপির ভাল ফলের মূল কারণ হয়, তা হলে অন্য কারণগুলো অনেক আগেই অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে না কি?
আরও পড়ুন: ‘মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়তে চেয়েছিলাম, আমার চেয়ারকে প্রয়োজন নেই, চেয়ারের আমাকে প্রয়োজন’
প্রত্যাশিত ফল কেন হল না তৃণমূলের, কেন অপ্রত্যাশিত উত্থান ঘটল বিজেপির— পর্যালোচনায় বসেছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসল কারণটা বা কারণগুলো নিশ্চয়ই চিহ্নিত করে ফেলবেন তিনি, এই বিশ্বাস তো রাখাই যায়। কারণ হিসেবে ঠিক কোনগুলোকে চিহ্নিত করলেন তিনি, দলের বা সরকারের তরফে কোনও ঘাটতি বা খামতি কি তিনি খুঁজে পেলেন, যদি পেয়ে থাকেন, তা হলে সেগুলো কী কী? এমনই অজস্র প্রশ্ন নিয়ে অপেক্ষায় ছিল গোটা তৃণমূল, অপেক্ষায় ছিল অন্যান্য রাজনৈতিক দল,অপেক্ষায় ছিল প্রায় গোটা বাংলা। কিন্তু খুব সন্তোষজনক জবাব সম্ভবত মিলল না। গভীরে গিয়ে কি বিশ্লেষণই করলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? নাকি বিশ্লেষণ করলেন, কিন্তু সে সব নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইলেন না? জন্ম নিয়ে নিল এমন আরও কিছু প্রশ্ন।
এই ভঙ্গিটা কেন নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, দেশের অন্য সব নেতাই তো জনাদেশকে তো স্বাগত জানিয়েছেন এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছেন। গণতন্ত্রের এই স্বাভাবিক প্রথাটা মানতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি কেন?
খামতি বা ঘাটতি কি কিছুই ছিল না? যদি থেকে থাকে, তা তৃণমূলের প্রত্যেক কর্মীর তো তা জানা উচিত। শুধরে নেওয়ার জন্যও তো অন্তত আত্মসমীক্ষাটা জরুরি। সমীক্ষার দুটো পিঠই অত্যন্ত জরুরি আসলে। রাজ্যের মানুষ কী চোখে দেখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বোঝা উচিত। আর তা বোঝার পরে মানুষকে কী চোখে দেখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা মানুষেরও জানতে পারা উচিত। গণতান্ত্রিক বোঝাপড়াটা তাতেই মজবুত হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy