Advertisement
E-Paper

আশা বিসর্জন

লক্ষ্য ছিল ২০২৫। ভারত হইতে যক্ষ্মা নামক মারণব্যাধিটিকে মুছিয়া ফেলিবার সরকারি লক্ষ্য। কিন্তু রোগ প্রতিরোধের গতিপ্রকৃতি দেখিয়া বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, লক্ষ্যপূরণে সফল হইবে না ভারত। শঙ্কার কারণ যথেষ্ট।

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০০
লক্ষ্যপূরণের পথে পিছাইয়া পড়িতে হইল। —ফাইল চিত্র।

লক্ষ্যপূরণের পথে পিছাইয়া পড়িতে হইল। —ফাইল চিত্র।

লক্ষ্য ছিল ২০২৫। ভারত হইতে যক্ষ্মা নামক মারণব্যাধিটিকে মুছিয়া ফেলিবার সরকারি লক্ষ্য। কিন্তু রোগ প্রতিরোধের গতিপ্রকৃতি দেখিয়া বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, লক্ষ্যপূরণে সফল হইবে না ভারত। শঙ্কার কারণ যথেষ্ট। ভারতে যক্ষ্মা বা টিবি রোগাক্রান্তের সংখ্যা বিশ্বে সর্বাধিক, প্রায় এক তৃতীয়াংশ। বিশ্বে যক্ষ্মা আক্রান্ত হইয়া যত জনের মৃত্যু হয়, তাহার ৩২ শতাংশই ভারতের। মৃত্যুর সংখ্যা বৎসরে চার লক্ষেরও বেশি। নিশ্চিত ভাবেই যক্ষ্মা নির্মূলে ভারত ব্যর্থ হইলে বিশ্বব্যাপী তাহা নির্মূল করিবার কর্মসূচিটিও— বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা যে লক্ষ্যটি ২০৩০ সাল স্থির করিয়াছে— সফল হইবে না। এই নিরাময়যোগ্য রোগটি প্রতিরোধে যে পরিমাণ তৎপরতা এবং সদর্থক পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল, ভারত তাহা করিতেছে না বলিয়া হুঁশিয়ারি দিয়াছেন বিশেষজ্ঞরা।

অথচ, ২০১৭ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যক্ষ্মা সংক্রান্ত ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান (এনএসপি) ২০১৭-২৫’ নামক পরিকল্পনাটি ছিল যথেষ্ট উচ্চাকাঙ্ক্ষী। ইহা শুধুমাত্র কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের জন্য নহে, বরং যক্ষ্মা নির্মূলকরণে যাহাদের ভূমিকাটি গুরুত্বপূর্ণ সেই নাগরিক সংগঠন, বিদেশি সংস্থা, গবেষণাকেন্দ্র, বেসরকারি ক্ষেত্রগুলির জন্যও একটি নির্দেশিকা স্বরূপ। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত নীতির সঙ্গে সাযুজ্য রাখিয়াই পরিকল্পনাটি রূপায়িত হইয়াছিল। যেমন, সরকারের সঙ্গে বেসরকারি ক্ষেত্রগুলির সংযোগ বৃদ্ধি। অধিকাংশ যক্ষ্মা-আক্রান্ত প্রাথমিক পর্যায়ে বেসরকারি ক্ষেত্রগুলিতেই যান। গুরুত্ব দেওয়া হয় নজরদারি বৃদ্ধি এবং ঔষধ প্রতিরোধক যক্ষ্মার ব্যবস্থাপনার উপরও। বস্তুত, লক্ষ্যপূরণের পথে ভারতের পিছাইয়া পড়িবার অন্যতম কারণ ঔষধ প্রতিরোধক যক্ষ্মার প্রকোপ বৃদ্ধি। সাধারণ যক্ষ্মারোগীর ক্ষেত্রে ছয় মাস ধরিয়া কঠোর নিয়মে থাকিতে হয় এবং প্রত্যহ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হাজিরা আবশ্যক। বেনিয়ম হইলে শরীরে এক ধরনের প্রতিরোধী ক্ষমতা জন্মায় এবং সাধারণ ঔষধ কার্যকারিতা হারায়। সুতরাং, এই দিকে নজর দিবার প্রয়োজনটিও এনএসপি-তে যথার্থ ভাবেই স্থান পাইয়াছিল।

তবুও লক্ষ্যপূরণের পথে পিছাইয়া পড়িতে হইল। কারণ হিসাবে সেই আপ্তবাক্যটিকেই স্মরণ করিতে হইবে: নিরাময় অপেক্ষা প্রতিরোধ অধিক কাম্য। প্রতিরোধার্থে যে বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, দুর্ভাগ্যক্রমে এই দেশে সেইগুলি যথেষ্ট অবহেলিত। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, খোলা নর্দমা, স্তূপীকৃত জঞ্জাল শুধু যক্ষ্মার জীবাণুর পক্ষেই আদর্শ নহে, রোগীর নিরাময়ের সময়সীমা বৃদ্ধির পক্ষেও আদর্শ। অভাব রহিয়াছে সচেতনতার ক্ষেত্রেও। এখনও প্রায় দশ শতাংশ যক্ষ্মারোগীর মৃত্যু হয় ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না করিবার কারণে। যক্ষ্মা লইয়া সামাজিক ছুতমার্গ এখনও প্রবল। ভয় থাকে জীবিকাচ্যুত হইবারও। সুতরাং রোগ লুকাইবার প্রবণতা প্রকট। সমাধান হিসাবে যক্ষ্মারোগীদের উৎসাহভাতা প্রদানের কথা বলা হইলেও প্রয়োজনের তুলনায় তাহা স্বল্প। নিয়মিত নজরদারির কথা বলা হইলেও সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর অত্যধিক চাপের ফলে তাহা অ-সম্ভব। এবং ভারত এখনও ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা নির্ণায়ক ডিএসটি পরীক্ষাটির পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগও করিতে পারে নাই। অবিলম্বে কাজগুলি শুরু না হইলে ২০২৫-এর আশা বিসর্জন দিতে হইবে।

Tuberculosis Health India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy