সরকারি হাসপাতালে মৃত ডেঙ্গি রোগীদের পরিসংখ্যান দিয়াছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে যাঁহারা স্থান পান নাই, তাঁহাদের সংখ্যা কত? বনগাঁর অঞ্জনা কুণ্ডুর অভিজ্ঞতা সেই প্রশ্ন তুলিয়া দিল। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল হইতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্বামীকে কলিকাতায় আনিয়াছিলেন তিনি। বহু চেষ্টাতেও নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিতে পারেন নাই। গভীর রাত্রে নানা নার্সিং হোমে ঘুরিয়া অবশেষে এক বেসরকারি হাসপাতালে স্থান জুটিলেও, ততক্ষণে আর আশা নাই। স্বামীকে হারাইয়া অঞ্জনাদেবীর প্রশ্ন, ‘সরকারি হাসপাতালে কি আমাদের স্থান নাই?’ মৃত্যুমাত্রই শোকাবহ, কিন্তু হাসপাতালের দরজায় দরজায় চিকিৎসার জন্য ঘুরিয়া যাঁহাদের মৃত্যু হয়, তাঁহাদের পরিজন সান্ত্বনা খুঁজিবেন কোথায়? কলকাতার কোন মেডিক্যাল কলেজে বা সরকারি হাসপাতালে স্থান পাওয়া যাইতে পারে, জেলায় বসিয়া আগাম কেন জানা যাইবে না? কেন বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালই সে তথ্য দিতে পারিল না অঞ্জনাদেবীকে? পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গির বিস্তার ফের দেখাইল, রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে রেফারাল ব্যবস্থার তিলমাত্র উন্নতি হয় নাই। একের পর এক সরকারি হাসপাতাল মরণাপন্ন রোগীকে প্রত্যাখ্যান করিতেছে, একবিংশের পশ্চিমবঙ্গ চাহিয়া দেখিতেছে।
চিকিৎসা ব্যবস্থার এই ব্যাধিটি পুরাতন। প্রতিকারের জন্য নানা সময়ে নানা আশ্বাস মিলিয়াছে। একটি মেডিক্যাল কলেজের অধীনে কোন কোন এলাকার হাসপাতাল থাকিবে, তাহা স্থির করিয়া সেই প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে তথ্য আদানপ্রদানের চেষ্টা হইয়াছিল। জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোর উন্নতির চেষ্টাও হইয়াছে। অকারণ রেফার করিবার ঝোঁক এড়াইতে তথ্য সংগ্রহ এবং নজরদারির প্রতিশ্রুতিও শোনা গিয়াছে। কিন্তু মশাবাহিত রোগের প্রাবল্যে ফের স্পষ্ট হইল, কোনওটিই কাজ করে নাই। কত জ্বরাক্রান্ত রোগীকে কলিকাতায় রেফার করা আবশ্যক ছিল, কোন যুক্তিতে আবশ্যক ছিল, তদন্ত প্রয়োজন। অধিকাংশ রোগীর যে সকল পরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রয়োজন, তাহা জেলা বা মহকুমা হাসপাতালে থাকিবার কথা। গত ছয় বৎসরে জেলা ও মহকুমা স্তরের হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট ব্যয় করিয়াছে রাজ্য সরকার। জেলায় ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট’-এর সংখ্যাও বাড়িয়াছে। মহকুমা ও ব্লক স্তরে রক্ত পরীক্ষা, রক্তের ব্যাংক খুলিয়াছে। কিসের অভাবে, কোন যুক্তিতে রোগীকে রেফার করিতে হইতেছে?
পশ্চিমবঙ্গে কত মৃত্যু ডেঙ্গিতে ঘটিয়াছে, আদালতে সেই তথ্য চাহিয়া মামলা হইয়াছে। তথ্য কি মিলিবে? আংশিক অথবা ভ্রান্ত রক্তের রিপোর্ট, অসত্য অথবা অর্ধসত্য মৃত্যু-শংসাপত্র, সরকারি ডাক্তার ও বেসরকারি ক্লিনিকের দায় এড়াইবার চেষ্টা, এই সকল কারণে সম্পূর্ণ সত্য সম্মুখে আনা দুঃসাধ্য হইবে। কিন্তু রোগ লইয়া সংশয় থাকিতে পারে, চিকিৎসার অধিকার লইয়া বিতর্ক নাই। জ্বরে আক্রান্ত কত রোগী অচিকিৎসা, অকার্যকর চিকিৎসা, বিলম্বে চিকিৎসায় প্রাণ হারাইয়াছেন, কত রোগীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রেফার করা হইয়াছে, কত রোগী সরকারি হাসপাতাল হইতে বেসরকারি হাসপাতালে যাইতে বাধ্য হইয়াছেন, রাজ্যবাসীকে জানাইতে হইবে। ইহা সরকারের নৈতিক দায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy