Advertisement
E-Paper

না আঁচাইতে

আপাত-সুদৃশ্য ফুলেও কাঁটা বেশ তীক্ষ্ণ হয়। প্রথমত, মুখের কথা ও কাজের মধ্যে বিরাট ফারাক। অব্যবস্থিতচিত্ততার সাক্ষাৎ প্রতিভূ ট্রাম্প-মহাশয় কী বলিতেছেন, তাহার উপর ভরসা না করাই মঙ্গল।

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ০০:০৬

সু গ্রীব দোসরের মূল্য যে কত, রাম জানিতেন। প্রধানমন্ত্রী মোদীও জানেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মোদীর জমানাকে একটি ঐতিহাসিকতা দিয়া দিয়াছেন, আগামী বহু ব্যর্থতাতেও যাহা ইতিহাস হইতে মুছিবে না। এই জমানাতেই প্রথম বার মার্কিন সরকারি ঘোষণা শোনা গিয়াছে যে, পাকিস্তানকে তাহার গোপন জঙ্গি যোগাযোগ না কমাইলে তাহার শাস্তি হইবে, আর আফগানিস্তানের শৃঙ্খলা আনিবার জন্য আমেরিকার দরকার এখন, পাকিস্তানকে নহে, ভারতকে! এমন স্পষ্ট ভাবে ভারতের প্রতি নির্ভরতা ও আস্থা জ্ঞাপন আগে কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখে শোনা যায় নাই। বিশেষত আফগানিস্তান প্রসঙ্গে, যেখানে পাকিস্তান ভারতের দিকে বহু কাল যাবৎ অভিযোগের দৃঢ় অঙ্গুলি তুলিয়া রাখিয়াছে। ইহা সরাসরি নরেন্দ্র মোদীর কৃতিত্ব না হইলেও, মোদীর শাসনে যে ভারতের মুকুটে এই পরম মিত্রতার পালকটি যুক্ত হইল, তাহাই বিরাট খবর। দিল্লির এমইএ উল্লসিত বিবৃতি দিয়াছে, যাহার মূল কথা সেই গদগদ চর্বিতচর্বণ: ভারত আর মার্কিন দেশ একই সূত্রে বাঁধা। এই সুযোগে আফগানিস্তানকে শক্তপোক্ত ভাবে গড়িতে হইবে, যাহাতে আঞ্চলিক স্থিতি রক্ষায় সে একটি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করিতে পারে, এমন আশাও দিল্লিতে পোষিত হইতেছে। সবেরই লক্ষ্য এক, পাকিস্তানকে এক হাত লইতে হইবে। ঘরের ভোটার সমাজকে খুশি রাখিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রতি মুহূর্তে পাকিস্তানের উপর এক হাত লইতে চান। ট্রাম্প এক ঢিলে তাঁহার দুইটি পাখি মারিয়া তাঁহার লক্ষ্যসাধনে সাহায্য করিয়াছেন। এক, পাকিস্তানকে সন্ত্রাস-মদতকারী দেশ হিসাবে সোজাসুজি চিহ্নিত করা। দুই, ভারতকে বিশেষ কূটনৈতিক গুরুত্ব দিয়া কাছে টানা। না, আমেরিকা সফরে মোদীর কোলাকুলি বৃথা যায় নাই।

আপাত-সুদৃশ্য ফুলেও কাঁটা বেশ তীক্ষ্ণ হয়। প্রথমত, মুখের কথা ও কাজের মধ্যে বিরাট ফারাক। অব্যবস্থিতচিত্ততার সাক্ষাৎ প্রতিভূ ট্রাম্প-মহাশয় কী বলিতেছেন, তাহার উপর ভরসা না করাই মঙ্গল। বিশেষত যখন জানা নাই যে তাঁহার বক্তব্যের সঙ্গে তাঁহার বিদেশনীতি উপদেষ্টাদের মতৈক্য আছে কি না। বরং উপদেষ্টা মহলের আশঙ্কা, পাকিস্তানকে হঠাৎ দূরে সরাইয়া দিলে হিতে বিপরীত হইতে পারে। পাক সরকার ও সামরিক প্রতিষ্ঠান যে বরাবর জঙ্গি যোগাযোগ রাখিয়া চলে, এক হাতে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে শামিল হয়, নিজের আকাশে মার্কিন ড্রোনসমূহে আচ্ছন্ন হইতে দেয়, অন্য হাতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির জন্য বিস্তর সুরক্ষার ব্যবস্থা করে— এ সব নূতন তথ্য নয়। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ওবামাও ইসলামাবাদকে একাধিক বার প্রত্যক্ষ সতর্কবাণী দিয়াছেন, যদিও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারেন নাই। কেন পারেন নাই, তাহার ঘোর বাস্তবসম্মত কারণ আছে। ট্রাম্পও ‘কিছু’ করিতে গিয়া সেই কারণগুলিতে ঠেকিয়া যাইতে পারেন।

আর, পাকিস্তানের প্রতি আমেরিকা কঠোর মনোভাবাপন্ন হইলেই যে ভারতের লাভের ঝুলি পূর্ণ হইবে, হিসাবটি হয়তো অত সহজ না-ও হইতে পারে। বর্তমানে সীমান্ত হামলা যত পরিমাণেই ঘটুক না কেন, পাক সরকারকে সেই হামলার উপর নজর রাখিতে হইতেছে। আন্তর্জাতিক চাপ সামলাইয়া চলা ইসলামাবাদের একটি জরুরি দায়। কিন্তু এক বার সেই চাপ হইতে মুক্ত হইয়া গেলে ভারতের উপর হামলা বাড়িতে পারে। পাক রাজনীতিকে ঠেলা দিলেই ইসলামাবাদ-রাওয়ালপিন্ডির জঙ্গিচক্র ভাঙিবে, এমন সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ, উল্টে তাহা দৃঢ়তর হইবারই কথা। তেহরান ও মস্কো যেহেতু ওয়াশিংটনের বৃহত্তর শত্রু, ইসলামাবাদকে ছাড়িয়া দিলে ওই অঞ্চলে আমেরিকার পা রাখিবার জায়গা মিলিবে না, ড্রোন-আকাশ মেলা তো দূরস্থান। সুতরাং, না আঁচাইতে বিশ্বাস নাই। দিল্লি বোধহয় ট্রাম্প বিষয়ে অত্যধিক বিশ্বাসপ্রবণ হইয়া পড়িতেছে!

Donald Trump Narendra Modi India US Pakistan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy