Advertisement
২৩ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

তুচ্ছতার কারবার

কংগ্রেসের সভাপতি পদে রাহুল গাঁধীর নির্বাচন (অথবা, পরিবারতন্ত্রের নিয়ম মানিয়া অবধারিত অভিষেক) বিষয়ে মণিশঙ্কর আইয়ার একটি উক্তি করিয়াছেন, যাহাতে মুঘল সাম্রাজ্যের উল্লেখ রহিয়াছে।

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৩২
Share: Save:

দুইটিমাত্র বস্তুই অসীম। এক, এই বিশ্ব; এবং দুই, মানুষের নির্বুদ্ধিতা। তাহার মধ্যে প্রথমটির অসীমত্ব সম্বন্ধে আমি নিশ্চিত নই।— অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের নামে এমন একটি উক্তি বহুলপ্রচলিত। ২০১৭ সালে উপস্থিত থাকিলে তিনি হয়তো আরও একটি অসীমের সন্ধান পাইতেন। প্রধানমন্ত্রীর আসনটিকে তাহার বর্তমান অধিকারী আরও কত অসম্মানে নিমজ্জিত করিতে পারেন, সেই সম্ভাবনাটিও অসীম। রাজধর্ম তাঁহার অভিজ্ঞান নহে। তিনি তুচ্ছতারই কারবারি। তিনি যেগুলিকে ‘বড় ভাবনা’ বলিয়া চালাইতে চেষ্টা করিয়াছেন, সেগুলিও বড় জোর তেল-সাবান বেচিবার নিত্যকর্মপদ্ধতির অঙ্গ। কিন্তু, সেই তুচ্ছতা তবুও সহনীয়। প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীই নেহরুর ন্যায় প্রাজ্ঞ হইবেন, অথবা মনমোহন সিংহের ন্যায় পণ্ডিত, ভারতবাসী সে আশা করে না। এমনকী, নরেন্দ্র মোদীর নিকট পি ভি নরসিংহ রাও অথবা অটলবিহারী বাজপেয়ী হইয়া উঠিবার প্রত্যাশাও সম্ভবত কেহ করেন না। হরেক ‘জুমলা’, বিবিধ অর্ধসত্য এবং তাৎপর্যবাহী নীরবতা সমেতই দেশ নরেন্দ্র মোদীকে চিনিয়াছে। কিন্তু, মধুর না হইলেও, তাঁহারও শেষ পাওয়া কার্যত অসম্ভব। গুজরাতের বর্তমান নির্বাচনী প্রচার জানাইয়া দিল, তুচ্ছতার আরও অনেক অবশিষ্ট আছে। অনুমান করা চলে, ভোটের ফলাফল লইয়া তিনি এবং তাঁহার দল ঘোর দুশ্চিন্তায় রহিয়াছেন। নির্বাচনের দিন যত কাছে আসিতেছে, তিনিও ততই নামিতেছেন। সেই অনন্তযাত্রার সাম্প্রতিকতম অধ্যায়ের নাম আওরঙ্গজেব।

কংগ্রেসের সভাপতি পদে রাহুল গাঁধীর নির্বাচন (অথবা, পরিবারতন্ত্রের নিয়ম মানিয়া অবধারিত অভিষেক) বিষয়ে মণিশঙ্কর আইয়ার একটি উক্তি করিয়াছেন, যাহাতে মুঘল সাম্রাজ্যের উল্লেখ রহিয়াছে। নরেন্দ্র মোদী সোল্লাসে সেই উক্তিটিকে লুফিয়া লইয়াছেন— কংগ্রেস আপত্তি জানাইয়া বলিয়াছে, তিনি আইয়ারের উক্তির অর্ধেক চাপিয়া গিয়াছেন। কিন্তু, সেই তর্ক আপাতত উহ্যই থাকুক। আওরঙ্গজেব নামটি এক বিশেষ ধর্মাবলম্বী শাসকের বলিয়াই গুজরাতের ভূমিপুত্রের আগ্রহ কিঞ্চিৎ বেশি কি না, সেই অনুমানও থাকুক। কিন্তু, দেশের প্রধানমন্ত্রী হইয়া তিনি বিরোধী দলের নেতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিতে ঠিক কোন স্তরে নামিতে পারেন, সেই প্রসঙ্গটির দিকে নজর না দিয়া যে উপায় নাই। অক্টোবর মাস হইতে তিনি নিজে যাহাই ভাবুন না কেন, তথ্যগত ভাবে তিনি এখনও গোটা দেশের প্রধানমন্ত্রী— কোনও একটি দলের রাজ্য স্তরের নেতা নহেন। তাঁহার নিজের সম্মানের কথা তিনি জানেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আসনটি তাঁহার ব্যক্তিগত নহে, তাহা দেশের সম্পত্তি। অতএব, সেই আসনের সম্মানরক্ষার দায়িত্বটি, অধুনা প্রচলিত ভাষায়, জাতীয় কর্তব্য। ইতিহাস বলিবে, সেই কর্তব্য পালনে নরেন্দ্র মোদী চিরকালই অপারগ। সত্য বলিতে, ভারতীয় রাজনীতিতে তিনি একটি যুগ। সেই যুগের ধর্ম কদর্যতা। বিরোধী নেতাদের বিচিত্র সব ডাকনাম চালু করা হইতে ধর্মীয় পরিচয় লইয়া আক্রমণ, সবই এই যুগেই ঘটিয়াছে। বস্তুত, গুজরাত নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া যাহা চলিতেছে, সেই অ-পূর্ব ব্যক্তিগত আক্রমণের আলোকে সাম্প্রতিক অতীতকেও ‘শোভন’ বোধ হইতে পারে। কদর্যতারও যে স্তরভেদ হইতে পারে, তাহা দেখাইয়া দেওয়াই বুঝি ইতিহাসে নরেন্দ্র মোদীর সর্বাপেক্ষা বড় অবদান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi PM Modi Prime Minister
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE