Advertisement
E-Paper

বাঙ্ময় মৌন

গণতন্ত্রের উপর এমন উপর্যুপরি আঘাতে জনসমাজে আলোড়ন উঠিয়াছে, নিন্দা ও প্রতিবাদে মুখর হইয়াছে সংবাদমাধ্যম। কিন্তু মোদী নীরব। দেশবাসীর প্রবল ক্ষোভ ও বেদনা দেশের প্রশাসনের প্রধানকে স্পর্শ করিয়াছে, এমন ইঙ্গিত মিলে নাই।

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০০

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নাকি নীরবে সমালোচনা শুনিবার অভ্যাস করিতেছেন। উত্তম কথা। নেতাদের কথা আর ঢাকের বাদ্যি থামিলে আরাম হয়। কিন্তু মোদীর মৌন দেশবাসীকে স্বস্তি দিবে কি? প্রসিদ্ধ অভিনেতা প্রকাশ রাজ সাংবাদিক হত্যার পর প্রধানমন্ত্রীর নীরবতাকে ‘শীতল আতঙ্ক’ বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। নাগরিক সমাজের একটি বড় অংশের মনোভাব প্রতিফলিত হইয়াছে সেই কথায়। সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশকে গুলি করিয়া হত্যা করিবার মাস না ঘুরিতে চিত্রসাংবাদিক শান্তনু ভৌমিক ছুরির আঘাতে খুন হইয়াছেন ত্রিপুরায়। তাহার পরেও নানা রাজ্যে সাংবাদিকদের নিয়মিত হুমকি দেওয়া হইতেছে। কখনও প্রকাশ্যে, কখনও নামহীন বার্তায়। এই সকল অপরাধের কোনওটিরই কিনারা হয় নাই, কাহারও শাস্তি হয় নাই। গণতন্ত্রের উপর এমন উপর্যুপরি আঘাতে জনসমাজে আলোড়ন উঠিয়াছে, নিন্দা ও প্রতিবাদে মুখর হইয়াছে সংবাদমাধ্যম। কিন্তু মোদী নীরব। দেশবাসীর প্রবল ক্ষোভ ও বেদনা দেশের প্রশাসনের প্রধানকে স্পর্শ করিয়াছে, এমন ইঙ্গিত মিলে নাই। ব্রিটিশ রাজত্বে লাটসাহেবরা লক্ষ লক্ষ ভারতীয়ের প্রতিবাদ এমনই তাচ্ছিল্যের সহিত উপেক্ষা করিত। গুলি কিংবা লাঠি খাইয়া দুই-চারিটি ‘নেটিভ’ মরিলে চাহিয়াও দেখিত না। নরেন্দ্র মোদী তাঁহাদের উত্তরসূরি। সাংবাদিকরা মরিল কি বাঁচিল, তাহাতে সরকারের কী আসিয়া যায়? মোদীর নূতন ভারতে সাংবাদিকদের প্রয়োজন কী?

নরেন্দ্র মোদীর প্রয়োজন অনুগামী এবং ভক্তবৃন্দের। যাহারা সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যমে সাংবাদিকের গুলিবিদ্ধ দেহের ছবি দেখাইয়া সকল সাংবাদিককে সতর্ক করিয়াছে, সেই সমর্থকদের সহিত দেশের প্রধানমন্ত্রী টুইটারে সযত্নে সম্পর্ক রাখিয়া চলেন। মোদীর ভরসা প্রসার ভারতী। তাহার ‘সুনির্বাচিত’ কর্তারা মোদীর মুখনিঃসৃত প্রতিটি বাক্য প্রচার করে, কিন্তু বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের সমালোচনা করিলে তাঁহার বার্তা সম্প্রচার বন্ধ করিয়া দেয়। মোদীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানটিতে কত কথাই না শোনা গিয়াছে। কিন্তু বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদের নির্বিচারে হত্যার নিন্দা, এবং তাহার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিবার আশ্বাস কয় বার শুনাইয়াছেন তিনি? নিন্দুকে বলে, পাছে তেমন আশ্বাস কেহ চাহিয়া বসে, তাই তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করেন না, সংসদ যথাসম্ভব এড়াইয়া চলেন। একতরফা মন কি বাত-এর বাহিরে তাঁহার পছন্দ একতরফা জনসভা, যেখানে প্রশ্নের সম্ভাবনাই নাই— তিনি বক্তা, অন্য সকলেই শ্রোতা। অথচ প্রশ্নগুলি পিছু ছাড়িতে চাহে না। হিন্দুত্বের সমালোচক, যুক্তিবাদী লেখক গোবিন্দ পানসারে, নরেন্দ্র দাভোলকর, এম এম কালবুর্গিকে কেন হত্যা করা হইল, কেন হত্যার কিনারা হইল না, সে প্রশ্ন তুলিয়াছেন প্রথিতযশা লেখক ও শিল্পীরা। তাঁহাদের অনেকে সরকারি সম্মান ফিরাইয়াও প্রতিবাদ করিয়াছেন।

এখন সারা দেশে সাংবাদিকরা মানবশৃঙ্খল করিয়া, মিছিল করিয়া সাংবাদিক-হত্যার প্রতিবাদ করিতেছেন। কিন্তু মোদী নিশ্চুপ। গোহত্যার অভিযোগ আনিয়া মুসলিম ও দলিতদের হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনাগুলির পরেও মোদী দীর্ঘ দিন এমনই নীরব ছিলেন। যখন এই নীরবতার সহিত হত্যার তদন্তে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা যুক্ত হয়, তাহা এক ভয়ানক বার্তা দেয়। খুন করিয়া, ভয় দেখাইয়া বিরোধী কণ্ঠস্বরকে নীরব করিবার চেষ্টা মুদ্রার একটি পিঠ। অপর পিঠ, বিরোধীদের প্রতি মোদীর নিরুত্তর থাকিবার অভ্যাস। উত্তর না দিবার ধৃষ্টতাকে বাক্‌সংযম বলিয়া চালাইবার চেষ্টা যেমন অন্যায়, তেমনই হাস্যকর। অন্যায়ের প্রতি সম্মতি ও সমর্থন জানায় যে মৌন, তাহা শিরদাঁড়া দিয়ে হিমশীতল স্রোত বহাইয়া দেয়। তেমন নীরবতাকে ধিক্কার জানাইয়া প্রকাশ রাজ ভুল করেন নাই। বরং একটি জরুরি কাজ করিয়াছেন।

Narendra Modi BJP Central Government নরেন্দ্র মোদী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy