Advertisement
E-Paper

এখনই থমকে না দাঁড়ালে খুব দেরি হয়ে যাবে

পাহাড়ের দিকে তাকালে এখন শুধুই আগুন চোখে পড়ছে, তার করাল গ্রাস যেন রোজ বাড়ছে। যে পরিমাণ আগুন লেগেছে পাহাড়ে, ততটা বারুদের স্তূপ কি আদৌ ছিল? এক মাস আগেও পাহাড়ের ছবিটা যে রকম ছিল, তাতে কি কারও মনে হয়েছিল, অপেক্ষায় এত বড় সঙ্কট?

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ০৪:০৫
অশান্তির আগুন জ্বলছে পাহাড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

অশান্তির আগুন জ্বলছে পাহাড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

সময়ের দাবি ছিল সংযম। স্বাভাবিকতায় ফেরার এক এবং একমাত্র পথ ছিল সংযম দেখানো। কিন্তু দু’পক্ষই সংযমের সম্পূর্ণ উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করল। এক দিকে সঙ্ঘাত আরও প্রবল করতে উদগ্র গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। অন্য দিকে কোনও রকম আপোসে নারাজ প্রশাসন, ক্রমশ তীব্র হচ্ছে বলপ্রয়োগ। ফল কী? হাসি আর নেই পাহাড়ে, বরং সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে দার্জিলিং-কালিম্পং-কার্শিয়ং আজ।

পাহাড়ের দিকে তাকালে এখন শুধুই আগুন চোখে পড়ছে, তার করাল গ্রাস যেন রোজ বাড়ছে। যে পরিমাণ আগুন লেগেছে পাহাড়ে, ততটা বারুদের স্তূপ কি আদৌ ছিল? এক মাস আগেও পাহাড়ের ছবিটা যে রকম ছিল, তাতে কি কারও মনে হয়েছিল, অপেক্ষায় এত বড় সঙ্কট? পরিস্থিতির এত অবনতির সত্যিই কোনও কারণ ছিল না। তা সত্ত্বেও দাউদাউ জ্বলছে পাহাড়, রক্তক্ষরণও আরও তীব্র হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে।

পরিস্থিতি দুর্ভাগ্যজনক, সন্দেহ নেই। কিন্তু সংঘাতের কানাগলিতে যে ভাবে পথ হারিয়েছে দার্জিলিং, তা থেকে মুক্তি পাওয়ার রাস্তা খুঁজে নেওয়াই এখন আশু লক্ষ্য হওয়া উচিত। একমাত্র আলোচনাতেই সেই রাস্তার সন্ধান মিলতে পারে। সভ্য রাষ্ট্রে বা সভ্য সমাজে যুযুধান পক্ষগুলির মধ্যে আলোচনার একটা বিকল্প পথ সব সময়ই খোলা থাকে। সংঘাত যতই তীব্র হোক, আলোচনার সূত্রটা পুরোপুরি ছিন্ন করার রাস্তায় কেউই হাঁটতে চান না। কিন্তু এখানে আলোচনার রাস্তাটাকেই অবরুদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে সর্বাগ্রে।

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা কোনও আলোচনায় যেতে চায় না। অনির্দিষ্ট কালের বন্‌ধকে অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। কিন্তু আদালতের সে রায় নস্যাৎ করে প্রবল দাপটে পাহাড় অচল করে রাখতে বদ্ধপরিকর গুরুঙ্গরা। আগুন লাগিয়ে, ইটবৃষ্টি করে, খুকরির কোপ বসিয়ে, বোমা ছুড়ে, তাণ্ডব করে গোটা পাহাড়কে আগ্নেয়গিরির রূপ দিয়েছে মোর্চা।

প্রশাসনও সমপরিমাণ একবগ্গা। বজ্রমুষ্টি আরও কঠিন হচ্ছে রোজ। লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, বিপুল বাহিনী মোতায়েন, সেনা টহল, ধরপাকড়, তল্লাশি, রুট মার্চ— ভারী হচ্ছে বাতাস ক্রমশ।

বহু বছরের অস্থিরতা কাটিয়ে সবে ছন্দে ফিরেছিল পাহাড়। পর্যটন ফুলেফেঁপে উঠছিল, অর্থনীতি বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছিল, সমৃদ্ধির দিন উঁকি দিতে শুরু করেছিল পাহাড়বাসীর দ্বারপ্রান্তে। সে সব ভুলে গিয়ে যাবতীয় ইতিবাচক সম্ভাবনাকে ফের খাদে ছুড়ে ফেলা তো হচ্ছেই, পাহাড়ের প্রত্যেক বাসিন্দাকে সমূহ বিপন্নতার মুখেও ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। দায় কিন্তু দু’পক্ষের উপরেই বর্তাবে এ বার।

একের পর এক বেপরোয়া পদক্ষেপে আজ রৈ রৈ শব্দে পরস্পরের দিকে ছুটছে যুযুধান দুই পক্ষ। সংঘর্ষের প্রাবল্য লাফিয়ে বাড়ছে। কিন্তু এখনও খুব দেরি হয়ে যায়নি বোধ হয়। এখনও পিছিয়ে আসার পথটা খোলাই রয়েছে। পদক্ষেপগুলোকে একটু সামলে নিতে হবে শুধু। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপটা করার আগে একটু থমকে দাঁড়াতে হবে। সেটুকু করা গেলেই ঝিমিয়ে আসবে আঁচটা।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বলপ্রয়োগ কখনও নিয়ন্ত্রণ কায়েমের সর্বশেষ পথ হতে পারে না। বলপ্রয়োগে কোনও অঞ্চলের উপর ভৌগোলিক নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা হয়তো সম্ভব। কিন্তু মানবিক ও মানসিক নিয়ন্ত্রণ তাতে হাতছাড়া হয়ে যায়। দখলদারিটা থাকে শুধু শবের উপর, আত্মাটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই কথাটা মাথায় রাখা এখন খুব জরুরি।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Gorkha Janmukti Morcha Darjeeling দার্জিলিং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy