এভাবেই পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ উদ্ধার হয় দম্পতির। —ফাইল ছবি
কাকদ্বীপে সিপিএম সমর্থক দম্পতির মর্মান্তিক মৃত্যু আরও একবার প্রমাণ করল যে, কাকদ্বীপে অন্তত সিপিএমের মৃত্যু এখনও হয়নি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগের রাতে নিজেদের বাড়িতেই মৃত্যু হয় দেবপ্রসাদ দাস ও উষারানি দাসের। দগ্ধ মৃতদেহ মেলে।
সিপিএম বলেছিল, খুন করেছে তৃণমূল। তৃণমূল বলেছিল, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু। রাজনৈতিক চাপানউতোর এবং দেবপ্রসাদ-উষারানির মৃত্যু পরবর্তী উত্তেজনা সে দিনও বুঝিয়ে দিয়েছিল, কাকদ্বীপে সিপিএম এখনও অস্তিত্বশীল। তিন মাস পরে এখন আট সিপিএম কর্মীর গ্রেফতারি আবার প্রামণ করল, কাকদ্বীপে সিপিএম রয়েছে।
দেবপ্রসাদ দাস ও উষারানি দাসের রহস্যজনক মৃত্যুর পরে স্বাভাবিক ভাবেই অভিযোগ দায়ের হয়েছিল থানায়। কিন্তু এফআইআরে যে ৯ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনেছিলেন দেবপ্রসাদ-উষারানির ছেলে, তাঁদের কেউ গ্রেফতার হননি। ঘটনার পরে তিন মাসেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। এতদিন পরে পুলিশ আচমকা ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু এফআইআর-এ যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের কাউকে পুলিশ ধরেনি। ভোটের আগের রাতে দাস দম্পতির রহস্যমৃত্যু ঘিরে যাঁরা সবচেয়ে বেশি হইচই শুরু করে দিয়েছিলেন বলে খবর, তাঁরাই গ্রেফতার হলেন। রহস্য যে আরও জমজমাট হল, তা আশা করা যায় প্রত্যেকেই বুঝতে পারছেন।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
সিপিএম সমর্থক দম্পতির মৃত্যুতে তাঁদের পুত্র দীপঙ্কর একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ভারতীয় ফৌজদারি বিধি অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময় অন্তর দীপঙ্করকে পুলিশের জানানোর কথা, তদন্তে অগ্রগতি কতটা হল। গত তিন মাসে তদন্তের কোনও অগ্রগতির খবর পুলিশ দীপঙ্করকে দিয়েছে কি না জানা নেই। কিন্তু ধরপাকড়ে নেমে অনেককে যে চমকে দিয়েছে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
আরও পড়ুন: এফআইআর-এ নাম নেই, তবু কাকদ্বীপে সিপিএম দম্পতির মৃত্যুতে গ্রেফতার দলেরই ৮ কর্মী!
সিপিএম তীব্র বিরোধিতা করছে পুলিশি পদক্ষেপে। নির্লজ্জের মতো নাটক সাজানো হচ্ছে বলে সিপিএম নেতারা মন্তব্য করছেন। যাঁরা অভিযোগকারী, তাঁদেরই অভিযুক্ত সাজানোর চেষ্টা চলছে বলে সিপিএম দাবি করছে।
দেবপ্রসাদ এবং উষারানির রহস্য মৃত্যুর পরে শাসকের দিক থেকে প্রথমে দাবি করা হয়েছিল, ঘটনাটি আদৌও খুনের ঘটনা নয়। শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে মৃত্যু— এমন তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু এ বার সম্ভবত শাসকের তথা সরকারের তথা পুলিশের সেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাচ্ছে। খুনের যে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল, তার ভিত্তিতেই সম্ভবত তদন্ত এগচ্ছে। কিন্তু আসল খুনিদের চিহ্নিত করার কোনও চেষ্টা রয়েছে কি না, তা নিয়ে বিস্তর সংশয় থেকে যাচ্ছে।
কাকদ্বীপ নিয়ে পুলিশ যে পদক্ষেপ করল, প্রথমেই তাকে ‘সাজানো পদক্ষেপ’ আখ্যা দেওয়া না হয় বন্ধ করা যাক। ধরে নেওয়া যাক, পুলিশ স্বচ্ছতার সঙ্গেই পদক্ষেপ করছে। ধরে নেওয়া যাক, কাকদ্বীপ কাণ্ডের তদন্তে শাসকের কোনও হস্তক্ষেপ নেই। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, এফআইআর-এ যাঁদের নাম ছিল, তাঁরা কেউ গ্রেফতার হলেন না কেন? তদন্তে নেমেই কি পুলিশ বুঝতে পেরে গেল যে, এফআইআর-এ উল্লিখিত ব্যক্তিরা কোনওভাবেই এ সবের মধ্যে জড়িত নন? যাঁদের নাম এফআইআর-এ লেখা রয়েছে, তাঁদেরকে পুলিশ কি জেরাটুকুও করেছে? নাকি তার আগেই পুলিশ আসল ‘অপরাধী’ খুঁজে পেয়ে গিয়েছে? এই প্রশ্নগুলোর জবাব মেলা খুব জরুরি।
আরও একটা বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। ভোটের আগের রাতে দেবপ্রসাদ-উষারানির মৃত্যু হওয়ার পরে শাসকদলের তরফে বয়ান ছিল— এটা দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু। এ বার যেন সকলের অলক্ষেই সেই ‘দুর্ঘটনা’ তত্ত্ব উধাও। ৮ জন গ্রেফতার হয়ে গিয়েছেন। দেবপ্রসাদ-উষারানিকে খুনের পিছনে এঁদের হাত থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে যে ‘খুন’ তত্ত্ব একেবারে অস্বীকার করার চেষ্টা হয়েছিল, আজ নীরবেই তা যেন মেনে নেওয়া হচ্ছে। প্রশ্নচিহ্ন এই অবস্থান বদল নিয়েই। প্রশ্নচিহ্নের জন্ম দিচ্ছে অভিযোগকারীদের নতুন অভিযোগও। কাকদ্বীপ কাণ্ডে পুলিশি ভূমিকার বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিতে পারতেন যাঁরা, তাঁদেরই খুনি সাজিয়ে গ্রেফতার করা হল বলে অভিযোগ উঠছে। এই অভিযোগ আরও গুরুতর চেহারা নেয় কি না, সে দিকেই আপাতত নজর থাকবে গোটা রাজ্যের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy