Advertisement
১৯ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় পশ্চিমবঙ্গে মূল যে দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক স্থিতাবস্থা গড়ে উঠেছিল, তার মূল কারণ ছিল এখানে সরকার বা রাষ্ট্র কোনও ধর্মের ব্যাপারে অধিক আগ্রহ দেখায়নি।

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

ধর্মের নামে এত আগ্রাসন!

• রণবীর সমাদ্দার এই রাজ্যে জনপ্রিয়তাবাদী শাসনের ইতিবাচক দিকগুলি তুলে ধরেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন, এই নীতির সম্ভাবনা এখনও শেষ হয়ে যায়নি (‘পথসন্ধিতে রাজ্য রাজনীতি’, ২৭-৪)। তবুও তাঁর আশংকা, হিন্দুত্ববাদী শক্তিকে প্রতিহত করতে জনপ্রিয়তাবাদী শাসনের সাফল্য নিয়ে। কিন্তু এই নিবন্ধে লেখক যে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন, তা হল ‘জনপ্রিয়তাবাদী’ নীতির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আন্তঃসম্পর্কের প্রশ্নটি।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় পশ্চিমবঙ্গে মূল যে দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক স্থিতাবস্থা গড়ে উঠেছিল, তার মূল কারণ ছিল এখানে সরকার বা রাষ্ট্র কোনও ধর্মের ব্যাপারে অধিক আগ্রহ দেখায়নি। তাই আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদ ও মুসলিম মৌলবাদ কেউই এখানকার রাজনীতিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। জনপ্রিয়তাবাদী রাজনীতি এই ধারাকে ভেঙে দিয়েছে। ফলত সামাজিক জোট ভেঙে যাচ্ছে, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সহজেই জায়গা খুঁজে পাচ্ছে। ‘জনপ্রিয়তাবাদ’ বলতে শুধু সবুজ সাথী আর কন্যাশ্রী বোঝায় না, সব ধর্মকে সমান ভাবে উসকানি দেওয়ার ব্যবস্থা করাও জনপ্রিয়তাবাদ। ধর্মের নামে এত আগ্রাসন পশ্চিমবঙ্গ আগে দেখেনি।

এই আবহ এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে। আগ্রাসী জনপ্রিয়তাবাদী রাজনীতি আর আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদ— কে কাকে প্রতিহত করবে? আসলে এরা একে অপরের পরিপূরক। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদী এই রাজ্যে প্রচারে এসে দুটি বর্গের উল্লেখ করছিলেন, একটি হল উদ্বাস্তু আর অপরটি অনুপ্রবেশকারী। অনুপ্রবেশকারী বলতে তিনি মুসলিমদের বুঝিয়েছিলেন আর উদ্বাস্তু বলতে তাঁর ইঙ্গিত ছিল হিন্দুদের দিকে। এটিও বলেন যে, তিনি উদ্বাস্তুদের পক্ষে ও অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে। এই বক্তব্য রাজ্যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটাতে এক ঝাঁঝালো দাওয়াইয়ের কাজ করেছিল। কিন্তু মঞ্চটা সাজিয়ে রেখেছিল জনপ্রিয়তাবাদী রাজনীতি। এই রাজনীতি মুসলিম সমাজের মাতব্বরদের নিজেদের পক্ষে টেনে এনেছিল। ২০১৪ নির্বাচনে জনপ্রিয়তাবাদীরা ও হিন্দুত্ববাদীরা উভয়েই লাভবান হয়েছিল।

নিবন্ধকার আগ্রাসী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিপদ সন্ধান করতে গিয়ে দেখতে পাননি জনপ্রিয়তাবাদের মধ্যের বিপদ, যা একমাত্রিক শ্রেণিকরণের সামগ্রিক ক্ষমতায় বিশ্বাসী এবং আমাদের পরিচয়ের বহুমাত্রিকতাকে অস্বীকার করে। তাই এরা হনুমান দিয়ে ঠেকাতে চায় রামকে, আর নরম হিন্দুত্ব দিয়ে চরম হিন্দুত্বকে।

নিমাই করন

কলকাতা-৪৮

ঢাকও বাজাতেন

• মানসী মুখোপাধ্যায়ের লেখা প্রসঙ্গে জানাই যে, শ্রদ্ধেয় মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে আমরা এক জন বরণীয় সংগীত শিল্পী হিসাবেই জানি (‘বই পড়ে হোমিয়োপ্যাথি শিখেছিলেন’, পত্রিকা, ১৩-৫)। তাঁর আরও একটি অসাধারণ গুণ ছিল— তিনি চমৎকার ঢাক বাজাতে পারতেন। বিজয়গড়ে ‘জাগরণী’ ক্লাবের দুর্গাপুজোয় প্রায় প্রতি বছরই তিনি ঢাক বাজাতেন। আমার মামার বাড়ি তখন ছিল বর্তমান নিরঞ্জন সদনের (আগে ভাঙা বিশাল হলঘরের) ঈশান কোণে। পূর্ববঙ্গের ঢাকা থেকে এসে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ওইখানেই আমার মামারা বসবাস করতে থাকেন। নিরঞ্জন সদনের ঈশান কোণে থাকার সময় মা-মাসিরা ‘জাগরণী’ ক্লাবে যেতেন ঠাকুর দেখতে নয়, মানবেন্দ্রবাবুর ঢাক বাজানো দেখতে। ঢাক বাজানোয় তাঁর পারদর্শিতার কথা আমার দিদা এবং মায়ের কাছ থেকেই শুনেছি।

পৃথ্বীশ চক্রবর্তী

কলকাতা-১৪০

বেতন কী হবে?

• বেসরকারি বিদ্যালয়গুলির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ— পড়ুয়াদের কাছ থেকে উচ্চ হারে ফি নেওয়া, হঠাৎ হঠাৎ বিভিন্ন খাতে টাকা নেওয়া, ভর্তির সময় বিদ্যালয় ভেদে কয়েক হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত ডোনেশন নেওয়া, বিদ্যালয় থেকে বই-খাতা সহ পড়াশুনার অন্যান্য সামগ্রী কিনতে বাধ্য করা।

মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন ভাবে অভিভাবকদের প্রতিবাদে শামিল হতে দেখা যায়। প্রশাসন থেকেও শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা না করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এটা তো ব্যবসাই, ব্যবসায় যেমন বিনিয়োগ করা হয়, এখানেও বিনিয়োগ করা হয়, ব্যবসায় যেমন মুনাফার চেষ্টা থাকে, এখানেও মুনাফার চেষ্টা থাকে; ব্যবসায় মুনাফা ভাল হলে যেমন আরও বিনিয়োগ হয়, এখানেও দিন দিন বিনিয়োগ বেড়ে চলেছে। অর্থাৎ এখানে মুনাফা ভালই।

বেসরকারি বিদ্যালয়গুলির এই লাগাম ছাড়া ফি ও অর্থ আদায়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আনার কথা সরকার ভাবছে বলে খবরে প্রকাশ। কিন্তু এই বিদ্যালয়গুলিতে যাঁরা কর্মরত, বিশেষ করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতনের কথা কে ভাববে? কলকাতা, সল্টলেকে কিছু নামী বিদ্যালয়ে সরকার-নির্ধারিত পে-স্কেলে বেতন দেওয়া হলেও, বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে, বিশেষ করে মফস্সলের বিদ্যালয়গুলিতে তিন থেকে দশ হাজার টাকার প্যাকেজে বেতন দেওয়া হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এম এসসি-র বেতন পাঁচ হাজার টাকা। অনেক বি এড পাশ ছেলে-মেয়েও আছে। ছুটির পর স্কুলে প্রাইভেট টিউশনের সুযোগ থাকায়, বা বাইরেও এই সব স্কুলের ছেলে-মেয়েদের পড়িয়ে কিছু অর্থ রোজগারের সুযোগ শিক্ষক-শিক্ষিকারা পান। অন্য কর্মচারীদের সেই সুযোগও নেই। বিগত কয়েক বছর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না, সরকারি বিভিন্ন দফতরে এক-তৃতীয়াংশ পদ খালি, নিয়োগ নেই, কর্মীর অভাবে লাইব্রেরিগুলো এক-এক করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থাতেও বেসরকারি বিদ্যালয়গুলির কম টাকায় শিক্ষক নিয়োগের কোনও অসুবিধে হচ্ছে না। এখানে হায়ার এন্ড ফায়ার পলিসির সার্থক প্রয়োগ হয়। শিক্ষকরা সংগঠিত না হওয়ায় বেতন বাড়ানোর কোনও দাবি ওঠে না। ফলে, অভিভাবক ও কর্মরত— দুই অংশেরই শোষণ চলছে। সরকারি বিদ্যালয়ে ফি নিয়ন্ত্রণ (২৭-৫) করলে এখানে কর্মরতদের বেতন হ্রাসের কোনও প্রশ্ন নেই, কিন্তু সরকার থেকে বেসরকারি বিদ্যালয়ের ফি ইত্যাদি আদায়ে নিয়ন্ত্রণ আনলে, আশংকা হয়, সামান্য বেতন পাওয়া কর্মরতদের ওপর কোপ পড়বে না তো?

অসিতকুমার রায়

ভদ্রেশ্বর, হুগলি

দেড় ফুট ফাঁক

• শিয়ালদহ-নামখানা লাইনে বেশির ভাগ প্ল্যাটফর্ম নিচু। প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন কামরার মধ্যে ব্যবধান হয় দেড় ফুটের মতো। ফলে ট্রেন যাত্রীদের ওঠানামা ঝুঁকিবহুল।

একটি চোখে দেখা কাহিনি বলি। ১১ মে বাড়ি যাব বলে লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল ধরে এগিয়ে গেলাম। ট্রেন থেকে নেমে বসে আছি, হঠাৎ এক জন বয়স্ক মানুষ প্ল্যাটফর্ম থেকে কামরায় উঠতে গিয়ে পড়ে যান। ভাগ্যিস তখন ট্রেন চালু হয়নি। এই অসুবিধে দূর করতে ঊর্ধ্বতন রেল কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত পদক্ষেপ করুক।

শিবপ্রসাদ জানা

দক্ষিণ ২৪ পরগনা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

ভ্রম সংশোধন

‘সিপি-কে চিঠি দেবে সোনিকা-পরিবার’ (৭-৬, পৃ ১) শীর্ষক প্রতিবেদনে গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গের নাম ভুল করে ‘বিজয় গর্গ’ লেখা হয়েছে।

‘সাহিত্যের মতো সংগীত ছিল তাঁর প্রাণ’ প্রবন্ধের (পত্রিকা, ১০-৬) সঙ্গে প্রকাশিত একটি ছবিতে আলোকচিত্রী হিসেবে ভুলবশত বিবেক দাসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এই অনিচ্ছাকৃত ভুলগুলির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letter CPIM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE