Advertisement
১০ মে ২০২৪
Birth rate

সম্পাদক সমীপেষু: নিয়ন্ত্রণ দরকার

জনসংখ্যা বৃদ্ধির দায় সবটাই কি অশিক্ষিত গরিব লোকের উপর বর্তাবে?

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:১৬
Share: Save:

অনীক চক্রবর্তীর ‘সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ভারত’ (৭-১২) শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, জন্মহার কমছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রচেষ্টার সমালোচনা করে লেখক বলেছেন, গরিব মানুষের সামনে সব দরজা যখন বন্ধ, তখন তাঁরা সন্তান উৎপাদন করেন বেশি। আবার রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে প্রজননক্ষম নারীদের মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি নিরক্ষর। তাই ওই সব রাজ্যে জন্মহার এখনও প্রতিস্থাপন মাত্রা ছোঁয়নি। আমার প্রশ্ন, ওই সব রাজ্যে প্রায় ৭৫% মহিলা যদি শিক্ষিত হন, তাঁরাও কি সরকারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি “আমরা দু’জন, আমাদের দু’জন” অনুসরণ করেন? উত্তরপ্রদেশের দু’শো জনেরও বেশি বিধায়কের সন্তান সংখ্যা তিন থেকে আট হয় কী ভাবে? জনপ্রতিনিধিরা সমাজ সচেতন হবেন, আমরা আশা করি। তা হলে তাঁদের স্ত্রীরা কি শিক্ষিতা নন, যে কারণে অধিক সন্তানধারণ করছেন? একটি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দম্পতি এগারোটি সন্তানের পিতামাতা হন কী ভাবে? এগুলো কি বিচ্ছিন্ন ঘটনা? এমন উদাহরণ আরও অনেক আছে।

স্বাধীনতার পরে দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবার কল্যাণ দফতর কাজ করে চলেছে। তা সত্ত্বেও গত ৪০ বছরে দেশের জনসংখ্যা ৭০ কোটি থেকে শতকরা একশো ভাগ বেড়ে ১৪০ কোটি হয় কী ভাবে? তা হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির দায় সবটাই কি অশিক্ষিত গরিব লোকের উপর বর্তাবে? ১৯৫৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা ছিল প্রায় আড়াই কোটি, এই রাজ্যের জন্মহার প্রতিস্থাপন মাত্রায় পৌঁছলেও এখন লোকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে দশ কোটিতে। পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে জন্মহার প্রতিস্থাপন মাত্রায় না পৌঁছনোর কারণে, ওই সব রাজ্যের জনস্রোত এখন এই রাজ্যে আছড়ে পড়ছে এবং জনসংখ্যা বিন্যাসের বিপুল পরিবর্তন ঘটতে চলেছে! এখনও উত্তর ভারতের অধিকাংশ রাজ্যের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মচারীরা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বড়ই উদাসীন। কারণ ছেলে ও মেয়ের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির সমান অধিকারকে মান্যতা দিতে তাঁরা নারাজ। বংশরক্ষার জন্য পুত্রসন্তানের বিশেষ প্রয়োজন বলে তাঁদের ধারণা। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চাই কঠোর ব্যবস্থা। নয়তো ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে দেখা দিতে পারে খাদ্যাভাব, ছড়াবে দূষণ, সঙ্কুচিত হবে কর্মসংস্থান, বনভূমি-জলাভূমি ধ্বংস হবে।

প্রসন্নকুমার কোলে

শ্রীরামপুর, হুগলি

প্রশ্নকর্তা কারা?

‘নারীবিদ্বেষী প্রশ্নে সরব সনিয়া, পিছু হটল সিবিএসই’ (১৪-১২) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। গত ১১ ডিসেম্বর সিবিএসই-র দশম শ্রেণির ইংরেজি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে যে গদ্যাংশ তুলে ধরা হয়েছে, তাতে রয়েছে একাধিক নারীবিদ্বেষী বক্তব্য। সিবিএসই-র মতো গুরুত্বপূর্ণ সর্বভারতীয় বোর্ডের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এমন বক্তব্য উঠে আসা দেশের গরিমাকে কালিমালিপ্ত করেছে। সম্প্রতি আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর মেয়েদের উপর নানা ফরমান জারি করেন, যা নিয়ে নিন্দায় সরব হয় গোটা বিশ্ব। এই প্রশ্নপত্রের উদ্ধৃত গদ্যাংশটি ঠিক যেন সেই ধ্যানধারণাগুলিকে সমর্থন করেই লেখা। প্রশ্নকর্তার কি এটুকু বোধ নেই যে, প্রশ্নপত্রে এই বিষয়টি তুলে আনলে তা ছাত্রছাত্রীদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে? না কি তিনি প্রশ্ন তৈরি করার সুযোগ পেয়েছেন বলে নিজস্ব চিন্তা ও মনোভাবকে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। যতটুকু জানি, এই সমস্ত বোর্ড পরীক্ষায় যাঁরা প্রশ্ন তৈরি করার দায়িত্ব পান, তাঁরা শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকেন। সেই কারণেই বোর্ড ও সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে তারা আসীন। আরও উচ্চপদ পাওয়ার নেশায় শাসক দলের আনুগত্য দেখাতেই এঁরা সদাব্যস্ত। অথচ, নিষ্ঠার সঙ্গে পড়িয়ে যাওয়া শিক্ষকরা প্রশ্ন করার সুযোগ পান না। এর ফলে বিভিন্ন পরীক্ষায় বিতর্কিত প্রশ্ন, ভুল প্রশ্নের মাসুল দিতে হয় পরীক্ষার্থীদের। আমাদের রাজ্যেও টেট পরীক্ষায় একাধিক ভুল প্রশ্ন আসায় প্রকাশিত মেধাতালিকা নিয়ে অনেক অভিযোগ ওঠে। যোগ্য প্রার্থীরা আদালতের দ্বারস্থ হন। দীর্ঘ দিন ধরে আদালতে মামলা চলে। মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও সিলেবাস-বহির্ভূত প্রশ্ন চলে আসার ঘটনা অনেক ঘটেছে। যিনি প্রশ্ন করছেন, সিলেবাস সম্পর্কে তাঁর কোনও নির্দিষ্ট ধারণা না থাকার কারণেই এই বিপত্তি ঘটে থাকে। তাই পরীক্ষার্থীদের হয়রানি দূর করতে যোগ্য শিক্ষকদের প্রশ্ন করার দায়িত্ব দেওয়া উচিত হবে বলে মনে করি।

ভাস্কর পাল

কলকাতা-১১৩

দূষণমুক্তির দিকে

মোহিত রায় অত্যন্ত ন্যায্য ভাবেই দূষণদায় ধনী দেশগুলির উপর চাপিয়েছেন (‘ধনী দেশগুলিই দূষণদায়ী’, ১০-১২)। ধনী দেশগুলির লোকসংখ্যা কম। কিন্তু এখানকার মানুষজন বেশি বিদ্যুতের ব্যবহার করেন। ফল, অধিক কার্বন নিঃসরণ। আর ভারত এবং চিনে জনসংখ্যা প্রচুর, কিন্তু বিদ্যুৎ-নির্ভর যন্ত্রপাতির ব্যবহার কম, ফলে কার্বন নিঃসরণে শেষের সারিতে। ভারত নিজের স্বার্থে পরিবেশ ঠিক রাখতে কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারে। বিদ্যুৎ হচ্ছে বর্তমান সভ্যতা এবং শিল্পের মূল স্তম্ভ। এই বিদ্যুতের উৎপাদনে ভারত কিন্তু কয়লা থেকে সৌরশক্তিতে চলে আসতে পারে। যদিও এর জন্য প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন। ভারতে প্রায় সারা বছরই প্রচুর সূর্যালোক পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালে অনেক ক্ষণ ধরে তীব্র রোদ পাওয়া যায়। দেশ জুড়ে সৌরশক্তি অনায়াসে তৈরি হতে পারে। কোথায় যেন পড়েছিলাম, সাহারার বুকে তার বিছিয়ে যে পরিমাণ সৌরশক্তি তৈরি হবে, তা দিয়ে সমস্ত পৃথিবীতে বিদ্যুৎ দেওয়া যেতে পারে। তবে তার জন্য আরও ভাল প্রযুক্তি দরকার। মূলধনের জোগান সরকারকেই করতে হবে। সহায়তা করুন শিল্পপতিরা। গড়ে উঠুক দূষণমুক্ত ভারত।

সঞ্জয় চৌধুরী

খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

বালির বাঁধ

রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন দু’জন প্রান্তিক মানুষ, রানু মণ্ডল ও ভুবন বাদ্যকর। এঁদের প্রতি সেবাধর্মে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠেছেন বহু মানুষ। প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও এঁরা দু’জনই নিঃসন্দেহে প্রতিভাশালী। রানু শুনে শুনে গান শিখেছেন, অবিকল মনে রেখেছেন, আশ্চর্য সুরেলা তাঁর কণ্ঠ। ভুবন গান বাঁধতে পারেন, রানুর মতো সুরেলা না হলেও তাঁর মেঠো সুরের মায়া আছে। সংবাদে প্রকাশ, কলকাতার পুরভোটে ভুবন তৃণমূলের প্রচারের মুখ হয়ে উঠেছেন (“‘কাঁচা বাদাম’ গানখ্যাত ভুবন তৃণমূলের প্রচারেও”, ১৩-২)। নেতাদের আশ্বাসে তিনি আপ্লুত বলে জানা যাচ্ছে। হয়তো তিনি ভারতচন্দ্র পড়েননি, তা না হলে তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিতাম, ‘নেতার পিরীতি বালির বাঁধ / ক্ষণে হাতে দড়ি ক্ষণকে চাঁদ’। রাজনৈতিক নেতারা রানুকে নিয়ে টানাটানি করেননি সঙ্গত কারণে। কিন্তু এঁদের দু’জনেরই প্রয়োজন ছিল উপযুক্ত প্রশিক্ষণের। তা হলে তাঁরা দেশের সম্পদ হতে পারতেন, বিশেষ করে রানু মণ্ডল। এঁদের সৌভাগ্য নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী। তা যেন তাসের ঘর।

আরতি মজুমদার

কলকাতা-৮২

গোপন থাক

বক্সার জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবিটি (‘রাজকীয়’, ১৩-১২) দেখে আনন্দিত হলাম। আনন্দ হল ব্যাঘ্রকুলের বিস্তার হচ্ছে জেনে। সঙ্গে কিঞ্চিৎ চিন্তার উদ্রেক হল, এদের অবস্থান কোন জঙ্গলে সেটা বন দফতর জানিয়েছে বলে।

এটা জানানো কি খুব জরুরি ছিল? ওত পেতে থাকা আন্তর্জাতিক চোরাশিকারিদের চোখে এই সব পশুপাখি এক পণ্য বিশেষ। কাছেই নেপাল ও ভুটান সীমান্ত। তাই এই পশুপাখিদের অবস্থান যেন কোনও ভাবেই ভবিষ্যতে জানানো না হয়। এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের বন দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সুব্রত দত্ত

কলকাতা-৫৮

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Birth rate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE