Advertisement
০২ মে ২০২৪
Sandeshkhali Incident

সম্পাদক সমীপেষু: রাজা আসে আর যায়

কোনও ভূখণ্ডে রাজনৈতিক হানাহানি, সাম্প্রদায়িক বিভেদ বা খুন-জখমের মেরামতি সম্ভব। কিন্তু নারীর উপর অত্যাচারের ঘটনা কখনও কেউ মেনে নিতে পারেন না।

sandeshkhali

— ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৪ ০৪:৪১
Share: Save:

দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘রাজ্যবাসী, বিশ্বাস করুন...’ (২২-২) প্রবন্ধে উঠে এসেছে সন্দেশখালি কাণ্ডের শেখ শাহজাহান ও তাঁর দুই শাগরেদ উত্তম ও শিবুর উত্থানের ইতিহাস। আসলে এ সব উদাহরণ মাত্র, প্রতীকী চরিত্র। সব দেশে সব কালে এঁরা থাকেন। বাম আমলেই শাহজাহানদের উত্থান। যে চারাগাছ সেই সময়ে রোপণ করা হয়েছিল, তা তো এত দিনে বনস্পতি হয়ে উঠবেই; হয়ে উঠবে বিষবৃক্ষ। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়— “রাজা আসে যায় আসে আর যায়/ শুধু পোষাকের রং বদলায়/ শুধু মুখোশের ঢং বদলায়”। কিন্তু এই বিষবৃক্ষরূপ শাহজাহানদের আসা আছে, যাওয়া নেই। উপরওয়ালা (নেতা-মন্ত্রী) দোসর হওয়ায় এঁরা নানান কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে যান নির্বিচারে। সর্বোপরি পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভোটে বড় বড় মানুষকে জেতানোর কাজ করে থাকেন এঁরাই। তাই উপরওয়ালাদের স্নেহ আশীর্বাদ এঁদের উপর বর্ষিত হয় অকাতরে। কিন্তু বাড়াবাড়ি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়, তখন আর কারও হাত থাকে না। কোনও ভূখণ্ডে রাজনৈতিক হানাহানি, সাম্প্রদায়িক বিভেদ বা খুন-জখমের মেরামতি সম্ভব। কিন্তু নারীর উপর অত্যাচারের ঘটনা কখনও কেউ মেনে নিতে পারেন না। কারণ, তাতে রাজ্য বা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। এই চাপ থেকে মুক্ত হওয়া কঠিন। মাস্টারমশাইরা সব দেখছেন।

তা-ও মানুষ বিশ্বাস রাখেন, সব সময় সব সরকারে কিছু না কিছু ‘ভাল মানুষ’ থাকেন; যাঁদের গতি অন্ধকারের দিকে নয়। “যে বিশ্বাসে পাখি বাসা গড়ে,/ গাছে ফুল ফোটে, ধরে ফল,/ মা তার শিশুকে বুকে তোলে।/ যুক্তি তর্ক সেখানে অচল।” (মণীন্দ্র রায়)।

সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪

মানবিক ঝাঁকি

শুভজিৎ বাগচীর ‘বিশ্বাসে মিলায় লক্ষ্য বস্তু’ (২৬-২) শীর্ষক প্রবন্ধের সঙ্গে আমি একমত— বাবরি মসজিদ ধ্বংসের (১৯৯২) ‘পহেলা ঝাঁকি’র পরেও আরও তিনটে ঝাঁকি, না কি আরও বেশি, সেটা স্পষ্ট নয়। আরএসএস তার ‘হিন্দু আজ ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ কেন?’ পুস্তিকায় স্পষ্ট ভাবে দেশ জুড়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দির পুনরায় নির্মাণের লক্ষ্য ঘোষণা করেছিল সেই আশির দশকেই— “আমায় নির্দেশ দিচ্ছেন তাঁরা (দেবতারা)— আগে যেখানে স্বমহিমায় মণ্ডিত হয়ে যেমনটি বিরাজ করতেন তাঁরা, তেমনই মহিমামণ্ডিত রূপে তাঁদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।” এখন দেখা যাচ্ছে যে, সে কাজ করার তিনটি পথ খুলে গিয়েছে, বিশেষ করে ২০১৯ সালের পরে। পরিকল্পিত ভাবে আইনের পথে আবেদনের পর আবেদন করে ইতিবাচক রায় আদায় করে নেওয়া; সমান্তরাল ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করে, নয়া হিন্দুত্ববাদী শক্তি কর্তৃক আইনি অজুহাত তুলে মাঝরাতে বুলডোজ়ার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া মসজিদ, মাদ্রাসা, এমনকি কবরস্থান। তিন, এ সবে কার্যসিদ্ধি না হলে, অগণিত করসেবক দিয়ে তাণ্ডব ঘটানো।

প্রবন্ধকার বলেছেন, ‘স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আইনে দু’চারটি শব্দ এ দিক-ও দিক করলেই’ আর এ কাজে বাধা আসবে না। উল্লেখ্য যে, প্রবন্ধকার উল্লিখিত ১৯৯১ সালের আইনটি বলবৎ আজও, সাংবিধানিক বৈধতার প্রশ্ন নিয়ে একগুচ্ছ আবেদন সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও। এমনকি রাম জন্মভূমি সংক্রান্ত রায়ে (২০১৯) নাগরিকদের হতাশার উদ্রেক হলেও আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ কিন্তু এই ১৯৯১ সালের আইনটির সপক্ষে পর্যবেক্ষণ করছিল যে, এটি দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র রক্ষার একটি আইনি উপায়। বলা হয়েছিল, অতীতের শাসকদের কার্যকলাপের থেকে রেহাই পাওয়ার রাস্তা আইন নয়। ১৯৯৪ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের উল্লেখ করে তাঁরা বলেছিলেন, ১৯৯১ সালের আইন করা হয়েছে এটা সুনিশ্চিত করতে যে, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে নিপীড়নের উপায় হিসাবে ঐতিহাসিক ভুলকে ব্যবহার করা চলে না।

তার পরেও অবশ্য সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা আইনের বৈধতা সংক্রান্ত আবেদন শুনতে রাজি হয়েছেন ২০২০ সাল থেকে। আদালতের রায়কে শিরোধার্য ধরেও একটি প্রশ্ন তোলাই যায়। কী ভাবে এই কেন্দ্রীয় আইনকে উপেক্ষা করে বার বার একাধিক ধর্মীয় স্থানে সমীক্ষার অনুমতি দিয়ে যাওয়া হল? বাস্তবে এর ফলে এক ভয়ঙ্কর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মন্দির ভাঙা, তার উপর মসজিদ নির্মাণ ও তাকে আবার ভেঙে মন্দির স্থাপনের মধ্য দিয়ে পূর্বপুরুষের জন্য ন্যায়-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আধা-সত্য, অসত্য, কাল্পনিক বা নির্বাচিত তথ্যের ভিত্তিতে যে আখ্যান হিন্দুত্ববাদীরা প্রায় একশো বছর ব্যাপী নির্মাণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে, শঙ্কাজনক ভাবে তা মান্যতা পাচ্ছে রাষ্ট্রীয় দরবারে, এমনকি আদালতের প্রাঙ্গণেও। এই সর্বগ্রাসী পরিবেশ জনতার কাছে এই বার্তাই পাঠাচ্ছে যে, বিচারবিভাগের কাছে আবেদনেও ‘বর্বর আক্রমণকারী’-র মতো ব্যবহার করা যাবে, এবং ১৯৪৭-এর ‘কাট অফ’ কালসীমাকে চ্যালেঞ্জ করে ১১৯২ সাল ধার্য করতে বলা যাবে। লক্ষণীয়, এমন সব আবেদন কিন্তু আবর্জনার স্তূপে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে না।

প্রশ্ন উঠছে না যে, অতীতের সংশোধন চেষ্টাই যদি হয়, কেন তা প্রাচীন ভারতের সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসের সময়কাল থেকে বিচার্য হবে না? সেই সময়েও তো লাগাতার মন্দির, উপাসনাগৃহ, বিগ্রহ ধ্বংস, লুটপাট চালানো হয়েছে। কেবল মুসলিম-মোগল যুগই বর্বরতার যুগ, তার আগে এমন কাজ হয়নি? সে কথা যে সঠিক নয়, তার স্পষ্ট ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে। দ্বিতীয়ত, বাবরি মসজিদ ধ্বংস আদালতের চূড়ান্ত রায়ে ‘ভ্যান্ডালিজ়ম’ বলে ধিক্কৃত হলেও, সেই ধ্বংসস্তূপের উপরই আক্রমণকারীরা মন্দির নির্মাণ করার অনুমতি পেয়েছে। ধ্বংসকার্যের জন্য কেউ সাজা পায়নি। নাগরিকের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে— অন্য সব লক্ষ্যবস্তু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলেও, পরে বকুনি বা ধমক খেতে হবে বড়জোর, কিন্তু ধ্বংসপ্রাপ্ত বস্তুটি আর কখনও ফিরবে না স্বস্থানে! জয় হবে উন্মত্ত তাণ্ডবের।

প্রসঙ্গত, জ্ঞানবাপী মসজিদ, বিশ্বেশ্বর মন্দির সংক্রান্ত আবেদনে শুধু স্যর যদুনাথকে স্মরণ করা হয়নি; জেমস প্রিন্সেপ-এর বেনারস ইলাস্ট্রেটেড ইন আ সিরিজ় অব ড্রয়িংস (কলকাতা) গ্রন্থটিও ব্যবহৃত হয়েছে, তাঁর আনুমানিক অঙ্কিত মন্দিরের ম্যাপকে প্রকৃত ম্যাপ বলে দাবি করা হয়েছে। অর্গানাইজ়ার ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সংখ্যায় একই কথার প্রতিধ্বনি হয়েছে। তাই শুধু ভক্তির প্রশ্ন নয়, ইতিহাসের বিতর্কিত ধারণা, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পর্যন্তও আইনি কাঠামোয় আজ পরীক্ষিত হওয়ার দিন। ভক্তির ঘর পোড়া তো ভারতের নাগরিক সমাজ— তাই আজ তাঁদের মধ্যে উদ্বেগ জাগা স্বাভাবিক।

বামপন্থী বা কংগ্রেসের উল্লেখ এই ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক। বরং প্রাসঙ্গিক, যদুনাথ-উত্তর বহু গবেষক— রিচার্ড ডেভিস, রিচার্ড এম ইটন, বি এন পান্ডে (এমনকি ১৯৭৭ সালে সংসদে তাঁর এই সম্বন্ধীয় ঐতিহাসিক বক্তৃতা), এবা কচ, ক্যাথারিন বি আশার এবং সাম্প্রতিকতম পর্বে মাধুরী দেশাই, ভেরা লাজারেত্তি প্রমুখ দেখিয়েছেন যে তথাকথিত হিন্দু পক্ষের দাবিগুলো, সেই সব আখ্যান, কতখানি অন্তঃসারশূন্য।

এটা জানি যে, এই মুহূর্তে ক্ষমতায় আসীন নয়া হিন্দুত্ববাদীদের কাছে এই সমস্ত যুক্তি অতি অপছন্দের, এই সব তথ্যেরও কোনও মূল্য নেই। তবু আশা করব যে, তথ্যভিত্তিক, যুক্তিভিত্তিক, মানবতা-ভিত্তিক পাল্টা আখ্যান মানুষ গ্রহণ করবেন। একমাত্র তা হলেই ভারতীয় সভ্যতা বাঁচতে পারবে।

সুজাত ভদ্র, কলকাতা-১০

লিফ্ট চাই

সাঁতরাগাছি রেলস্টেশনটিতে না আছে কোনও লিফ্ট, না আছে র‌্যাম্প। বয়স্ক মানুষদের পক্ষে অসহনীয়। সঙ্গে যদি ট্রলি থাকে, তা হলে তো কথাই নেই। সংশ্লিষ্ট দফতর উদ্যোগ করলে মানুষ উপকৃত হবেন।

অনিন্দিতা হাজরা, হাওড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sandeshkhali Incident sandeshkhali Shahjahan Sheikh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE