Advertisement
E-Paper

হিসেবটা বুঝিয়ে দেওয়ার দায় তো সত্যিই আছে

বিজেপির নির্বাচনী ঘোষণাপত্র বা ইস্তাহার নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে প্রায় গোটা বিরোধী শিবির। যদিও এ দৃশ্য বা এ পরিস্থিতি খুব নতুন নয়।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ০০:২২
বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমাণ দিক বিজেপি। না হলে নতুন ইস্তাহারের গুরুত্ব সত্যিই ফিকে হয়ে যাবে। ফাইল চিত্র।

বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমাণ দিক বিজেপি। না হলে নতুন ইস্তাহারের গুরুত্ব সত্যিই ফিকে হয়ে যাবে। ফাইল চিত্র।

দায়বদ্ধতার প্রমাণ মেলে জবাবদিহি করার সৎ সাহসে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকের কাছে দায়বদ্ধ থাকার কথা প্রত্যেক সরকারের। নাগরিককে কতখানি জবাবদিহি করতে প্রস্তুত সরকার, নাগরিকের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি নির্ভয়ে দাঁড়ানোর প্রবণতা কতটা রয়েছে শাসকের মধ্যে, তা দেখেই অতএব বোঝা যায়, সরকার নিজের দায়বদ্ধতাকে কতখানি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিচার করতে বসলে মনে হচ্ছে, দেশের শাসক দলের নির্বাচনী ঘোষণাপত্র হতাশ করছে।

বিজেপির নির্বাচনী ঘোষণাপত্র বা ইস্তাহার নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে প্রায় গোটা বিরোধী শিবির। যদিও এ দৃশ্য বা এ পরিস্থিতি খুব নতুন নয়। ইস্তাহার নিয়ে শাসক এবং বিরোধী বরাবরই পরস্পরের বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে অভ্যস্ত এ দেশে। কিন্তু আঙুল উঠলে শুধু পাল্টা আঙুল তোলাই যথেষ্ট নয় সব সময়। অভিযোগ খণ্ডন করে প্রতিপক্ষের আক্রমণের ধার নষ্ট করাটাও জরুরি হয়ে পড়ে অনেক ক্ষেত্রে। আর তেমনটা করার দায় সরকার তথা শাসকেরই বেশি থাকে, বিরোধীর ততটা নয়। বিজেপি-কে আজ সে কথা মনে রাখতেই হবে।

দেশের বর্তমান শাসক দল বিজেপি নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করেছে। প্রত্যাশিত ভাবেই সে ইস্তাহারে বিজেপি নেতৃত্ব ঘোষণা করেছেন, ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলে আগামী পাঁচ বছরে কোন কোন পরিকল্পনার রূপায়ণ ঘটাবেন। কিন্তু বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন তুলেছে, গত পাঁচ বছরে যা কিছু করার প্রতিশ্রুতি ছিল, সে সব কি আদৌ রূপায়িত হয়েছে? কতটা রূপায়িত হল, হিসেব দিক বিজেপি, এমন দাবিও তোলা হয়েছে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আরও পড়ুন: বিজেপির ইস্তাহার ‘এক বিচ্ছিন্ন মানুষের কণ্ঠস্বর’, মোদীকে কটাক্ষ রাহুলের

দেশে কর্মসংস্থান কতটা বাড়ল? কত যুবক-যুবতী গত পাঁচ বছরে কাজ পেলেন? কৃষকদের আয় কতটা বাড়ল? কৃষিতে বিনিয়োগ? তার কী হল? মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা গেল, নাকি দাম আগের চেয়েও বাড়ল? এমন একগুচ্ছ প্রশ্ন বিরোধী দলগুলো তুলে ধরেছে বিজেপির ইস্তাহার প্রকাশিত হতেই। ২০১৪ সালে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের হিসেব আগে দিক বিজেপি, তার পরে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য প্রতিশ্রুতি শোনানোর অধিকার জন্মাবে— বিরোধীদের বক্তব্য এই রকমই।

আরও পড়ুন: প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে? সত্যি বলেন মোদী? যাচাই করতে ‘জুমলা মিটার’ চালু করল তৃণমূল

কংগ্রেসের এই আক্রমণে বা তৃণমূলের চালু করা 'জুমলা মিটার' দেখে বিজেপি যে থমকে গিয়েছে, তা নয়। বিজেপি আপন গতিতেই চলছে। কিন্তু বিরোধীদের তোলা প্রশ্নগুলো তো শুধু বিরোধীদের প্রশ্ন নয়। এগুলো তো গোটা দেশেরই প্রশ্ন। বিজেপির নতুন প্রতিশ্রুতিমালায় বিশ্বাস রাখার আগে দেশবাসী তো অবশ্যই জানতে চাইবেন, পুরনো প্রতিশ্রুতিগুলো কতটা বাস্তব হয়ে উঠল?

ইস্তাহার নিয়ে প্রশ্ন তোলার কাজটা কিন্তু বিজেপি-ই শুরু করেছে এ বার। দেশের দরিদ্রতম অংশের জন্য বছরে ৭২ হাজার টাকা আয় সুনিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। তাতে বিজেপি কটাক্ষের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে অধিকাংশ সময়টা যে দলের হাতে থাকল দেশের শাসন ক্ষমতা, সেই দল এত দিন পরে এসে দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম আয় সুনিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে? এত বছরে কেন করতে পারেনি সে কাজ? এত বছরে যদি না পেরে থাকে কংগ্রেস, তা হলে এখন কংগ্রেসকে ভরসা করবেন দেশবাসী কেন? বিজেপির প্রশ্ন এ রকমই।

প্রশ্ন তোলা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু প্রশ্ন তুলতে গেলে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, দেশের বর্তমান শাসক দল হওয়ায় নানা প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায় বিজেপির-ই সবচেয়ে বেশি। অতএব প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ হয়েছে গত পাঁচ বছরে, তার হিসেব পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেশের সামনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে কোনও অনীহা দেখানো বিজেপির তরফে কাম্য নয়। হিসেবটা দিতে বরং দায়বদ্ধ বিজেপি।

দায়বদ্ধতার কথা ভুলে গেলে চলবে না। দায়বদ্ধতার কথা অন্য কেউ মনে করিয়ে দেওয়ার আগে স্বচালিত ভাবে যদি নিজের জবাবদিহিটা নিয়ে নাগরিকের মুখোমুখি দাঁড়াত দেশের শাসক দল, তা হলেই আদৰ্শ এক ছবি তৈরি হত বরং। তবে এখনও সময় আছে। বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমাণ দিক বিজেপি। না হলে নতুন ইস্তাহারের গুরুত্ব সত্যিই ফিকে হয়ে যাবে।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay BJP Manifesto BJP অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy