Advertisement
E-Paper

নজরে চিকিৎসা

যদি ধরা যায় যে, এই রোগীদের এখন জেলা হাসপাতালেই চিকিৎসা হইতেছে, এবং প্রত্যাশিত চিকিৎসা ও শুশ্রূষা মিলিতেছে, তবে এই পরিবর্তন স্বাগত।

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৮ ০০:২২

জেলার সরকারি হাসপাতাল হইতে রোগী ‘রেফার’ করিবার হার কমিয়াছে। যদি ধরা যায় যে, এই রোগীদের এখন জেলা হাসপাতালেই চিকিৎসা হইতেছে, এবং প্রত্যাশিত চিকিৎসা ও শুশ্রূষা মিলিতেছে, তবে এই পরিবর্তন স্বাগত। যে হাসপাতালে যে চিকিৎসার পরিকাঠামো থাকিবার কথা, সেই হাসপাতালে সেই চিকিৎসা কেন মিলিবে না, কেন রোগী অন্যত্র পাঠানো হইবে, সে প্রশ্ন নিয়মিত উঠিয়া থাকে। চিকিৎসকের পক্ষে নানা যুক্তি থাকিতে পারে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর অমূল্য সময় নষ্ট হয়, প্রাণসংশয় বাড়ে, সন্দেহ নাই। চিকিৎসা ব্যবস্থায় ইহার ফলে দুইটি সমস্যা দেখা যায়। এক, আত্মীয়েরা রোগীকে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে লইয়া যান। তাহার ফলে স্বভাবতই চিকিৎসার ব্যয় বহুগুণ বাড়িয়া যায়। দুই, রোগী সরাসরি শীর্ষ হাসপাতাল, অর্থাৎ মেডিক্যাল কলেজের দ্বারস্থ হন। সেখানে অকারণে রোগীর ভিড় বাড়ে, পরিষেবা ব্যাহত হয়। রাজ্যের নানা স্তরের হাসপাতাল হইতে কত রোগী ‘রেফার’ হইতেছে বা স্বয়ং ‘ডিসচার্জ’ লইতেছে, সে বিষয়ে সম্প্রতি নজরদারি বাড়াইয়াছে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতর। হয়তো তাহাতেই ফল মিলিয়াছে। ইহা আশ্চর্য নহে। প্রশাসনের শিথিলতার সুযোগ লইয়া দায় এড়াইবার অভ্যাসটি সরকারি কর্মীদের মজ্জাগত। রাজস্থানে পুলিশের উপর নজরদারির এক পরীক্ষামূলক প্রকল্পের ফলে থানায় অভিযোগ গ্রহণের হার বাড়িয়াছিল। অবশ্য ইহাও সম্ভব যে হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ও কর্মীর অভাবে রোগী অন্যত্র পাঠাইতে হয়। কিন্তু সে সকল অভাবের কথা স্বাস্থ্য দফতর জানে কি না, মিটাইতে তৎপর কি না, কেহ জানে না। আবার, ডাক্তারেরা যথাসময়ে উপস্থিত নাই, বেলা দুইটার পর কর্মী নাই, বিকল যন্ত্র সারানো হয় নাই, এমন সামান্য কারণেও প্রত্যাখ্যাত হইতেছে রোগী।

কিন্তু রেফার করা বন্ধ হইল কি না, ইহাই শেষ প্রশ্ন নহে। রোগী যথাসময়ে যথাযথ চিকিৎসা পাইল কি না, ইহাই প্রধান প্রশ্ন। ‘রেফার’ করা রোগী কমিলে তাহা এইটুকুই নির্দেশ করে যে, হাসপাতাল রোগীকে ভর্তি করিবার পর অন্যত্র পাঠায় নাই। কিন্তু রোগীকে আউটডোর হইতে মৌখিক নির্দেশে অন্যত্র পাঠানোর সম্ভাবনা রহিয়াছে। এবং, ভর্তি হইবার পর চিকিৎসা কেমন হইল, তাহা বুঝিবার কি প্রয়োজন নাই? দৈনিক কত রক্ত পরীক্ষা বা এক্স-রে হইতেছে, কত বিলম্বে তারিখ পাইয়াছে রোগী, কত ঔষধ হাসপাতাল হইতে মিলিয়াছে, এই সকল তথ্য রাখে নানা বিভাগ। সেগুলি নিয়মিত বিশ্লেষণ করিলেই কিন্তু ধরা পড়িবে, কোথায় কর্মী নাই, কোথায় তাঁহারা কর্মবিমুখ, কোন যন্ত্র অব্যবহৃত। রোগীর সন্তুষ্টির সমীক্ষাই যথেষ্ট নহে। স্বাস্থ্য দফতর সরকারি হাসপাতালের উপর নজরদারি বাড়াইয়া মান বা়ড়াইতে চাহে, ইহা উত্তম লক্ষণ। কিন্তু তাহাই যথেষ্ট নহে। রাজনৈতিক স্বজনপোষণ ও আমলাতান্ত্রিক গয়ংগচ্ছ মনোভাবের ফলে হাসপাতালগুলিতে এক প্রকার জাড্য আসিয়াছে। চিকিৎসক ও প্রশাসকরা সমাধানে আগ্রহী নহেন। কিসে কী হইবে, সেই আশঙ্কা বিবেকবান, পরিশ্রমী কর্মীদেরও অনুদ্যোগী করিয়া রাখিয়াছে। তাঁহাদের সক্রিয়, উদ্যমী করিতে হইবে। কেবল বাহির হইতে ব্যাখ্যা তলব করিয়া সংস্কার সম্ভব নহে।

treatment patient Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy