Advertisement
E-Paper

অপশাসনতন্ত্র

বৎসর শেষের মুহূর্তে কথাটির আলাদা তাৎপর্য আছে। বর্তমান সরকারের অসহিষ্ণুতা ও মুক্তচিন্তাবিরোধিতা লইয়া বহু কথা শোনা গিয়াছে। এই বার উল্লেখ্য, প্রথমত, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ মেরুদ্বয় যে ভাবে ‘কাজ’ করিয়াছেন, তাহা দলের স্বার্থে কাজ।

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩৫

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অনেক কাজ করিতে পারেন। কর্মঠ বলিয়া তাঁহার বিশেষ খ্যাতি। এই বার প্রশ্ন, তিনি কী করেন? প্রধানমন্ত্রী বিষয়ে এমন প্রশ্ন তুলিবার মধ্যে নিশ্চয় গভীর অসৌজন্য আছে, দেশের শীর্ষনেতার কত কাজেই না ব্যাপৃত থাকিবার কথা। তবুও প্রশ্নটি উঠিতেছে। উঠিতেছে এই জন্য যে, গত সাড়ে চার বৎসরে প্রধানমন্ত্রীর দেশ যে সময়টির মধ্য দিয়া গিয়াছে, তাহাকে অরাজকতার সময় বলিলে ভুল হয় না। অর্থনীতি সমাজ রাজনীতি, কোনও দিকেই প্রকৃত শাসনের কোনও চিহ্ন দেখা যায় নাই। শাসনের নামে যাহা কিছু ঘটিয়াছে, সেগুলি সবই অপশাসনের নামান্তর, সঙ্কট তাহাতে বাড়িয়াছে বই কমে নাই। অথচ এই প্রধানমন্ত্রীই যখন ভোটে বিরাট সংখ্যক আসন জিতিয়া শাসক দলের নেতা হিসাবে সংসদে প্রবেশ করিয়াছিলেন, বাণী শোনা গিয়াছিল, ‘সর্বাধিক শাসন, ন্যূনতম সরকার’ ইত্যাদি। এক বিমুদ্রাকরণ সংস্কারের দৃষ্টান্তই বলিয়া দিবে, উহা বাণী ছিল না, কথার কথা ছিল, কিংবা অমিত শাহের বিশ্লেষণমাফিক, ভোটের কথা ছিল। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী ও তাঁহার সরকার এই যাবৎ যাহাতে ব্যাপৃত ছিলেন, তাহা দল-কাজ, সরকারের করণীয় শাসনকাজ নহে।

বৎসর শেষের মুহূর্তে কথাটির আলাদা তাৎপর্য আছে। বর্তমান সরকারের অসহিষ্ণুতা ও মুক্তচিন্তাবিরোধিতা লইয়া বহু কথা শোনা গিয়াছে। এই বার উল্লেখ্য, প্রথমত, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ মেরুদ্বয় যে ভাবে ‘কাজ’ করিয়াছেন, তাহা দলের স্বার্থে কাজ। দ্বিতীয়ত, অসহিষ্ণুতা ও মুক্তচিন্তাবিরোধিতাকে ইঁহারা কেবল ধর্ম জাতি রাষ্ট্র ইত্যাদি ভাবনায় আনেন নাই, সমস্ত সরকারি কার্যপরিচালনার কেন্দ্রভূমিতে আনিয়াছেন। গোরক্ষা, আয়ুর্বেদে সরকারি অর্থব্যয় হইতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সঙ্কট— সবই ইহার দৃষ্টান্ত। কাশ্মীর ও পাকিস্তান বিষয়ে একের পর এক নীতি— স্বরাষ্ট্র বা বিদেশ ভাবনামাফিক না চলিয়া দল-রঞ্জনের পথে চলিয়াছে। ধারাবাহিক ভাবে এই সরকার সমস্যার গঠনমূলক সমাধানে মন না দিয়া প্রসাধনী সমাধান করিয়াছে, তাহাও আবার মুক্তবুদ্ধির বিরুদ্ধে গিয়া। মদ্যপানে দুর্ঘটনা বাড়িতেছে, তাই প্রহরার মান না বাড়াইয়া মদ্যপানের উপর কোপ পড়িয়াছে। কৃষিঋণ সমস্যা গভীর সঙ্কটে পরিণত হইয়াছে, তাই সঙ্কটের মূলে না গিয়া ন্যূনতম সহায়ক মূল্য অমিত শাহ ঘোষণা করিয়াছেন। বাস্তবিক, বৃহৎ পরিহাসটি অমিত শাহের মধ্যেই লুকাইয়া। কোন অধিকারবলে ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের পাশ কাটাইয়া এমন প্রতিশ্রুতি দলীয় নেতার মুখনিঃসৃত হয়, গ্রাম স্বরাজ অভিযানের মতো সরকারি প্রকল্প তিনিই প্রথম ঘোষণা করেন, কালো টাকার বিরুদ্ধে অভিযান তাঁহার মুখেই প্রথম শ্রুত হয়— এই সব প্রশ্ন উঠিবে বইকি। এই কয়েক বৎসর ভারত বিজেপির দলীয় শাসন দেখিয়াছে, সরকার দেখে নাই। এবং প্রধানমন্ত্রী যে হেতু সাংবাদিক বৈঠক করিবারও সময় পান নাই, সরকার ও জনসমাজের মধ্যে অনৈতিক দলীয় মধ্যস্থতার প্রশ্নটি উত্থিতও হয় নাই।

বৃহত্তম উদ্বেগ ইহাই। নির্বাচনে জিতিয়া আসিয়া ভাল ভাল প্রতিশ্রুতি ও কাজের বেলায় পৃষ্ঠপ্রদর্শন, ইহা মোদী সরকারের একার সমস্যা নহে, অন্যান্য সরকারও অল্পবিস্তর এই দোষে দোষী। তবে কাজের বেলায় গোটা দেশকে ভুলিয়া দলীয় স্বার্থের নির্লজ্জ তোষণ-পোষণ, মন্ত্রিসভা হইতে বিশ্ববিদ্যালয় সব রকম রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কোমর ভাঙিয়া দলতন্ত্রের দ্বারা গণতন্ত্রকে বিপন্ন করা, ইহাকে সাধারণ কর্মপদ্ধতি বলা চলে না। বাজপেয়ীর এনডিএ সরকারও এ হেন নিরবচ্ছিন্ন একনায়কতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদ চালায় নাই, সমাজের সহিত দলীয় মেরুটির এমন নিশ্ছিদ্র দূরত্ব রচনা করে নাই। বর্তমান সরকার পরবর্তী নির্বাচনে জিতিয়া আসুক বা না আসুক, এই পর্বের সর্বাপেক্ষা বিপজ্জনক বার্তাটি এখানেই নিহিত রহিল।

BJP Narendra Modi Amit Shah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy