Advertisement
E-Paper

কোনও প্রশ্ন নয়

ইহা নিছক কুযুক্তি। প্রথমত, কোনও সুস্থবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক সেনাবাহিনীর বিন্দুমাত্র অসম্মানের কথা ভাবেনও নাই, বাহিনীর সদিচ্ছা এবং আত্মত্যাগ লইয়া কোনও সংশয়ও প্রকাশ করেন নাই, বস্তুত রাজনীতিক এবং নাগরিকরা দলমতনির্বিশেষে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে ঐকমত্য জানায়াছেন।

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
—ছবি এপি।

—ছবি এপি।

কোনও কোনও মাস্টারমশাই বা দিদিমণিকে প্রশ্ন করিলেই তিনি চটিয়া যান। ছাত্রছাত্রীরা দ্রুত বুঝিয়া লয়, সদুত্তর জানা নাই বলিয়াই শিক্ষকের ওই রাগ। মোদী সরকারের নেতা ও নেত্রীদের রাগও কি অনুরূপ কারণেই? বায়ুসেনার বোমারু বিমান বালাকোটে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিতে হানা দিয়াছে, এই সংবাদ প্রচারিত হইবার পর হইতে স্বাভাবিক প্রশ্ন উঠিয়াছে: আক্রমণের ফল কী? কত সন্ত্রাসীর প্রাণহানি হইয়াছে? তাহাদের আনুষঙ্গিক ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কী? বিরোধী দল, সংবাদমাধ্যম তথা বৃহত্তর জনসমাজ হইতে এই প্রশ্ন যত উঠিতেছে, কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী ও শাসক দলের নেতারা ততই রাগিয়া যাইতেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উক্তি: এই বিষয়ে বিদেশ সচিব যাহা বলিয়াছেন (বিশেষ কিছু বলেন নাই) তাহাই যথেষ্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর শ্লেষ: বোমাবর্ষণের পরে কি অকুস্থলে নামিয়া লাশ গনিয়া আসিতে হইবে? বিদেশ দফতরের অমিতবাক প্রতিমন্ত্রী ও প্রাক্তন সেনাপতি আর এক পা আগাইয়া সংশয়ীদের বোমারু বিমানে বাঁধিয়া লইয়া যাইবার পরামর্শ দিয়াছেন। আর প্রধানমন্ত্রী? তিনি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ও ভাষায় প্রশ্নবাচীদের ‘পাকিস্তানের পোস্টার বয়’ বলিয়া গাল পাড়িয়াছেন। শাসকদের ‘যুক্তি’: এই সব প্রশ্নই জাতীয় নিরাপত্তার সহিত জড়িত, অতএব সরকার যাহা জানাইতেছে, তাহার অধিক জানিতে চাহিলে বা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের প্রকৃত সাফল্য লইয়া প্রশ্ন তুলিলে তাহা সেনাবাহিনীর অসম্মানসূচক, জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক, এমনকি দেশদ্রোহিতার শামিল।

ইহা নিছক কুযুক্তি। প্রথমত, কোনও সুস্থবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক সেনাবাহিনীর বিন্দুমাত্র অসম্মানের কথা ভাবেনও নাই, বাহিনীর সদিচ্ছা এবং আত্মত্যাগ লইয়া কোনও সংশয়ও প্রকাশ করেন নাই, বস্তুত রাজনীতিক এবং নাগরিকরা দলমতনির্বিশেষে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে ঐকমত্য জানায়াছেন। অভিযান সম্পর্কে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র যাহা বলিয়াছেন, সামরিক কর্তাদের দরবারে তাহার অধিক তথ্য সরবরাহের কোনও দাবি করা হয় নাই, করা চলেও না। তথ্য জানিবার দাবি পেশ করা হইয়াছে নির্বাচিত সরকারের নিকট। ইহা গণতন্ত্রের স্বাভাবিক দাবি। দ্বিতীয়ত, এই ধরনের বিষয়ে সরকার কতটা তথ্য জানাইবে, তাহা অবশ্যই সরকারের বিচার্য। এমন কোনও তথ্য নিশ্চয়ই জানানো হইবে না, যাহাতে নিরাপত্তার স্বার্থ তিলমাত্র বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সরকার যদি ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ’কে উত্তর না দিবার অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করিতে চাহে, তাহা কেবল অন্যায় নহে, গণতন্ত্রের পক্ষে হানিকর। প্রসঙ্গত, রাফাল যুদ্ধবিমানের দাম জানাইতেও সরকারের প্রবল আপত্তি— বিমানের দাম জানাজানি হইলে কেন যে নিরাপত্তা বিপন্ন হইবে, দেবা ন জানন্তি!

এই কারণেই সংশয় হয়— সদুত্তর নাই বলিয়াই কি মাস্টারমশাই ও দিদিমণিরা প্রশ্নের জবাবে তিরস্কার ও গালি বর্ষণ করিতেছেন? সংশয় গভীরতর, কারণ তাঁহাদের মুখেই আবার নিহত সন্ত্রাসবাদীর নানাবিধ সংখ্যা শোনা যাইতেছে। কেহ বলিতেছেন, বালাকোটে ২৫০ জঙ্গি নিহত, কেহ বলিতেছেন ৩০০, কেহ বা ৪০০’য় পৌঁছাইয়াছেন। গনতকারদের তালিকায় আছেন বিজেপি সভাপতিও। স্বাভাবিক জিজ্ঞাসা: তিনি বা তাঁহারা সংখ্যা জানিলেন কী ভাবে? আশঙ্কা হয়, সত্য যাহাই হউক, এই সব সংখ্যা কীর্তনের সহিত তাহার কোনও সম্পর্ক নাই, কীর্তনের প্রকৃত উদ্দেশ্য একটিই: ভোটের বাজারে বাহাদুরি দেখানো। এই আশঙ্কা যদি সত্য হয় তবে বুঝিতে হইবে, সেনাবাহিনীকে শাসকরা ভোটের রাজনীতিতে কাজে লাগাইতে চাহেন। তাঁহাদের আচরণে সেই বাসনার রকমারি লক্ষণ অবিরত প্রকট হইতেছে। সুস্থবুদ্ধি বলিবে, ইহাতেই সেনাবাহিনীর প্রকৃত অসম্মান। অবশ্য সুস্থবুদ্ধির কথা মানিতে হইবে, এমন মাথার দিব্য কে দিয়াছে?

Indian Air Strike Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy