E-Paper

টিকা-টিপ্পনী

অতিমারি আমাদের শুধু চিকিৎসা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেনি, দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দায়বদ্ধতার প্রয়োজনীতার বিষয়টিও লক্ষণীয় ভাবে তুলে ধরেছে।

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৪ ০৭:১১

—প্রতীকী ছবি।

অতিমারিকালে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস এবং তার বিভিন্ন উপপ্রজাতির হাত থেকে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে বিজ্ঞানীরা সময়ের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন। সেই সময় এই ভাইরাসের মারণক্ষমতা প্রশমিত করতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টিকে সে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি কোভিশিল্ড টিকার প্রস্তুতকারক ‘অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা’ ব্রিটেনে এক মামলার সূত্রে স্বীকার করে, কিছু ‘বিরল’ ক্ষেত্রে তাদের তৈরি প্রতিষেধকের কারণে হতে পারে ‘থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম’ (টিটিএস)। এই বিরল রোগে শরীরের নানা জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। কমে যেতে পারে প্লেটলেটস-এর সংখ্যা। সেখানকার আদালতে এ-হেন অভিযোগের সূত্রে প্রায় পঞ্চাশটি মামলা দায়ের হয়েছে। ভারতেও ছড়িয়েছে আশঙ্কা। এ দেশে কোভিশিল্ড প্রাপকদের বেশ কয়েক জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার অভিযোগে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে ইতিমধ্যেই আবেদন জমা পড়েছে। আবেদনকারীদের দাবি, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যাচাইয়ের জন্য গঠিত হোক বিশেষজ্ঞ প্যানেল। শুধু তা-ই নয়, টিকার কারণে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে বা যাঁরা শারীরিক ক্ষমতা হারিয়েছেন, তাঁদের দেওয়া হোক ক্ষতিপূরণ।

অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাবি অনুযায়ী, কোভিড টিকার উপকারিতাই বেশি। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও তা সামান্য এবং ক্ষণস্থায়ী। লক্ষণীয়, যে কোনও ওষুধেরই উপকারিতা এবং ঝুঁকি— দুই-ই থাকে। যদি তার উপকারিতা ঝুঁকির থেকে বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে ওষুধটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ‘ওরাল পোলিয়ো ভ্যাকসিন’ যার অন্যতম উদাহরণ। ভারত-সহ গোটা বিশ্ব থেকে পোলিয়ো নির্মূল করতে ব্যাপক ভাবে সফল এই ভ্যাকসিনে প্যারালিসিস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ২৭ লক্ষ মানুষের মধ্যে এক জনের তা হতে পারে। যে-হেতু ওই এক জনের ঝুঁকির সাপেক্ষে জনসাধারণের উপকারিতার ভাগটি এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি ছিল, তাই এর ব্যবহারে রাশ টানা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুরুতর হলেও, এশীয়দের মধ্যে তা বিরল। তা ছাড়া, এই ঝুঁকি টিকাকরণের প্রাথমিক কয়েক সপ্তাহেই সবচেয়ে বেশি থাকে বলে দাবি তাঁদের। মনে রাখতে হবে, জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আজও টিকাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, কোভিড-১৯ টিকাকরণ প্রকল্পের কারণেই ভারতের ৩৪ লক্ষ মৃত্যু ঠেকানো গিয়েছিল।

তবে এটাও সত্যি যে, অতিমারি আমাদের শুধু চিকিৎসা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেনি, দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দায়বদ্ধতার প্রয়োজনীতার বিষয়টিও লক্ষণীয় ভাবে তুলে ধরেছে। স্বাস্থ্য সঙ্কট মোকাবিলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার অতিমারির সময়ে টিকাকরণের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ করলেও, কেন্দ্রীয় সরকার, টিকা প্রস্ততকারক এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলিকে টিকাকরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে উপযুক্ত দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। এই টিকাকরণ প্রকল্প নিঃসন্দেহে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। সুতরাং, এর নির্ভরযোগ্যতার বিষয়ে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করা জরুরি। কারণ দায়বদ্ধতা এবং জনসুরক্ষা নিশ্চিত করাই এক প্রকৃত স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রয়োজনীয় মাপকাঠি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

COVID-19 COVID Vaccine

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy