E-Paper

কিসের পুরস্কার

ভারত ধারাবাহিক ভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রপুঞ্জ-নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী এবং জঙ্গি সংগঠনকে পাকিস্তানে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছে।

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৫ ০৬:০৬

ভাগ্যের পরিহাসই বটে। যে রাষ্ট্রটিকে ‘সন্ত্রাসবাদের আখড়া’ প্রমাণ করতে বিবিধ আন্তর্জাতিক মঞ্চে এত কাল প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে দিল্লি, সম্প্রতি সেই পাকিস্তানকেই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের তালিবান নিষেধাজ্ঞা কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হল। রাষ্ট্রপুঞ্জের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে একই সঙ্গে ১৫ সদস্যের আর একটি সন্ত্রাস-দমন কমিটিতেও সহ-সভাপতিত্ব করবে ইসলামাবাদ। গত এপ্রিলের পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং পাকিস্তানের সঙ্গে তৎপরবর্তী সামরিক সংঘাতের মাসাধিক পরেই ইসলামাবাদের এ-হেন ‘কূটনৈতিক পদোন্নতি’ স্বভাবতই উষ্মা বাড়িয়েছে দিল্লির। ভারত ধারাবাহিক ভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রপুঞ্জ-নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী এবং জঙ্গি সংগঠনকে পাকিস্তানে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছে। ২০১১ সালে কুখ্যাত আল-কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেনের পাকিস্তানি সামরিক ছাউনি থেকে ১.৫ কিলোমিটার দূরে অ্যাবটাবাদে লুকিয়ে থাকার ঘটনা এর অন্যতম উদাহরণ, যাঁকে ওই স্থানেই এক গুপ্ত অভিযানে খতম করে আমেরিকান সেনাবাহিনী। এমনকি, অর্থপাচার এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থের জোগান আটকানোর সংস্থা ফাইনানশিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর কালো তালিকাতেও বার কয়েক নথিভুক্ত হয়েছিল পড়শি রাষ্ট্রটি। তবে পাকিস্তানের সভাপতিত্বের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়মানুসারে হলেও, অনেকের মতে এই সুযোগ পাকিস্তানকে একটি বৈধ মঞ্চ দেবে তাদের বিরুদ্ধে ভারতের দীর্ঘ দিনের অভিযোগকে খাটো করে দেখানোর। ইসলামাবাদ চাইবে ভারতকেই সন্ত্রাসবাদের উৎস হিসেবে তুলে ধরতে, মূলত ডুরান্ড লাইনের সংঘাত এবং বালুচিস্তানের সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে। ২০২১ সাল থেকে, যখন বালুচ-বিদ্রোহ নতুন গতি লাভ করে, ইসলামাবাদ বার বার নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে অস্থিরতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। এমতাবস্থায়, সন্ত্রাস দমন কমিটি বালুচিস্তান বিষয়ে অতি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।

পাকিস্তানকে কৌশলগত ভাবে পর্যদুস্ত করতে না পারার সমস্যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দিল্লির সাম্প্রতিক দুর্বল অবস্থানের মধ্যেও নিহিত। আক্রমণাত্মক বক্তব্যের মাধ্যমে দেশের ভিতর পাকিস্তান-বিরোধী জনমত উস্কে দেওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরেও একটি জোরালো প্রতিক্রিয়া আশা করেছিল ভারত সরকার। গত মাসে বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে বহুদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সে কাজে প্রত্যাশিত সমর্থন মেলেনি। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও কৌশলগত উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও, পহেলগাম ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসূত্রের পর্যাপ্ত প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ভেস্তে গিয়েছে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান। লক্ষণীয়, বহু রাষ্ট্র সন্ত্রাসবাসী হামলার নিন্দা করলেও, কেউই পাকিস্তানকে সরাসরি ভর্ৎসনা করেনি বা এফএটিএফ-এর মতো ফোরামে পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করতে ভারতের আহ্বানকে সমর্থন করেনি। বরং চিনের সহায়তায় রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে নির্দিষ্ট অপরাধীদের উল্লেখ আটকে ভারতের দাবিকে দুর্বল করে দিয়েছে পাকিস্তান। বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আইএমএফ এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক থেকে পাকিস্তানের ঋণ পাওয়াও আটকাতে পারেনি দিল্লি। বহুপাক্ষিক মঞ্চে ‘প্রতিপক্ষ শক্তি’-র ক্রমবর্ধমান প্রভাব বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহে অক্ষমতাও এক রকমের পরাজয়। কৌশলগত পরাজয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pakistan Terrorism

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy