Advertisement
০২ মে ২০২৪
Jadavpur University

বন্ধ হোক যথেচ্ছাচার

স্বাধীনতার নামে যথেচ্ছাচারের অধিকার দিলে তার পরিণতি কী হতে পারে, বহু দিন ধরেই তার বহু নজির এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ও তার ছাত্রাবাসে মিলেছে, প্রতিকার হয়নি।

jadavpur university

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৩ ০৪:৪৫
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীর ভয়ঙ্কর মৃত্যুর পরে কয়েক দিন অতিক্রান্ত। শোক, ক্ষোভ, নিন্দা, প্রতিবাদ, অভিযোগ, দাবিদাওয়ার প্রবাহ এখনও প্রবল। স্বাভাবিক। কেবল শিক্ষাজগতে নয়, বৃহত্তর সমাজেও এই অবিশ্বাস্য ঘটনার তীব্র অভিঘাত পড়েছে, অগণন নাগরিক যন্ত্রণাদীর্ণ উদ্বেগের সঙ্গে আলোচনা করে চলেছেন, একটি বিশ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিসরে এমন পৈশাচিক পরিস্থিতি কী ভাবে তৈরি হল? এই প্রশ্নের উত্তরে বহু তথ্য এবং বহুতর তত্ত্ব জনারণ্যে আলোচিত হচ্ছে। পাশাপাশি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রমশ দানা বাঁধছে বিবিধ ক্ষুদ্রস্বার্থের তৎপরতা, বিশেষত রাজনৈতিক দখলদারির গূঢ় কলাকৌশল। এই মৃত্যু উপত্যকায় ক্ষমতার ফসল তোলার জন্য বোধ করি আরও বিস্তর প্রয়াস চলবে। কিন্তু যথার্থ কোনও পরিবর্তন ঘটবে কি, যাতে পরবর্তী কালে কেবল এই প্রতিষ্ঠানে নয়, যে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিপীড়নের এই পরিবেশ বন্ধ করা সম্ভব হবে?

এই প্রশ্নের সহজ উত্তর নেই, কিন্তু উত্তরের সন্ধান কোথায় শুরু করতে হবে তা নিয়ে কিছুমাত্র সংশয় নেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা দিয়েই শুরু করতে হবে যে-হেতু সমধিক বিপজ্জনক পরিস্থিতি অন্যত্র থাকলেও আপাতত অকুস্থল এটিই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কাল ধরেই প্রশাসন বিপর্যস্ত। ছাত্রাবাসে বহুকাল যাবৎ প্রশাসন বলে আসলে কিছুই ছিল না, সে কথা সর্বজনবিদিত। কিন্তু খাস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন ব্যবস্থাটিই ক্রমশ দুর্বল হতে হতে এখন কার্যত ‘নেই’ হয়ে গিয়েছে। যাদবপুরে যে এখন কোনও উপাচার্য নেই, সেটা এই সর্বব্যাপী অব্যবস্থারই প্রকাণ্ড প্রতীক। এই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদই ফাঁকা। যাঁরা প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন তাঁরাও দৃশ্যত উদাসীন, প্রায়শ পলাতক, হাজির থাকলেও দায়িত্ব নিতে অনাগ্রহী, হাত ধুয়ে ফেলতে ব্যগ্র। গত শুক্রবারের চূড়ান্ত রকমের অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও সেই ঔদাসীন্যের দৃশ্যই প্রকট হয়েছে। পরবর্তী অধ্যায়েও ছবিটা বদলায়নি— কমিটি বসানো এবং রিপোর্ট তৈরি করার গতানুগতিক প্রক্রিয়ার আড়ালে নিজেদের অপদার্থতাকে আড়াল করার পরিচিত লক্ষণগুলিই প্রশাসনের সর্বাঙ্গে ফুটে উঠছে। এই অবস্থার আমূল সংস্কার কেবল জরুরি নয়, অত্যাবশ্যক।

আমূল সংস্কারের প্রয়োজন পরিকাঠামোতেও। ছাত্রাবাসে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে ক্লোজ় সার্কিট ক্যামেরা বসানো দরকার, কিন্তু আবাসিক তথা শিক্ষার্থীদের একাংশের বাধায় ক্যামেরা বসানো যায়নি। তাদের যুক্তি: ছাত্রছাত্রীদের উপর নজরদারি করে তাদের জীবনযাপনের স্বাধীনতা খর্ব করা যাবে না। পরিচালকরা সেই বাধার সামনে নতজানু হয়েছেন। ছাত্রাবাসে প্রাক্তন ছাত্রদের অধিষ্ঠান ও কর্তৃত্ব কায়েম থেকেছে, প্রশাসন নিষ্ক্রিয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে সকলের অবাধ চলাচলের ‘স্বাধীনতা’ বজায় রাখার পরিণামে বিশৃঙ্খলা অব্যাহত, কর্তৃপক্ষ সর্বংসহ। স্বাধীনতার নামে যথেচ্ছাচারের অধিকার দিলে তার পরিণতি কী হতে পারে, বহু দিন ধরেই তার বহু নজির এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ও তার ছাত্রাবাসে মিলেছে, প্রতিকার হয়নি। এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পরেও হবে কি? ব্যক্তিগত জীবনের মর্যাদা বা মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই মহামান্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক মুক্ত পরিবেশও নিশ্চয়ই মূল্যবান। কিন্তু সেই স্বাধীনতা বজায় রাখার স্বার্থেই সুস্থ পরিবেশ অপরিহার্য। আর তাই প্রকাশ্য পরিসরে সিসিটিভি লাগানো যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত। মূল কথা, সকলের নিরাপত্তা ও সুস্থতা রক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক, শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রী, সমস্ত পক্ষের যৌথ দায়িত্ব। ঠিক যেমন, রাজ্য সরকার এবং রাজ্যপাল-আচার্যের দড়ি টানাটানি বন্ধ করার জন্য সম্মিলিত চাপ সৃষ্টি করাও তাঁদেরই দায়। এর পরেও ঔদাসীন্য, ক্ষুদ্রস্বার্থ এবং গোষ্ঠীতন্ত্রের গণ্ডি ভেঙে তাঁরা এই দায়িত্ব পালনে এগিয়ে না এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গভীরতর অন্ধকার অপেক্ষা করে আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur University Education Student Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE