E-Paper

জল-ঘণ্টা

সুস্থ থাকতে জল পানের প্রয়োজনীয়তা সর্বজনবিদিত। অথচ, অধিকাংশ মানুষই তা ‘ভুলে যান’। কারণ, সুস্থ থাকতে জল আবশ্যক হলেও, তার প্রয়োজনীয়তাটি তাৎক্ষণিক নয়।

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:০৬

—ফাইল চিত্র।

এসো হে বৈশাখ আবাহনের সপ্তাহ পার হয়নি, তীব্র দাবদাহে ঝলসে যাচ্ছে বঙ্গ। অ-ভূতপূর্ব উষ্ণতায় দ্রুত বেসামাল মানবশরীর। সুস্থ থাকতে তাই নিয়মিত ব্যবধানে পর্যাপ্ত জল পানের নিদান দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু নিদান দিলেই বা শুনছেন ক’জন? যত ক্ষণ না গলা শুকিয়ে কাঠ, তত ক্ষণ জলের গেলাস হাতে ওঠে না অধিকাংশ মানুষেরই। শিশুদের বিষয়টি আরও দুশ্চিন্তার। তারা চঞ্চল, তদুপরি স্বাস্থ্য বিষয়ে চরম অ-সচেতন। সেই কারণে সম্প্রতি একাধিক স্কুল শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় ‘ওয়াটার বেল’-এর ব্যবস্থা করেছে। পদ্ধতিটি অভিনব, কিন্তু কার্যকর। নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্বল্প ক্ষণের জন্য জল-ঘণ্টা বাজলে সকল পড়ুয়া শিক্ষকের সামনেই জল পান করবে। অভিজ্ঞতা বলে, বিদ্যালয়ে জলের ব্যবস্থা রাখা বা শিক্ষার্থীদের জল খাওয়ার মৌখিক নির্দেশ বিশেষ ফলদায়ক হয় না। সেই কারণেই ঘণ্টার ব্যবহার। যে ঘণ্টা পড়ুয়াকে মনে করায় পড়াশোনা থেকে কিছু ক্ষণের বিরতি নিয়ে খাওয়ার সময় হয়েছে, সেই ঘণ্টাই জলের কথাটিও তাদের মনে করিয়ে দেবে।

সুস্থ থাকতে জল পানের প্রয়োজনীয়তা সর্বজনবিদিত। অথচ, অধিকাংশ মানুষই তা ‘ভুলে যান’। কারণ, সুস্থ থাকতে জল আবশ্যক হলেও, তার প্রয়োজনীয়তাটি তাৎক্ষণিক নয়। যে প্রয়োজন তাৎক্ষণিক নয়, কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করলেও চলে, তাকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিস্মৃত হওয়াই সহজাত প্রবৃত্তি। এই প্রবৃত্তিকে পরিবর্তিত করতে হলে পারিপার্শ্বিকে কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন জরুরি। এখানেই আসে ‘নাজ’ বা মৃদু টোকার প্রসঙ্গ, যে প্রসঙ্গটি ২০০৮ সালে প্রকাশিত রিচার্ড থেলার এবং কাস সানস্টেন রচিত নাজ: ইমপ্রুভিং ডিসিশনস অ্যাবাউট হেলথ, ওয়েলথ, অ্যান্ড হ্যাপিনেস গ্রন্থের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়। থেলার এবং সানস্টেন ‘নাজ’-কে ব্যাখ্যা করেছিলেন সেই মৃদু টোকা হিসাবে, যা মানুষের আচরণের ক্ষেত্রে বিপুল প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। দৈনন্দিন জীবনে এই টোকাই মানুষকে উন্নততর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে ঠেলে দেয়। তাকে স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে শেখায়, আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে, পরিবেশকে উন্নততর করার পথে এগিয়ে দেয়। বিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে জল-ঘণ্টা সেই টোকার কাজটি করবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জল খাওয়ার কথাটি পৃথক ভাবে মনে রাখতে হবে না। ঘণ্টা বাজলে যান্ত্রিক ভাবেই তারা কাজটি সম্পন্ন করবে।

সরকারি এবং সরকার-পোষিত বিদ্যালয়ে ইতিমধ্যেই গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হয়েছে। কিন্তু শিশুদের নিয়ম করে জল পানের প্রয়োজনীয়তা ফুরোয়নি। সুতরাং, ব্যবস্থাটিকে স্থায়ী করার কথা ভাবাই যুক্তিযুক্ত। তবে শিক্ষার্থীদের জল খেতে উদ্বুদ্ধ করতে হলে শুধুমাত্র ঘণ্টার ব্যবহারই যথেষ্ট নয়। তার আনুষঙ্গিক পরিকাঠামোটিও মেরামত করা প্রয়োজন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা সমস্ত বিদ্যালয়ে আছে কি না, খোঁজ রাখা জরুরি। দেখা গিয়েছে, গ্রাম-মফস্‌সল তো বটেই, শহরাঞ্চলের অনেক বিদ্যালয়েও পরিচ্ছন্ন শৌচালয়ের ব্যবস্থা নেই। পরিচ্ছন্ন শৌচালয় না থাকা শিক্ষার্থীদের, বিশেষত মেয়েদের জল পানে অনীহার অন্যতম কারণ, যার ফলে তারা অল্প বয়সেই নানা জটিল রোগের শিকার হয়। এই ন্যূনতম ব্যবস্থাগুলির প্রয়োজন শুধুমাত্র গ্রীষ্মের কয়েক মাসের জন্য নয়, সারা বছরের। সরকারকে সেই টোকাটি দেবে কে?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

school Summer water

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy