Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Nirmala Sitharaman

ভয়ঙ্কর সত্য

কেউ বলতেই পারেন যে, অর্থমন্ত্রী মোট জিডিপির কথা বলেননি, বলেছেন তার বৃদ্ধির হারের কথা। সে ক্ষেত্রেও মাথাপিছু জিডিপির হিসাবটি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ আর্থিক বৃদ্ধি জনসংখ্যা-নিরপেক্ষ হতে পারে না।

Nirmala Sitharaman.

নির্মলা সীতারামন —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৪৫
Share: Save:

মিথ্যা ভয়ঙ্কর। তার চেয়েও ভয়ঙ্কর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ভুল পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবহৃত সত্য। ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় গত দশ বছরে নরেন্দ্র মোদী সরকারের কৃতিত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তেমনই একটি ‘ভয়ঙ্কর সত্য’ ব্যবহার করলেন। তিনি বললেন, ভারতীয় অর্থনীতিই দুনিয়ায় সেরা, কারণ তার বৃদ্ধির হার জাপান বা জার্মানির চেয়ে ঢের বেশি। কথাটি ‘সত্য’, কারণ প্রকৃত পক্ষেই ভারতীয় অর্থব্যবস্থার বৃদ্ধির হার এই দেশগুলির তুলনায় ঢের বেশি। কথাটি ‘ভয়ঙ্কর সত্য’, কারণ এই দেশগুলির অর্থব্যবস্থার সঙ্গে ভারতের আদৌ তুলনা চলে না। মোট জিডিপির হিসাবে ভারত এই দু’টি দেশের কাছাকাছি— ডলারের অঙ্কে জার্মানি, জাপান ও ভারতের জিডিপি যথাক্রমে ৪.৪৩, ৪.২৩ ও ৩.৭৩ লক্ষ কোটি। কিন্তু, ছবিটি পাল্টে যাবে মাথাপিছু গড় জিডিপির পরিসংখ্যান দেখলেই। আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের ২০২৩ সালের অনুমান অনুসারে জার্মানিতে মাথাপিছু গড় জিডিপি ৫২৮২৪ ডলার, এই নিরিখে বিশ্বে দেশটি ১৯তম স্থানে আছে; জাপানের মাথাপিছু গড় জিডিপি ৩৩৯৫০ ডলার, বিশ্বে ৩০তম। আর ভারতে মাথাপিছু গড় জিডিপি ২৬১২ ডলার, বিশ্বে ১৩৯তম স্থানে। অর্থমন্ত্রী এই কথাগুলি বিলক্ষণ জানেন, কিন্তু তাতে তাঁর এই অসম্ভব তুলনা করা আটকায়নি। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার যে মিথ্যাটি প্রচার করতে ব্যস্ত— জিডিপির অঙ্কে ভারত বিশ্বে পঞ্চম স্থানে পৌঁছে খেলা মাত করে দিয়েছে— অর্থমন্ত্রীর এই তুলনাটিও তারই অংশ। ভারতের জিডিপির স্ফীতি যে নেহাত জনবাহুল্যের কারণে, কেন্দ্রীয় সরকারের হাতযশে নয়, সে কথা স্পষ্ট ভাবে বলা প্রয়োজন।

কেউ বলতেই পারেন যে, অর্থমন্ত্রী মোট জিডিপির কথা বলেননি, বলেছেন তার বৃদ্ধির হারের কথা। সে ক্ষেত্রেও মাথাপিছু জিডিপির হিসাবটি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ আর্থিক বৃদ্ধি জনসংখ্যা-নিরপেক্ষ হতে পারে না। যদি মাথাপিছু জিডিপির হিসাব নেওয়া হয়, তা হলে জার্মানির জিডিপি ভারতের ২০ গুণের সামান্য বেশি। তাতে কী হয়, সেটা বোঝার জন্য একটি আক্ষরিক অর্থে স্কুলছাত্রসুলভ উদাহরণ ব্যবহার করা যাক। ধরা যাক, স্কুলে ষাণ্মাসিক পরীক্ষায় একই ক্লাসের দুই পড়ুয়ার মধ্যে এক জন পেয়েছে ৯০ শতাংশ নম্বর, আর অন্য জন ৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রথম জনের প্রাপ্ত নম্বর দ্বিতীয় জনের দ্বিগুণ— জার্মানি আর ভারতের মাথাপিছু জিডিপিতে যে ফারাক, এই ফারাক তার দশ ভাগের এক ভাগ। দু’জনই বার্ষিক পরীক্ষার জন্য প্রবল পরিশ্রম করল। কিন্তু দ্বিতীয় ছাত্রের পক্ষে দশ শতাংশ নম্বর বাড়ানো যতখানি সহজ, প্রথম জনের পক্ষে যে তা ততখানি নয়, স্কুলপড়ুয়ারাও তা বুঝবে। এবং, দ্বিতীয় জনের ১০ শতাংশ বৃদ্ধির পরে প্রাপ্ত নম্বর দাঁড়াবে ৪৯.৫%; প্রথম জনের যদি একটুও নম্বর না বাড়ে, তবুও তাদের ফারাক দুস্তর। দু’জনের মধ্যে তুলনা চলবে না। অর্থমন্ত্রী ঠিক এই তুলনাটিই করছেন। তিনি দ্বিতীয় ছাত্রটিকে প্রথম জনের চেয়ে বেশি সফল বলে দাবি করতে ব্যস্ত, কারণ তাঁদের দলের রাজনৈতিক ভাষ্য সেই নির্বোধ দাবিটিই করছে। কাণ্ডজ্ঞান অবশ্য বলে, এই সব অসম্ভব তুলনা বাদ দিয়ে বরং দ্বিতীয় ছেলেটিকে লেখাপড়ায় আরও মন দিতে বলা ভাল। তাকে বলা দরকার, ‘ভাল হয়েছে, আরও ভাল করতে হবে’। কিন্তু, সে কথা বললে যে ভোটের বাজার গরম হবে না। অতএব, অর্থমন্ত্রী চালের সঙ্গে চালতার তুলনা করতে ব্যস্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nirmala Sitharaman BJP Indian Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE