Advertisement
E-Paper

সতর্কতা চাই, আবার

সতর্কতার অর্থও এক জায়গাই দাঁড়াইয়া নাই। অতিমারির প্রথম পর্বে বিশ্বব্যাপী জনজীবন স্তব্ধ করিয়া সংক্রমণ রোধের চেষ্টা হইয়াছিল।

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২১ ০৫:৪৯
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

কোভিড-১৯ নামটিই আজ, ২০২১ সালের প্রায় সিকিভাগ অতিক্রান্ত হইবার পরে, জানাইয়া দেয় যে, এই অতিমারিও কালের নিয়মে ক্রমে পুরাতন হইতেছে। এক বছরে এই ভাইরাসের চরিত্র এবং আচরণ সম্পর্কে গ্রহবাসী অনেক কিছু জানিয়াছে। সেই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়া তাহার সহিত লড়াইয়ের উপায়গুলিতে বিবর্তন ঘটিয়াছে। চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের পাশাপাশি শুরু হইয়াছে প্রতিষেধক প্রয়োগের কর্মকাণ্ডও। প্রতিষেধকের সম্পর্কেও নূতন নূতন প্রশ্ন উঠিতেছে, নূতন সংশয় জাগিতেছে। আবার ভাইরাসের নিজস্ব বিবর্তনও থামিয়া নাই। সমস্ত প্রক্রিয়াটি চলমান, অনিশ্চিত, অনির্দিষ্ট। এই ধরনের অতিমারির ইতিহাস পর্যালোচনা করিলে একটি কথাই নিশ্চিত করিয়া বলা চলে— কোভিডের মোকাবিলা এখনও অনেক দিন জারি রাখিতে হইবে এবং সেই মোকাবিলার প্রথম ও প্রধান শর্ত: সতর্কতা। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করিবার জন্য সমস্ত ভাবে সতর্ক থাকাই এখন গোটা দুনিয়ার কাজ।


সতর্কতার অর্থও এক জায়গাই দাঁড়াইয়া নাই। অতিমারির প্রথম পর্বে বিশ্বব্যাপী জনজীবন স্তব্ধ করিয়া সংক্রমণ রোধের চেষ্টা হইয়াছিল। আজ সিংহাবলোকন করিলে মনে হইতেই পারে যে, সব কিছু বন্ধ করিবার প্রয়োজন ছিল না, বরং সুষ্ঠু পরিকল্পনার ভিত্তিতে মানুষের সামাজিক সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করিয়া এবং আরও অনেক বেশি সতর্ক ভাবে নিজেকে ও অন্যদের সংক্রমণ হইতে রক্ষা করিবার সুমন্ত্রণা ও সরঞ্জাম দিয়া এই লড়াই চালাইলে অর্থনীতির গতি এতটা ব্যাহত হইত না, অতিমারিও বশে থাকিত। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা হইতে এমন সিদ্ধান্তই অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু এই কথাও মানিতে হইবে যে, আজ যাহা স্পষ্ট মনে হইতেছে, এক বছর আগে তাহা আদৌ জানা ছিল না। এবং ইহাও লক্ষণীয় যে, আজও দুনিয়ার নানা প্রান্তে, ইটালি হইতে মহারাষ্ট্রে, সংক্রমণের প্রকোপ মাত্রা ছাড়াইবার উপক্রম হইলেই সেই ‘লকডাউন’-এর প্রস্তাবই শোনা যাইতেছে। স্পষ্টতই, অবাধ জনজীবনের নিশ্চয়তা এখনও অনেক দিনই এই গ্রহবাসীর নাগালের বাহিরেই থাকিবে। জীবনযাত্রায় নানাবিধ নিয়ন্ত্রণকেই আপাতত মানবসভ্যতার ‘স্বাভাবিক’ অবস্থা বলিয়া স্বীকার করিতে হইবে। নিয়ন্ত্রণের শৃঙ্খলাবোধই এখন সতর্কতার প্রকৃত অর্থ।


সেখানেই উদ্বেগ। ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে গত কয়েক সপ্তাহে সংক্রমণের হার নূতন করিয়া বাড়িতেছে। পশ্চিমবঙ্গও সেই তালিকায়। নির্বাচনী মরসুমে জনসমাগম এবং জনসংযোগের মাত্রা অনেক বাড়িয়া গিয়াছে, তাহার প্রভাবে সমস্যা দ্রুত জটিলতর হইতে পারে। সুতরাং, এই মুহূর্তে রাজ্যবাসীর, বিশেষত জনবহুল শহরের মানুষের নূতন করিয়া সতর্ক হওয়া আবশ্যক। বাহিরে সর্বদা মাস্ক পরা এবং তাহাকে যথাস্থানে রাখা, যথাসম্ভব শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং প্রয়োজনে হাত ও জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত করা— এই প্রাথমিক বিধিনিয়মগুলি এক বৎসর আগে যেমন প্রাসঙ্গিক ছিল, আজও তেমনই প্রাসঙ্গিক। নভেম্বর হইতে কয়েক মাস সংক্রমণে ভাটার টান আসিবার ফলে মানুষ এই সব নিয়ম অনুসরণের বিষয়ে অনেকটাই শিথিল হইয়া পড়িয়াছেন। নূতন বিপদসঙ্কেত যখন স্পষ্ট, তখন আর শিথিলতার সময় নাই। বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে সমস্বরে সতর্কবাণী ঘোষণা করিতেছেন। যথাসম্ভব সতর্ক হইয়া সংক্রমণ রোধ না করিতে পারিলে যদি আবার জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটে, তবে অর্থনীতির বিপর্যয় কোথায় পৌঁছাইবে এবং তাহার কী মাসুল গনিতে হইবে, সেই হিসাব নাই। পশ্চিমবঙ্গের সমাজে স্বাভাবিক নিয়ম মানিবার স্বাভাবিক প্রবণতা জোরদার নহে। তদুপরি ভোটের হাওয়ায় সমস্ত শৃঙ্খলাবোধ বেসামাল হইয়া যায়, প্রশাসনের কর্তা ও কর্মীরাও আপন আপন ভোটভাবনায় তাড়িত। ভাইরাসের কিন্তু ভোট নাই।

Corona Corona virus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy