E-Paper

নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোগগুলি শুধুমাত্র বাজারের চাহিদা-জোগানের নিয়মে পরিচালিত হবে, তেমন পরিস্থিতিও অবশ্য কাম্য নয়।

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৩ ০৫:১৪
Rajasthan Assembly.

রাজস্থান বিধানসভা। ছবি: সংগৃহীত।

দিনকয়েক আগে রাজস্থান বিধানসভায় পাশ হল স্বাস্থ্যের অধিকার বিল। একে বিচ্ছিন্ন একটি আইন হিসাবে না দেখে ইউপিএ জমানায় বিবিধ অধিকারবাচক আইনের ধারাবাহিকতা হিসাবে দেখাই বিধেয়। স্বাস্থ্যকে সংবিধানের ২১ ধারায় বর্ণিত জীবনের অধিকার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার কোনও উপায় নেই, কারণও নেই— এবং, দেশের প্রতিটি নাগরিক যাতে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারেন, প্রয়োজনে চিকিৎসা পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও রাষ্ট্রের। কিন্তু, তার জন্য আরও একটি আইনের প্রয়োজন ছিল কি? অনুমান করা চলে যে, বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সরকারের কথা মানতে বাধ্য করার পদ্ধতি হিসাবেই এই আইনের মূল মাহাত্ম্য। স্বাস্থ্যক্ষেত্রের চরিত্রগত অতিক্রিয়ার কথা মাথায় রাখলে স্বীকার করতেই হয় যে, এই ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থার উপরে কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু, নাগরিকের ‘স্বাস্থ্যের অধিকার’ রক্ষার জন্য তা জরুরিও নয়, যথেষ্টও নয়। বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি, যাঁরা বাজার প্রক্রিয়ার বাইরে থাকছেন তাঁদের কথা ভাবা। তার জন্য প্রয়োজন সরকারি হাসপাতালগুলির স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যয়বৃদ্ধি, পরিকাঠামোগত উন্নতি, জনস্বাস্থ্যকে তার প্রাপ্য গুরুত্ব দেওয়া ইত্যাদি। এর কোনওটি করতেই এমন কোনও বাধা কখনও ছিল না যা দূর করার জন্য একটি নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। আশঙ্কা হয়, ঢাক পিটিয়ে নতুন আইন ঘোষণার দু’টি উদ্দেশ্য— এক, জনগণের প্রতি চিন্তার দৃষ্টান্ত নির্মাণ করা; এবং দুই, যে দায়িত্ব স্বভাবতই সরকারের, তাকে বেসরকারি ক্ষেত্রের ঘাড়ে চালান করা।

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোগগুলি শুধুমাত্র বাজারের চাহিদা-জোগানের নিয়মে পরিচালিত হবে, তেমন পরিস্থিতিও অবশ্য কাম্য নয়। কারণ, এ ক্ষেত্রে পরিষেবাটির সামাজিক গুরুত্ব বিপুল, তার ইতিবাচক অতিক্রিয়াও প্রবল। সে ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের ধরনটি কী হবে, সেটিই আসল প্রশ্ন। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে কিছু বিষয়ে আলোচনায় বসার কথা বলেছে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এই রাজ্যের পরিচালকদের খুঁটিনাটিতে হারিয়ে যাওয়ার, ‘মাইক্রোম্যানেজ’ করার প্রবণতা মারাত্মক। সরকারের প্রস্তাবিত আলোচ্য-তালিকাতেও তার নিদর্শন রয়েছে। তবুও, সেই আলোচনার প্রক্রিয়া থেকে বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থার উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির একটি গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশ মিলতে পারে। সরকার জানিয়েছে যে, বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে কোনও ‘হিডন কস্ট’ বা ‘গোপন ব্যয়’ রাখা চলবে না; শয্যার ভাড়া হিসাব করার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হবে; ডাক্তাররা দিনে এক বারের বেশি ভিজ়িট নিতে পারবেন না ইত্যাদি। অর্থাৎ, কী ভাবে হাসপাতাল পরিচালিত হবে, সে নিয়ম নয়— সরকারের মূল নজর রোগীর স্বার্থরক্ষার দিকে। এখান থেকেই উঠে আসতে পারে বেসরকারি হাসপাতাল ও সরকারের সম্পর্কের সূত্রটি— সরকার দেখবে, স্বাস্থ্যক্ষেত্রের বাজারপ্রক্রিয়ায় যেন রোগীর স্বার্থ লঙ্ঘিত না হয়।

এ দেশে রাজনীতি একবগ্গা নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবে, নয়তো বিশ্বাস করে সাঙাততন্ত্রের অনৈতিকতায়। দু’টি পথই অকুশলী, উৎপাদনশীলতার পরিপন্থী। প্রকৃত বাজারব্যবস্থায় সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ— তার কাজ সেই বাজারের নিয়মগুলি বেঁধে দেওয়া, এবং প্রত্যেকেই যাতে সেই নিয়মের গণ্ডি মেনে চলে, তা নিশ্চিত করা। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এই ভূমিকার তাৎপর্য বাড়িয়ে বলা অসম্ভব। বাজারের স্বাভাবিক ধর্ম হল, ক্রেতা বিনা বাধায় এক বিক্রেতা থেকে অন্য বিক্রেতার কাছে যেতে পারবেন। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সে কাজটি কার্যত অসম্ভব— কোনও হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করা হলে তার পর অন্যত্র যাওয়া অতি সমস্যার। ফলে, রোগীর স্বার্থরক্ষার কাজটি এ ক্ষেত্রে আরও জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। তবে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার যদি শুধু আলোচনায় আটকে না থেকে কাজের কাজটিও করে, তা হলেই রোগীর মঙ্গল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Health Rajasthan

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy