Advertisement
E-Paper

পুরস্কারের ঋতু

কণারাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ তত্ত্ব স্ট্যান্ডার্ড মডেলের মুন্ডু হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে হিগস বোসনকে। হিগস বোসন বিনে স্ট্যান্ডার্ড মডেল অকেজো।

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৫১
হিগস বোসন কণা।

হিগস বোসন কণা।

হিগস বোসন কণা, যা অন্য কণাকে ভর জোগায়, তা আবিষ্কারের এক বছরের মাথায় দেওয়া হয় নোবেল প্রাইজ়। এই ব্রহ্মাণ্ডে কত জিনিস— অণু-পরমাণু থেকে কত শশী-ভানু। এত সব ঠিকঠাক আছে, বস্তুর ভর আছে বলে। তাই তারা আলোর কণা ফোটনের (যার ভর নেই) মতো দিগ্বিদিকে সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার বেগে ছুটে বেড়াচ্ছে না। হিগস বোসন যদি অন্য কণাকে ভর না জোগাত, তা হলে এই ব্রহ্মাণ্ড হয়ে যেত লন্ডভন্ড। এ কারণে কণারাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ তত্ত্ব স্ট্যান্ডার্ড মডেলের মুন্ডু হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে হিগস বোসনকে। মুন্ডু ছাড়া যেমন ধড় অচল, তেমনই হিগস বোসন বিনে স্ট্যান্ডার্ড মডেল অকেজো।

স্যর পিটার কি ভেবেছিলেন, তিনি নোবেল প্রাইজ় পাচ্ছেনই? সম্প্রতি প্রকাশিত হল স্যর পিটারের জীবনী— ইলিউসিভ: হাউ পিটার হিগস সলভড দ্য মিস্ট্রি অব মাস। মুখ্য নামটি লক্ষণীয়। প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল চেষ্টার পর হিগস বোসন শনাক্ত হয়। অর্থাৎ, হিগস বোসন এত কাল ধরে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছিল। লুকোচুরি খেলেন স্যর পিটারও। ইলিউসিভ-এর লেখক ফ্র্যাঙ্ক ক্লোজ় লিখেছেন, যে দিন নোবেল পুরস্কার ঘোষিত হয়, সে দিন কাউকে না জানিয়ে স্যর পিটার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান, যাতে সাংবাদিকরা তাঁকে বিরক্ত করতে না পারে। তিনি আত্মগোপন করার ফলে নোবেল পুরস্কারের খবর প্রকাশিত হয় এক জন প্রাপকের মন্তব্য ব্যতিরেকে!

১৯৬৪ সালে ফরাসি দার্শনিক জাঁ-পল সার্ত্র সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেন। তাঁর মতো উদাহরণ অবশ্য বেশি নেই। চন্দ্রশেখর বেঙ্কট রামন শিল্পপতি ঘনশ্যাম দাস বিড়লাকে চিঠি লেখেন তাঁকে বিদেশ থেকে একটি স্পেকট্রোগ্রাফ যন্ত্র কিনে এনে দেওয়ার জন্য, যাতে তিনি নোবেল প্রাইজ় পেতে পারেন। ১৯৮৫ সালে নোবেল পুরস্কার পান কারলো রুবিয়া এবং সাইমন ভ্যান ডার মিয়ার। বিজ্ঞান লেখক গ্যারি টাউবস তাঁর নোবেল ড্রিমস: পাওয়ার, ডিসিট অ্যান্ড দ্য আলটিমেট এক্সপেরিমেন্ট বইতে দেখিয়েছেন, কী ভাবে বিজ্ঞানী রুবিয়া নোবেল প্রাইজ় পাওয়ার আশায় সমগ্র এক্সপেরিমেন্টকে চালিত করেছিলেন। প্রাণের মূলে অণু ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ)-এর আকৃতি আবিষ্কারের জন্য ফ্রান্সিস ক্রিক নোবেল পুরস্কার পান। তার পর তিনি কানশাসনেস বা চেতনা গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। নোবেল পাওয়ার পর চেতনা গবেষণায় এত ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, তিনি খ্যাতির বিড়ম্বনা এড়ানোর এক বিচিত্র পন্থা উদ্ভাবন করেন। ক্রিকের কাছে একটা ছাপানো কার্ড থাকত। তাতে ১২টা অনুরোধ থাকত। আর লেখা থাকত, আপনার অনুরোধ রাখতে না পারার জন্য ড. ক্রিক দুঃখিত। অনুরোধের তালিকার মধ্যে ছিল, বক্তৃতা দেওয়া/ সংবর্ধনায় যোগ দেওয়া/ ডিনারে নেমন্তন্ন/ কনভোকেশনে যোগ দেওয়া ইত্যাদি। ক্রিক জানতেন, ওই সব অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সে আমন্ত্রণ থেকে অব্যাহতি পেতে ক্রিক প্রয়োজনমাফিক টিক দিয়ে ওই ছাপানো কার্ড উদ্যোক্তাদের পাঠাতেন। বিচিত্র পন্থায় খ্যাতির বিড়ম্বনা এড়ানো! আর একটি নোবেল ঋতু সমাসন্ন। খ্যাতির বিড়ম্বনা এড়াতে ভবিষ্যতের নোবেল বিজেতারা ক্রিকের পদ্ধতি অনুসরণ করবেন কি?

Higgs Boson Science
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy