E-Paper

সংখ্যার আড়ালে

বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব এবং ছাত্রীদের বিয়ের মতো বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে। উত্তরবঙ্গেও কয়েক বছরে অতিমারিজনিত কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে দারিদ্র।

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৩ ০৯:৩৩
A Photograph of school students

উত্তরবঙ্গে স্নাতক স্তরের আগে পড়া ছেড়ে দেওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। ফাইল ছবি।

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেই কি সার্বিক ভাবে শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটে? পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের তরফ থেকে হামেশাই শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্য তুলে ধরতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাবৃদ্ধির খতিয়ান পেশ করা হয়। কিন্তু সেই সংখ্যাবৃদ্ধির আলোয় কি ঢাকা পড়ে প্রদীপের নীচের গহন অন্ধকার? সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভার উচ্চশিক্ষা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি-র রিপোর্টে ধরা পড়েছে, উত্তরবঙ্গে স্নাতক স্তরের আগে পড়া ছেড়ে দেওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। কলেজছুটের এই প্রবণতা আগে ছিল না, তা বলা না গেলেও সাম্প্রতিক কালের এই সংখ্যাবৃদ্ধি বিশেষ ভাবে চোখে পড়ার মতো।

এই সমস্যার কারণ হিসাবে রিপোর্টে দারিদ্র, বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব এবং ছাত্রীদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার মতো বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে। নিঃসন্দেহে, গোটা রাজ্যের মতোই উত্তরবঙ্গেও বিগত কয়েক বছরে অতিমারিজনিত কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে দারিদ্র। অনেক পরিবারে আয়ের পথটি সঙ্কীর্ণ হয়ে আসায় পড়ুয়াদের উপার্জনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে, মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হয়েছে পরিবার। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রেও অন্যথা ঘটেনি। এবং রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলের মতো সরকার এখানেও সমস্যাগুলির প্রতিরোধে যথেষ্ট উদ্যোগী হয়নি। অথচ আর্থ-সামাজিক কারণ যদি উচ্চশিক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তবে তা রাজ্য সরকারেরই মাথাব্যথার কারণ হওয়া উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাবৃদ্ধির গৌরব প্রচার কিংবা সাফল্যের ঢাক পেটানোর আগে এই কথাটি মনে রাখা প্রয়োজন। বিশেষত ভাবা প্রয়োজন, কোনও বিশেষ অপ্রতুলতা কোনও বিশেষ সমস্যা তৈরি করছে কি না। যেমন, উত্তরবঙ্গের কিছু জেলায় দূরত্বের কারণে শিক্ষার্থীদের একাংশ মাঝপথে পড়া থামিয়ে দিচ্ছে, এমনই আভাস। সে ক্ষেত্রে সরকারের কর্তব্য ছিল, প্রত্যন্ত অঞ্চল, এবং আর্থিক ভাবে দুর্বল পরিবারগুলির কথা মাথায় রেখে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের বিশেষ ব্যবস্থা করা, যাতে শিক্ষার্থীকে বাধ্য হয়ে পড়া ছাড়তে না হয়। তেমন প্রচেষ্টা যে দেখা যায়নি, তথ্যেই তার প্রমাণ।

রিপোর্টে প্রশ্ন তোলা হয়েছে পরিকাঠামোগত দুর্বলতা নিয়েও। এই চিত্র যদিও কেবল উত্তরবঙ্গের নয়, সমগ্র রাজ্যের— তবে সংশয় হয়, রাজ্যের কোনও কোনও প্রান্তে এই দুর্বলতা অতীব প্রকট। শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর অভাবটি ভয়ানক আকার ধারণ করেছে, ব্যাহত হচ্ছে পঠনপাঠন। উপযুক্ত গবেষণাগারের অভাবে বিজ্ঞান পড়ানো বন্ধ বহু জায়গায়। নেই ভাল মানের লাইব্রেরিও। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে না, যাতে তারা উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যেতে পারে। কলেজছুট ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় এই আগ্রহের অভাব কি কেবল সময়ের দোষ, পরিবারের সমস্যা, না কি সার্বিক পরিকাঠামো ও শিক্ষা-পরিবেশের করুণ দশার প্রতিফলন? সরকারকেই তার তদন্ত করতে হবে, সিদ্ধান্তে আসতে হবে, এবং পদক্ষেপ করতে হবে। দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণ কী ভাবে বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষাক্ষেত্রকে পঙ্গু করেছে, তা এখন গোটা রাজ্যে প্রতি দিনের চর্চার বিষয়। এর নিরাময় চাই। যেখানে অভাব প্রকট ও প্রবল, সেই সব অঞ্চলকে সংস্কারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া চাই। নতুবা ক্ষোভ-বিক্ষোভ বেড়েই চলবে— উত্তরবঙ্গের বাস্তবই তার প্রমাণ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

School students Girl education

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy