E-Paper

চাই দূর দৃষ্টি

ট্রাম্পের প্রাত্যহিক বিবৃতিকে খানিক উপেক্ষা করেই চলা ভাল দিল্লির পক্ষে। ওয়াশিংটনকে এই বার্তা দেওয়া প্রয়োজন যে, তারা ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র হলেও, তারাই একমাত্র নয়।

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৫ ০৫:৩৩

ভূরাজনীতিতে সামান্য কিছু কথা বা কাজই মুহূর্তে পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারে। বিল ক্লিন্টনের সময় থেকে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের যে সম্পর্ক তিলে তিলে গড়ে উঠেছিল, পাকিস্তান ও কাশ্মীর নিয়ে তাঁর ‘বাক্যবাণ’-এর মাধ্যমে এ ক’দিনেই সেই দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সখ্য দুর্বল করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সংঘর্ষবিরতি বিষয়ক ট্রাম্পের আত্ম-অভিনন্দনমূলক মন্তব্য কেবল দিল্লির অস্বস্তি বাড়ায়নি, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকার প্রতিশ্রুতির বিশ্বাসযোগ্যতার উপরেও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, অযাচিত মধ্যস্থতাকারী ভূমিকার মাধ্যমে পাকিস্তানের উপরে কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির বদলে পড়শি রাষ্ট্রটিকে আমেরিকা স্বস্তি দিয়েছে— আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারের পাকিস্তানের জন্য ২৪০ কোটি আমেরিকান ডলার বরাদ্দ হয়েছে। কেউ মনে করতেই পারেন, এই পদক্ষেপের মধ্যে নিহিত এক বিপজ্জনক বার্তা— যত ক্ষণ আমেরিকার ঘনিষ্ঠতম মিত্র রাষ্ট্র (যেমন ইজ়রায়েল) জঙ্গিদের দ্বারা আক্রান্ত না হচ্ছে, তত ক্ষণ সন্ত্রাসবাদে গুরুত্ব দিতে আজকের ওয়াশিংটন অনিচ্ছুক। ভারতের সীমান্তবর্তী সন্ত্রাস বিষয়ে কার্যত নীরব থেকে তিনি এখন কাশ্মীর সমস্যায় মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং এমন একটি আখ্যান তুলে ধরেছেন যা পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদের মূল বিষয়টিকেই খাটো করে দেখায়। তা ছাড়া ভারতে আমেরিকার বাণিজ্য সংস্থাগুলির বিনিয়োগে তাঁর বিরোধিতা, কোয়াড গোষ্ঠীর চিন থেকে উৎপাদন সরিয়ে স্থিতিশীল ও বৈচিত্রময় সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরির লক্ষ্যের পরিপন্থী। স্বভাবতই দিল্লির অলিন্দে জোরদার প্রশ্ন— দক্ষিণ এশিয়ায় ট্রাম্প সরকারের কূটনৈতিক অভিপ্রায়টি ঠিক কী?

ভুললে চলবে না, ট্রাম্প প্রথম নন, এর আগেও আমেরিকার নেতৃত্ব প্রসূত বহু সঙ্কট মোকাবিলা করেছে দিল্লি। নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন ক্লিন্টন প্রশাসনও কাশ্মীর প্রসঙ্গকে যে ভাবে দেখেছিল তাতে ভারতের লাভের চেয়ে ক্ষতির পাল্লা ছিল ভারী। এমতাবস্থায়, ট্রাম্পের প্রাত্যহিক বিবৃতিকে খানিক উপেক্ষা করেই চলা ভাল দিল্লির পক্ষে। ওয়াশিংটনকে এই বার্তা দেওয়া প্রয়োজন যে, তারা ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র হলেও, তারাই একমাত্র নয়। সাম্প্রতিক কালে ইউরোপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে। বস্তুত, পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে ফ্রান্স, গ্রিস এবং ডেনমার্কের মতো বেশ কিছু ইউরোপীয় রাষ্ট্র ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। অন্য দিকে, এও ঠিক যে আমেরিকার উপর ট্রাম্পের কর্তৃত্ব বর্তমানে যথেষ্ট জোরদার হলেও তিনি সমগ্র আমেরিকার প্রতিচ্ছবি নন। আমেরিকার প্রশাসনে আরও অন্যান্য শক্তিশালী কেন্দ্রও রয়েছে— এই মুহূর্তে বিদেশি ছাত্রছাত্রীর পড়ার সুযোগ বিষয়ে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির উপর হোয়াইট হাউসের নির্দেশের বিরুদ্ধে গোটা দেশে অশান্তি ঘনিয়েছে, ফেডারাল কোর্ট এই নীতিতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। বস্তুত সে দেশের নীতি নির্ধারণে এক বড় ভূমিকা রয়েছে আমেরিকার বাণিজ্যমহলের। ভারত যদি নিজ স্বার্থ রক্ষার্থেই সে দেশের বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ায়, তা হলে দীর্ঘমেয়াদে তো বটেই, হয়তো স্বল্পমেয়াদেও দিল্লি লাভের মুখ দেখতে পারে। বস্তুত ট্রাম্প এক দিক দিয়ে ভারতের উপকারই করেছেন। এক চিরসত্য তিনি পুনরুন্মোচিত করে দিয়েছেন— মোদী ভারতের পররাষ্ট্রনীতি স্বার্থ দ্বারাই সংজ্ঞায়িত হওয়া উচিত, ‘বন্ধুত্বের মোহ’ দ্বারা নয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump Narendra Modi Operation Sindoor

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy