E-Paper

দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি

২০১৯-২০ অর্থবর্ষে জিডিপি-র বৃদ্ধির হার এসে ঠেকেছিল ৩.৯ শতাংশে। অতিমারি শুরু হয় ২০২০-র মার্চের শেষ সপ্তাহে। কাজেই, তার আগের পতনের দায়টি সম্পূর্ণতই কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে বর্তায়।

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৫ ০৫:২৪
Share
Save

শেষ ত্রৈমাসিকে প্রত্যাশা ছাপিয়ে বৃদ্ধি ঘটল ভারতীয় অর্থব্যবস্থার। তার জোরেই ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে বার্ষিক বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে সাড়ে ছয় শতাংশে। সুসংবাদ, সে কথা অবশ্য বলা মুশকিল। কারণ, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের চারটি ত্রৈমাসিকের নিরিখে চতুর্থটির অবস্থা ভাল বটে, কিন্তু বার্ষিক বৃদ্ধির হার হিসাব করলে এই অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার বিগত তিন বছরের তুলনায় কম। নরেন্দ্র মোদী সরকারের গত এগারো বছরের হিসাব দেখলে একটি প্রবণতা লক্ষ করা যাবে। মূল্যস্ফীতির পরিমাণ বাদ দিয়ে জিডিপি-র প্রকৃত বৃদ্ধির হার সরকারের প্রথম তিনটি বছর, অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অবধি, ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তার পর আরম্ভ হল ধারাবাহিক পতন। অতলে ঠেকল অতিমারির বছরে। তার পরের বছর বৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী হল। তার পরের তিন বছরে যথাক্রমে পতন, উত্থান এবং বড়সড় পতন। সময়রেখাটির সঙ্গে বিভিন্ন অর্থনৈতিক বাস্তবকে মিলিয়ে দেখা যায়। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার উপরে এক চূড়ান্ত অপ্রত্যাশিত আঘাত হেনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী— ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর ঘোষিত নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রকে সম্পূর্ণ ধরাশায়ী করেছিল; বিধ্বস্ত হয়েছিল সংগঠিত ক্ষেত্রও। সেই ধাক্কার প্রভাব কাটিয়ে ওঠার সুযোগ না দিয়েই ২০১৭ সালের ১ জুলাই চালু হল জিএসটি। ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষ অবধি বৃদ্ধির হারের ধারাবাহিক পতনের পিছনে দায়ী এই দু’টি ঘটনা— এবং, ঘটনা দু’টির দায়িত্ব সম্পূর্ণত কেন্দ্রীয় সরকারের। বস্তুত, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে জিডিপি-র বৃদ্ধির হার এসে ঠেকেছিল ৩.৯ শতাংশে। অতিমারি শুরু হয় ২০২০-র মার্চের শেষ সপ্তাহে। কাজেই, তার আগের পতনের দায়টি সম্পূর্ণতই কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে বর্তায়।

তার পরে অতিমারির ধাক্কায় টালমাটাল হল বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থা। জিডিপি সবচেয়ে বেশি সঙ্কুচিত হল ভারতেই। তার কারণ, অতিমারির আগেই অর্থব্যবস্থা এমন শোচনীয় অবস্থায় ছিল যে, ধাক্কা সামলানোর সাধ্য ভারতের ছিল না। তার পরের বছরে আর্থিক বৃদ্ধি ৯ শতাংশের গণ্ডি অতিক্রম করে অতি সহজবোধ্য কারণে— অর্থশাস্ত্রের পরিভাষায় যাকে বলে লো বেস এফেক্ট, অর্থাৎ আগের বছরের ভিত্তি নিচু হওয়ায় তার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী বৃদ্ধিকে বড় দেখায়। কিন্তু, কেন্দ্রীয় শাসকরা যতই ভারতকে বিশ্বের দ্রুততম হারে বাড়তে থাকা অর্থব্যবস্থা হিসাবে দাবি করে গর্বিত হওয়ার চেষ্টা করুন, বাস্তবটি হল, যে সব বৃহৎ অর্থব্যবস্থার সঙ্গে ভারতের অর্থপূর্ণ তুলনা হওয়া সম্ভব, তার প্রতিটির মাথাপিছু জিডিপি ভারতের চেয়ে ঢের বেশি। বরং, কোভিড পরবর্তী বছরগুলোতে আর্থিক বৃদ্ধির হারের চলন বলছে, ভারতে অর্থব্যবস্থার পূর্ণ পুনরুত্থান এখনও দূর অস্ত্‌।

সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যানগুলি এই বাস্তবের পক্ষেই সাক্ষ্য দেয়। যেমন, ইন্ডেক্স অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন (আইআইপি) বা শিল্প-উৎপাদনের সূচক। এপ্রিলে এই সূচকের বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ২.৭ শতাংশ। তার মধ্যেও উদ্বেগজনক হল, কনজ়িউমার নন-ডিউরেব্‌লস অর্থাৎ নিত্য ব্যবহারের ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন সঙ্কুচিত হয়েছে। এই পরিসংখ্যানটিকেই যদি দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজারের চাহিদার সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে দেখা যাবে যে, শহরাঞ্চলে দীর্ঘ দিন ধরে চাহিদা বাড়ছে না। এই তথ্যের অন্য প্রমাণ পাওয়া যাবে নির্মাণক্ষেত্র ও পরিষেবা ক্ষেত্রের বৃদ্ধির হারে— কোভিড-পূর্ব সময়ের তুলনায় পরবর্তী পর্যায়ে ক্ষেত্র দু’টির বৃদ্ধির হার তাৎপর্যজনক ভাবে কম। কৃষি বাদ দিলে দেশে কর্মসংস্থানের একটি বড় অংশ জড়িত এই ক্ষেত্রগুলির সঙ্গে। তার বৃদ্ধি শ্লথ, ফলে কর্মসংস্থান ও বেতন বৃদ্ধির হারও শ্লথ। স্বাভাবিক অনুমান, এর ফলে দেশের এক বড় অংশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সঙ্কুচিত হয়েছে। বৈষম্য বাড়ছে। কেন, সেই কারণটি বোঝার জন্য গত এগারো বছরের বাস্তবের দিকে না তাকিয়ে উপায় নেই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Economy GDP GST

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।