Advertisement
E-Paper

হাতির মলে প্লাস্টিক, ঘটল কার দোষে?

শ্রীলঙ্কা বা ভারতের কেরল কিংবা উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স। ছবিটা একই। হাতির মলে মিলছে প্লাস্টিক। শীতে জঙ্গলে প্লাস্টিকের আবর্জনা ফেলে যায় পিকনিক পার্টি। সেই প্লাস্টিক খাচ্ছে হাতির দল। সমাধানের পথ কী? লিখছেন সব্যসাচী ঘোষগত এক মাসে ডুয়ার্সের তিনটি পৃথক এলাকা থেকে প্লাস্টিক-যুক্ত তিনটি হাতির মল পাওয়া গিয়েছে।

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৩
জঞ্জাল-পোড়া ধোঁয়ার মধ্যে ছড়িয়ে থাকা আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক খাচ্ছে হাতি।

জঞ্জাল-পোড়া ধোঁয়ার মধ্যে ছড়িয়ে থাকা আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক খাচ্ছে হাতি।

ডুয়ার্সে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করার দাবিতে অনেকবার অনেকেই প্রতিবাদ করেছেন। প্রচার অভিযান চালানো হয়েছে সচেতনতা বাড়াতে। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের মূল্য চোকানোর সময় যে এসে গিয়েছে, এবার পরিবেশ সেই বার্তা দিতে শুরু করেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। হাতির মলে প্লাস্টিক তেমনই একটি ভয়ঙ্কর ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত এক মাসে ডুয়ার্সের তিনটি পৃথক এলাকা থেকে প্লাস্টিক-যুক্ত তিনটি হাতির মল পাওয়া গিয়েছে। জঙ্গল এবং জঙ্গল-লাগোয়া এলাকাগুলোতে ব্যাপক হারে প্লাস্টিকের ব্যবহার যে চলছেই, এই ঘটনা তারই যেমন প্রমাণ, তেমনই হাতির মতো বৃহৎ প্রাণীও যে কোনও ভাবে প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে ছাড় পাচ্ছে না, এই ঘটনা তারও জলন্ত উদাহরণ। এই ঘটনায় আতঙ্কিত পরিবেশবিদ এবং প্রাণী বিশেষজ্ঞেরা।

প্লাস্টিক খেয়ে ফেলা হাতির শরীরের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর?

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন ছোট একটি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগই হাতির মৃত্যুর জন্য বড় কারণ হতে পারে। প্লাস্টিক অজৈব বস্তু। পরিপাক ক্রিয়ায় প্লাস্টিক সম্পূর্ণ অপাচ্য হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই হাতির দেহে তার বিরুপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। অন্ত্রে প্লাস্টিক জড়িয়ে গিয়ে হাতিকে গুরুতর অসুস্থও করে তুলতে পারে। আমাদের দেশে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলার কারণে হাতিমৃত্যুর ঘটনা ঘটেও গিয়েছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে কেরলে একটি পূর্ণবয়স্ক হাতি প্লাস্টিক খেয়ে ফেলার কারণে মারা যায়। শবরীমালা এলাকার পাম্বা নদীর ধারে ওই ঘটনাটি ঘটে। ময়নাতদন্তে হাতির পেট থেকে প্লাস্টিক মেলে। এই এলাকায় প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে তরিতরকারি এবং আনাজ পুণ্যার্থীরা ফেলে দিয়ে যেতেন। জঙ্গল থেকে এই নদীতে জল খেতে এসে প্লাস্টিকের ব্যাগ সমেত সে সব খেয়ে ফেলে হাতিরা। আর তাতেই ঘটে যায় বিপত্তি। কেরলের এই ঘটনারই অনুরূপ ছায়া দেখা যায় প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কাতেও। শ্রীলঙ্কায় শহরের ভিতরে ঢুকে ডাস্টবিনের সামনে দাঁড়িয়ে প্লাস্টিক খুঁটে খাবার খাচ্ছে বুনো হাতিরা, এমন ছবি আগেই ভাইরাল হয়েছে। দক্ষিণ ভারত এবং প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কার পর এ বার কি তা হলে উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের পালা, এই ভয়েই সিঁটিয়ে রয়েছেন পরিবেশবিদেরা।

প্লাস্টিক-যুক্ত হাতির মল

ডুয়ার্সের কোথায় কোথায় হাতির মলে প্লাস্টিক মিলেছে?

গত বছরের অগস্ট মাস থেকে পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ‘ওয়াইল্ড ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া’র উদ্যোগে দেশব্যাপী হাতি করিডর সমীক্ষার কাজ শুরু হয়। তারই অঙ্গ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের হাতি করিডরের কাজের দায়িত্ব পায় পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ‘স্পোর’। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতিটি হাতি করিডর তিন মাসে সমীক্ষা চূড়ান্ত করার পর ফের তিন মাসের জন্য সমীক্ষা করা হবে। প্রতিটি করিডরের দুই বর্গকিলোমিটার পরিসরের এলাকা ধরে ধরে এই জরুরি সমীক্ষাটি চালানো হচ্ছে। এই সমীক্ষা চলাকালীনই চেল নদীর চর এলাকায়, চামুর্চি ডায়না এলাকায় এবং তিস্তা লাগোয়া মংপং এলাকায় হাতির প্লাস্টিক-যুক্ত মল উদ্ধার করা হয়।

প্লাস্টিক-যুক্ত হাতির মল শীতকালেই কেন বেশি মিলছে?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পরিবেশপ্রেমী এবং হাতি গবেষকদের ভাবনায় মূলত দু’টি কারণ উঠে এসেছে। প্রথমত, শীতকালেই উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে যথেচ্ছ হারে যত্রতত্র পিকনিক হয়ে থাকে। শীতে পিকনিক পার্টিই ডুয়ার্সের দখল নেয় বললে কোনও বাড়িয়ে বলা হয় না। জনপ্রিয় পিকনিক স্পটগুলোর কোথাও শীতে যেমন তিলধারণের জায়গা থাকে না, তেমনই জঙ্গল লাগোয়া নদীর চর, পাহাড়ের নির্জন উপত্যকা কিংবা জঙ্গল ঘেরা চা-বাগানেও চুটিয়ে চলে পিকনিক। এই পিকনিক স্পটগুলোকে চীড়ান্ত ভাবে দূষিত করে চলে যায় পিকনিক পার্টি। আর এর জেরেই পিকনিকের প্রথম এবং প্রধান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ জনিত দূষণের কথা উঠে এসেছে। যেখানেই পিকনিক, সেখানেই প্লাস্টিক। খাদ্যবস্তুতে যেহেতু নোনতা স্বাদ থাকে, তাই নোনতা স্বাদের টানেই হাতি প্লাস্টিক খেয়ে ফেলছে বলেও বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন। এখানে জরুরি একটি বিষয় এই যে, হাতি-সহ কোনও বন্যপ্রাণীই প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক খাদ্যে আলাদা করে লবণ পায় না। চলার পথেই লবণের খোঁজ করতে করতে যায় তারা। জাতীয় উদ্যান এবং অভয়ারণ্যের ভিতর বন দফতর এই কারণেই লবণকুণ্ড বা সল্টপিট বানিয়ে রাখে। কিন্তু মুক্ত জঙ্গলে সে ব্যবস্থা থাকে না। দ্বিতীয়ত, বর্ষায় নদী, ঝোরার তীব্র স্রোতে প্লাস্টিক ভেসে চলে গেলেও শীতে তা আটকে থাকে। এর জেরেই শীতে হাতিদের প্লাস্টিক খেয়ে ফেলার প্রবণতা বাড়ে।

Plastic Elephant Dooars
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy