Advertisement
E-Paper

বাহিরে অন্দরে

সংবাদমাধ্যমে দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ বধূদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মিছিল। গত দুই সপ্তাহেই অন্তত নয়-দশ জন বধূর এমন মৃত্যু ঘটিয়াছে, যাহাতে সংশয় স্বাভাবিক যে তাঁহাদের হত্যা করা হইয়াছে অথবা নির্যাতন এমন পর্যায়ে পৌঁছাইয়াছে যে তাঁহারা আত্মহত্যা করিতে বাধ্য হইয়াছেন।

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০০:০০

মহামারীর প্রকোপ, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের বঙ্গেও, অতীতের তুলনায় কমিয়াছে। বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধির প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হইয়াছে, হইতেছে এবং মানুষ পূর্বের তুলনায় বহু গুণ সচেতন ও সতর্ক হইয়াছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের হালচাল দেখিয়া মনে হইতে পারে, বাঙালির সমাজ একটি ভয়ংকর মহামারীতে আক্রান্ত— বধূ-মৃত্যু। সংবাদমাধ্যমে দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ বধূদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মিছিল। গত দুই সপ্তাহেই অন্তত নয়-দশ জন বধূর এমন মৃত্যু ঘটিয়াছে, যাহাতে সংশয় স্বাভাবিক যে তাঁহাদের হত্যা করা হইয়াছে অথবা নির্যাতন এমন পর্যায়ে পৌঁছাইয়াছে যে তাঁহারা আত্মহত্যা করিতে বাধ্য হইয়াছেন। সত্য বলিতে কী, এই সব ঘটনায় হত্যা এবং আত্মহত্যার স্পষ্ট ও নিশ্চিত সীমারেখা নির্ধারণ করিতে বলিলে সিরিল র‌্যাডক্লিফও বোধ করি হাত তুলিয়া লইতেন। অনেক সময় বলা হয়, পূর্বেও এই ধরনের ঘটনা বিস্তর ঘটিত, কিন্তু তাহা থানা-পুলিশ-আইন এবং সংবাদমাধ্যম অবধি পৌঁছাইত না, এখন প্রচার বেশি হইতেছে। সম্ভব, কিন্তু অতীত দিয়া বর্তমান ঢাকা যায় না। অতীত অতীতমাত্র, এখন যে ঘটনাগুলি ঘটিতেছে, তাহা সত্য। নির্মম সত্য। এই মহামারী প্রতিরোধেও প্রবল উদ্যোগ আবশ্যক। সমাজ এবং প্রশাসন, দুই তরফেরই। তেমন উদ্যোগ কি যথেষ্ট আছে?

যথেষ্ট উদ্যোগ দূর অস্ত্। তবে অন্ধকার নিশ্ছিদ্র বলিলে অবিচার হইবে, ক্ষীণ কিছু আলোকরেখা আছে। ইদানীংকালে বধূমৃত্যুর সংবাদ যত বাড়িয়াছে, ততই বাড়িয়াছে তাহার বিরুদ্ধে লড়াই। আগে এমন বহু ঘটনায় দোষী ব্যক্তি অনায়াসে পার পাইয়া যাইত। এখন তাহা আর তত সহজ নহে। এই পরিবর্তনে গণমাধ্যমের একটি বড় ভূমিকা রহিয়াছে। প্রচারের চাপে প্রশাসনও বাধ্য হইতেছে ঘটনাগুলিতে হস্তক্ষেপ করিতে, তদন্ত করিতে। এখনও অনেক পথ যাইতে হইবে, কিন্তু যতটা ঘটিয়াছে তাহা তুচ্ছ করিবার নহে। অত্যাচার যত প্রচারের আলো পাইয়াছে, ততই লড়াইয়ের জমি শক্ত হইয়াছে। এই সচেতনতা মেয়েদেরও লড়াই করিবার সাহস দিয়াছে। এই কারণেই প্রতিরোধ এবং প্রতিবাদ জারি রাখা জরুরি। এই লড়াই দীর্ঘমেয়াদি।

কিন্তু লড়াই কেবল বাহিরের নহে, অন্দরেরও। বধুমৃত্যুর ঘটনাগুলির কার্যকারণসূত্রে তারতম্য আছে, কোথায়ও তাহার পিছনে অর্থের দাবি, কোথায়ও সম্পর্কের টানাপড়েন, কোথায়ও বা অন্য ধরনের মনোমালিন্য। কিন্তু বিভিন্ন ঘটনার গভীরে একটি সাধারণ সত্য নিহিত। তাহাকে বলা চলে ব্যক্তিগত তথা পারিবারিক মনোবিকলন। পরিকল্পিত হিংসা বা আকস্মিক উত্তেজনা, উভয় ক্ষেত্রেই তাহার লক্ষণ স্পষ্ট। যাহারা এই সব ঘটনা ঘটাইতেছে, তাহারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও না কোনও ভাবে দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজ ও অর্থনীতির সহিত তাল মিলাইয়া চলিতে অক্ষম। তীব্র উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং গভীর অনিশ্চয়তার মাঝখানে পড়িয়া বহু ব্যক্তি তথা পরিবার নিজের সর্বনাশ ডাকিয়া আনিতেছে। অনেক সময়েই নির্যাতিতা বধূর পাশাপাশি নির্যাতনকারী পুরুষ বা নারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে। স্পষ্টতই, এই সংকটের সহজ সমাধান নাই। প্রশাসন বা আদালতকে তাহার কাজ করিতে হইবে, সে কথা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তাহা জরুরি, যথেষ্ট নহে।

Bridal Death Crime West Bengal বধূ-মৃত্যু
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy