Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আগুন লইয়া খেলা

কাশ্মীর উপত্যকার বহু মানুষ কেন ভারতকে নিজেদের দেশ বলিয়া মনে করেন না, ইহা লইয়া প্রায় সকল ভারতীয় নাগরিক অতিশয় বিক্ষুব্ধ।

কাশ্মীর সীমান্ত নিয়ে অস্থিরতা ভারতের অন্যতম সমস্যা।

কাশ্মীর সীমান্ত নিয়ে অস্থিরতা ভারতের অন্যতম সমস্যা।

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯ ০০:২০
Share: Save:

কাশ্মীর উপত্যকার বহু মানুষ কেন ভারতকে নিজেদের দেশ বলিয়া মনে করেন না, ইহা লইয়া প্রায় সকল ভারতীয় নাগরিক অতিশয় বিক্ষুব্ধ। কাশ্মীরকে পাকিস্তানের আগ্রাসন হইতে ‘বাঁচাইবার’ জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী আপ্রাণ চেষ্টা করিতেছে, একের পর এক জওয়ান প্রাণ দিতেছেন, দেশের অভ্যন্তরেও জঙ্গি আক্রমণ সহিতে হইতেছে, অথচ এত কিছুর পরও কাশ্মীরিরা ভারতের প্রতি সদয় হইতেছেন না কেন, এই প্রশ্ন প্রবল উত্তাপ সৃষ্টিকারী। একটি সাম্প্রতিক সংবাদ এই প্রশ্নের উত্তর জোগাইতে পারে। উপত্যকার একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক রিজ়ওয়ান আসাদ পণ্ডিতের নিধনের প্রত্যক্ষ ফল হিসাবে সন্ত্রাসবাদে দীক্ষা লইলেন শহিদ মনজুর, নিহতের মিত্র। ২৮ বৎসর বয়সি রিজ়ওয়ান পণ্ডিত পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু বরণ করিয়াছেন। প্রশ্নাতীত ভাবে পুলিশি নির্যাতনই প্রাণহানির কারণ। পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট বা জননিরাপত্তা ধারার রক্ষকরা জানাইয়াছেন, তিনি সন্ত্রাসের সহিত যুক্ত ছিলেন। নিহত ব্যক্তি ও তাঁহার পরিবার-পরিজন দাবি করিয়াছেন যে, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এই ঘটনার ফলে বিক্ষোভ কত গভীরে প্রবেশ করিয়াছে তাহা বন্ধু শহিদ মনজুরের বক্তব্য হইতে পরিষ্কার। স্পষ্ট ভাষায় তিনি নিজের পরিবর্তনের ব্যাখ্যা করিয়াছেন। বলিয়াছেন যে, তিনি আগে যত কাশ্মীরিকে জঙ্গি হইতে দেখিয়াছেন, মনে করিয়াছেন উহারা ভুল পথ লইতেছে, নিজেদের জীবন লইয়া খেলা করিতেছে। কিন্তু এই ঘটনার পর তাঁহার মত পরিবর্তিত। মর্যাদা সহকারে বাঁচিয়া থাকিবার উপায় যেখানে নাই, সেখানে একমাত্র পথ জেহাদি সন্ত্রাস, কেননা, তাঁহার মতে, কাশ্মীরে বিচার বিবেচনা ন্যায় কিছুই আর অবশিষ্ট নাই।

পুলিশের বিচার-বিবেচনায় কখনওসখনও ভুল হইতেই পারে। নিহতের বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি ভুল হইয়া থাকে, সেই ক্ষেত্রেও সন্ত্রাস কোনও পথ হইতে পারে না, ইহা লইয়া এক ফোঁটা সন্দেহ নাই। প্রশ্নটি অন্যত্র। প্রশ্নটি আস্থা ও অনুভূতির। মাত্র একটি ঘটনাই যদি ‘ভুল’ মনে হইত, তাহাতে উপত্যকাবাসীর এতখানি অসহায় ও অসম্মানিত লাগিত না। অনেক দিন ধরিয়া সেনাবাহিনী ও পুলিশের হাতে তাঁহাদের এমন নির্যাতন সহিতে হইয়াছে যাহা অবিচার ও অবিবেচনা বলিয়া প্রত্যক্ষিত হইয়াছে। প্রায় কোনও অভিযুক্তই উপযুক্ত বিচারের সুযোগ পান না, এমন একটি ভাবনা কাশ্মীরের ত্রস্ত নাগরিককে তাড়া করিয়া বেড়াইতেছে কয়েক দশক যাবৎ। বিচার ও শাসন বস্তুটির সহিত রাষ্ট্রের সংযোগ সুগভীর। সুতরাং বিচার ও শাসনে আস্থা চলিয়া গেলে রাষ্ট্রবিরোধিতার যুক্তিটি অত্যন্ত বেশি রকম আকর্ষক হইয়া পড়ে। কাশ্মীরিদের প্রলুব্ধ করিবার জন্য সন্ত্রাসবাদের আদর্শ ও তাহার প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র হাতের কাছেই অপেক্ষা করিতেছে— এ তথ্য যখন জানা, সে ক্ষেত্রে ভারতীয় রাষ্ট্রকেই ভাবিতে হইবে কোন পন্থা লইলে রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের আস্থা এমন ভয়ানক ভাবে ধ্বস্ত হইবে না।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শহিদ মনজুর যে ভিডিয়ো-বার্তায় তাঁহার বক্তব্য পাঠাইয়াছেন, তাহার বিশ্বাসযোগ্যতা এখনও পরীক্ষিত নহে। তবে ডিজিটাল যুগের রীতি অনুযায়ী, পরীক্ষানিরীক্ষার আগেই বার্তাটি বহুপ্রচারিত হইয়া বহু মানুষের কাছে পৌঁছাইয়াছে। পুলওয়ামা কাণ্ডের পর যখন উপত্যকা জুড়িয়া অচলাবস্থা জারি, সেই পরিস্থিতিতে এই প্রচারের ফল কী হইতে পারে সহজেই অনুমেয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বৎসরে প্রায় দুই শত স্থানীয় যুবা জঙ্গি-দলে নাম লিখাইয়াছেন। সংখ্যাটি নেহাত সরকারি, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হইবারই কথা। কাশ্মীর যে ভাবে শাসিত হইতেছে, তাহা দেখিয়া সত্যই আতঙ্ক হয়। পুলওয়ামা ঘটিলেই সীমান্ত পার করিয়া হানা দিবার ক্ষমতা থাকার অর্থ কিন্তু এই নয় যে বার বার পুলওয়ামা ঘটিবার পথ প্রশস্ত করা হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kashmir কাশ্মীর Border Problems
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE