Advertisement
২০ মে ২০২৪
Corona

দ্বিতীয় ঢেউ, আমরা সতর্ক তো?

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ থেকে সারা ভারত জুড়ে শুরু হয়েছে কাঙ্খিত টিকাদান কর্মসূচি। প্রথমে ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারেরা।

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব চিত্র

সুদীপ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২১ ০৭:৫০
Share: Save:

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই ভোট আসন্ন। ভোটকেন্দ্রিক মিটিং-মিছিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তোয়াক্কা করা হচ্ছে না দূরত্ব বিধির। মাস্ক তো নৈব-নৈব চ। পাল্লা হচ্ছে দেদার ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সামাজিক অনুষ্ঠান, খেলা, মেলা। করোনা সংক্রান্ত বিধি সেখানে জায়গা পাচ্ছে না। সবকিছুই যেন স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। আবার প্রতি দিন লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু সংক্রমণের এই দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে আমরা যেন আশ্চর্য উদাসীন।

ভারতবর্ষে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৭-৩৮। সেটা বাড়তে-বাড়তে ২০২০র ১১ সেপ্টেম্বর ৯৭৬৫৫ হয়। এরপর দৈনিক সংক্রমণ কমে ২০২১ এর ১ ফেব্রুয়ারি ৮৫৭৯ তে নেমে আসে, তারপর যা ক্রমশ বেড়ে ২০২১ এ-র ১৯ শে মার্চ আবার ৪০৯০৬ তে পৌঁছোয়। আবার ফিরছে করোনা। কিন্তু আমরা কতটা সতর্ক? কতটা প্রস্তুত তার মোকাবিলায়?

২০২০র ২৩ মার্চ বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয়েছিল লকডাউন। তার কয়েক দিন আগেও আমরা ভাবতে পারিনি কী ভয়ঙ্কর কয়েকটা মাস আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সবাই গৃহবন্দি। শুনশান রাস্তা। দলে-দলে পরিযায়ী শ্রমিক গাড়ি ভাড়া করে, হেঁটে ফিরছেন ভিন রাজ্য থেকে। ট্রেন, বাস বন্ধ। ব্যবসা, বাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা। ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি। রাস্তায় মানুষ বলতে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সংবাদ মাধ্যমের কর্মী, সাফাই কর্মী, বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের মতো কিছু জরুরি পরিষেবা প্রদানকারি মানুষ। কাজ করেছেন ব্যাঙ্ক ও ডাকবিভাগের কর্মীরাও। সারা বিশ্ব তখন করোনার টিকা আবিষ্কারের প্রতীক্ষায় ছিল।

এক বছর কেটে গিয়েছে। ধীরে-ধীরে আনলক প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। জীবন স্বাভাবিক হয়েছে। এবং মানুষও দ্রুত বেলাগাম হয়েছে। কেউ বলছেন, ‘করোনা বলে কিছু নেই। পুরোটাই রাজনৈতিক।’ কারও মত, ‘আমাদের কিচ্ছু হবে না।’ বেপরোয়া মানসিকতায় ঘুচে গিয়েছে দূরত্ববিধি। কিন্তু এরই মধ্যে করোনা আবার ফিরছে। গবেষকদের মতে, নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ এক ধাক্কায় কমে যায় না। সংক্রমণের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ঢেউ আসবে। আর সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সাধারণত প্রথম ঢেউয়ের থেকে বড় হয়, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, মাস্ক পরে, আর টিকাকরণের হার বাড়িয়ে রোগের মোকাবিলা করা সম্ভব।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ থেকে সারা ভারত জুড়ে শুরু হয়েছে কাঙ্খিত টিকাদান কর্মসূচি। প্রথমে ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারেরা। এর পর পর্যায়ক্রমে প্রবীণ নাগরিক, ৪৫ বা তার বেশি বয়সী কো-মর্বিডিটি যুক্ত রোগী ও তার পর বাকি সাধারণ মানুষ টিকা পাচ্ছেন। এই টিকাকরণ নিয়ে অনেকের মনেই রয়ে গেছে বেশ কিছু প্রশ্ন? সাংবাদিকেরা কেন প্রথম ধাপে বাদ গেলেন? তাঁরা কি ফ্রন্টলাইনার নন? সাংবাদিক বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য যাঁরা সংক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে গোটা সময় কাজ করলেন তাঁদের নাম ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার হিসাবে টিকাপ্রাপকদের তালিকার প্রথম ধাপে থাকবে না কেন?

কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সৌগত বর্মন বলেন, ‘‘টিকা গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডি, টি-সেল ইমিউনিটি, বি-সেল ইমিউনিটি তৈরি হয়। যা পরবর্তীতে জনগোষ্ঠীর মধ্যে সার্বিক অনাক্রম্যতা (হার্ড ইমিউনিটি) তৈরি করে। হার্ড ইমিউনিটি করোনা-সংক্রমণের শিকল (চেন)-কে ভেঙে দিয়ে সংক্রমণ রুখতে সাহায্য করে। তবে করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে হার্ড ইমিউনিটি পেতে জনগোষ্ঠীর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকাকরণের আওতায় আনা দরকার।’’

যাঁরা জনবহুল এলাকা বা সংক্রমিত স্থানে কাজ করেন, যেমন সাংবাদিক, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী, ব্যাঙ্ক কর্মী, বাস কনডাক্টর, উকিল, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ— তাঁদের জরুরি ভিত্তিতে টিকা দান অবশ্যই দরকার। এঁদের আক্রান্ত হবার আশঙ্কা যেমন বেশি তেমনই এঁদের থেকে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও বেশি। যতক্ষণ না জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে তত ক্ষণ সকলকে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার অবশ্যই করতে হবে এবং দূরত্ববিধি মেনে চলতে হবে নিজেদের সুরক্ষার জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Coronavirus in West Bengal COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE