Advertisement
E-Paper

পরিস্থিতি ঠিক কতটা বিস্ফোরক? মেপে নেওয়া জরুরি

বিস্ফোরকবোঝাই মিনি ট্রাক গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই ধরা পড়ল, সে ভাল কথা। কিন্তু হিংসার প্রস্তুতির যে সুবিশাল ক্ষেত্রটার দিকে ইঙ্গিত করল এ ঘটনা, সেই ক্ষেত্রটাই আশঙ্কা জিইয়ে রাখছে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ০০:০৫
কলকাতার টালা ব্রিজ থেকে একটা মিনি ট্রাককে পুলিশ আটক করে। যাতে এক হাজার কেজি পটাশিয়াম নাইট্রেট ছিল। ফাইল চিত্র।

কলকাতার টালা ব্রিজ থেকে একটা মিনি ট্রাককে পুলিশ আটক করে। যাতে এক হাজার কেজি পটাশিয়াম নাইট্রেট ছিল। ফাইল চিত্র।

গভীর উদ্বেগের জন্ম দিল ঘটনাটা। পুলিশি সাফল্য বলব ঘটনাটাকে, না কি ব্যর্থতা, তাও ভাবতে হচ্ছে বার বার। ভোটের মরসুমে এক রাশ প্রশ্নচিহ্নের জন্ম দিয়ে দিয়েছে ওই একটা ঘটনাই।

শুক্রবার রাতে কলকাতার টালা ব্রিজ থেকে একটা মিনি ট্রাককে পুলিশ আটক করেছে, যাতে এক হাজার কেজি পটাশিয়াম নাইট্রেট ছিল। বিস্ফোরক তৈরির এই উপকরণ ওডিশার বালেশ্বর থেকে নিয়ে আসা হচ্ছিল এবং উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে। ঘটনাটার প্রেক্ষিতে ধরপাকড়ও শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাতে লঘু হয়নি ভেসে বেড়াতে থাকা প্রশ্নচিহ্নগুলো।

প্রথম প্রশ্ন হল, ওডিশার বালেশ্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা পর্যন্ত দীর্ঘ পথ এল কী করে বিস্ফোরক তৈরির উপাদান বোঝাই মিনি ট্রাক? পুলিশি বন্দোবস্ত বা গোয়েন্দা তত্পরতার পরিস্থিতিটা তা হলে কী রকম? ভিন্‌ রাজ্য থেকে বাংলায় ঢোকা গাড়িগুলোর ঠিকমতো তল্লাশি কি তা হলে হচ্ছে না? নজরদারির কি বড়সড় অভাব রয়েছে? পুলওয়ামার মতো ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলা ঘটে যাওয়ার পরেও কি আমরা যথেষ্ট সতর্ক হতে পারছি না? যদি সতর্ক থাকতাম, তা হলে দেশের মধ্যে এতটা দীর্ঘ পথ কী ভাবে পাড়ি দিত বিস্ফোরক তৈরির উপকরণ বোঝাই ট্রাক?

দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, একটা ঘটনা তো চোখের সামনে এল, অলক্ষ্যেই এ রকম আরও অনেক ঘটনা ঘটে যায়নি তো? দেশের মধ্যে এতটা দীর্ঘ পথ যে ভাবে পাড়ি দিয়েছে বিস্ফোরকবোঝাই গাড়িটা, তাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁকফোকরগুলো সামনে চলে এল অনেকখানি আশঙ্কা জাগিয়েই।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন​

আরও পড়ুন: নজরে এবার ওড়িশার সংস্থা, ভোটের মরসুমে বোমা বানাতেই আমদানি বিস্ফোরকের মশলা

আরও একটা সম্ভাবনার কথা পুলিশ জানাচ্ছে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে। ভোটের আগে বোমা তৈরির জন্যই ওই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল উত্তর ২৪ পরগনায়— এমনটা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। অতএব তৃতীয় প্রশ্ন হল, শুধু কি উত্তর ২৪ পরগনা? না কি জেলায় জেলায় ভোটের আগে এই একই প্রস্তুতি চলছে? বিভিন্ন জেলায় ইতিমধ্যে বিস্ফোরক পৌঁছে গিয়েছে, এমন নয় তো? সে রকমটা যদি ঘটে গিয়ে থাকে, তা হলে বারুদের স্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে নির্বাচনে যেতে হবে বাংলাকে।

প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ যা বলছে, তা কিন্তু উদ্বেগজনক পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাংলা কী ভাবে উত্তপ্ত হয়েছিল, তা আমরা সবাই দেখেছি। যে উত্তর ২৪ পরগনায় এই বিস্ফোরক যাচ্ছিল বলে জানা গিয়েছে, নির্বাচনের আগে থেকে শুরু করে নির্বাচনের অনেকগুলো মাস পরেও সেই জেলার কোনও কোনও অংশে কী ভাবে বোমা-বন্দুকের গর্জন শোনা গিয়েছে, তাও আমরা জানি। লোকসভা নির্বাচনেও কি সেই ছবির পুনরাবৃত্তি ঘটানোর প্রস্তুতি চলছে তা হলে?

গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় পরীক্ষার দিনক্ষণ ঘোষিত হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র আরও একবার সাধারণ নির্বাচনে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের মধ্যে থেকেই অনেক শক্তি এই প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা যে করবে, তা আমাদের অজানা নয়। নানা অগণতান্ত্রিকতাকে আশ্রয় করে, হিংসায় সওয়ার হয়ে গণতন্ত্রের সিলমোহর আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা এ দেশের নানা প্রান্তেই দেখা যায় নির্বাচনে। কিন্তু পরিণত গণতন্ত্রে সে সব মোটেই কাম্য নয়। নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষিত হওয়ার কয়েক দিন আগেই সম্ভাব্য হিংসার প্রস্তুতির খানিকটা আভাস আমরা পেয়ে গেলাম। অতএব আরও সতর্ক হতে হবে নির্বাচনকে ঘিরে। বিস্ফোরকবোঝাই মিনি ট্রাক গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই ধরা পড়ল, সে ভাল কথা। কিন্তু হিংসার প্রস্তুতির যে সুবিশাল ক্ষেত্রটার দিকে ইঙ্গিত করল এ ঘটনা, সেই ক্ষেত্রটাই আশঙ্কা জিইয়ে রাখছে।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Explosive STF Special Task Force Kolkata Police Lok Sabha Election 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy