বসিরহাটে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে গার্ডরেল। —ফাইল চিত্র।
রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্ম বা ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা সব সময়ই বিপজ্জনক। বিদ্বেষ হোক বা তোষণ, ধর্মকে যে পথেই রাজনীতিতে জড়ানোর চেষ্টা হবে, সে পথেই আগুন অপেক্ষায় থাকবে। এ চিরন্তন সত্য। আমরা এ কথা জানি না, তা নয়। প্রায় সকলেই জানি, চলতি দিনগুলোতে আরও বেশি করে জানছি। কিন্তু ধর্ম নিয়ে আর কখনও রাজনীতি করব না, কেউ করব না, এমন অঙ্গীকারে এখনও সম্ভবত আবদ্ধ হতে পারছি না।
উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অশান্তির ভয়াবহ আগুন। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার ভূরি ভূরি অভিযোগ উঠেছে ইতিমধ্যেই। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, পুলিশ নীরব বা অসহায় ভাবে দেখছে— এ দৃশ্য কাঙ্ক্ষিত নয় মোটেই। তাই অভিযোগ ওঠাই স্বাভাবিক, ক্ষোভের সঞ্চারই সঙ্গত। কিন্তু সেই সঙ্গত ক্ষোভের সূত্র ধরেই আবার ঢুকে পড়ছে ঘৃণার রাজনীতি— তোষণের পাল্টা বিদ্বেষ। রাজনীতির অনেক কারবারিই এখন এ আগুনে হাত সেঁকে নিতে চান। কিন্তু সে ফাঁদে আর পা দেওয়া উচিত হবে না কারওরই।
রোজনামচায় এখনও আমাদের সমস্যা অনেক। এখনও অনেক পথ এগনো বাকি। এ কথা সম্ভবত ঠিক যে সমৃদ্ধির শেষ সীমা বলে কিছু হয় না। তাই সামনের দিকে হাঁটার পথটারও কোনও শেষ দেখা যায় না। কিন্তু সে সব অনেক দূরের চর্চা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তার মতো বুনিয়াদি চাহিদাগুলোই এখনও নিজেদের জন্য পূরণ করে উঠতে পারিনি আমরা। কারও কারও ক্ষেত্রে চাহিদাগুলো এখনও খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা পাওয়ার স্তরে। এখনও সড়ক-বিজলি-পানির চাহিদা পূরণের আশ্বাসে সরকার বদলে যায় এ দেশের নানা প্রান্তে। সুতরাং সমগ্র ভারতকে কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধির দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে এখনও অনেক পথ হাঁটতে হবে। কিন্তু কী করে হাঁটব আমরা সে পথে? সেখানে তো একা একা পৌঁছনো যায় না। সে অগ্রগমনটা সমবেত প্রয়াসেই হয়। হঠাত্ হঠাত্ সব সমস্যা ভুলে যে ভাবে ধর্মীয় বিদ্বেষে মেতে উঠছি আমরা, তাতে সমবেত অগ্রগমনে যাবতীয় সম্ভাবনার বিসর্জন হয়ে যাচ্ছে বার বার।
চিন্তা কিন্তু শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপট নিয়ে নয়। চিন্তা আন্তর্জাতিক হাওয়া-বাতাস নিয়েও। পশ্চিম সীমান্ত থেকে রোজ জঙ্গি আস্ফালনের খবর আসছে। উত্তর সীমান্তে রক্তচক্ষু ড্রাগনের প্রবল হুঙ্কার শোনা যাচ্ছে। সুবিশাল ভারত মহাসাগরের বুকে কোনও প্রতিপক্ষ একাধিপত্যের নকশা বোনার চেষ্টা করছে। এই যাবতীয় ঝড়-ঝাপটার মুখে ঋজু থাকার জন্য অভ্যন্তরীণ দৃঢ়তা জরুরি। নাগরিকদের মধ্য সদ্ভাব এবং পারস্পরিক বিশ্বাসের বাতাবরণই সে দৃঢ়তার ধারক। এই কথাগুলো আমরা যদি ভুলে যাই, যদি ব্যস্ত থাকি মুষল পর্বের মহড়ায়, তা হলে পরিণতি আমাদের সুখকর হবে না কিছুতেই। আজও যদি না বুঝি এ সত্য, কোনও এক অনাগত ভবিষ্যতে মনে হবে, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy