পদ্মাবতী ফিল্মটিকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন যাবৎ এই ভারতভূমি জুড়ে যে কাণ্ড ঘটে চলেছে, তাতে আরও এক বার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের শরণাপন্ন হতে হয় এবং এই দেশ যে কী বিচিত্র এই বিস্ময়ে অবসন্ন হয়ে পড়ার অবকাশ তৈরি হয় নিদারুণ ভাবেই।
একটি ফিল্ম, যেটির দর্শন শতাধিক কোটির এই দেশের মুষ্টিমেয় কয়েক জন ছাড়া কেউ পাননি, এবং পাননি যখন, তখন তাতে কী সার বা অসারবস্তু আছে সে সম্পর্কেও ন্যূনতম জ্ঞান তৈরি হয়নি— এই পটভূমিকায় দাঁড়িয়ে নানা অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনতে পাচ্ছি ক্রমাগত। অস্ত্র ঘুরছে দিগ্বিদিক, এই না-জানা ফিল্মের না-জানা কাহিনির সম্ভাব্য ক্ষয়িষ্ণু দিকগুলিকে কেন্দ্র করেই অস্ত্র ঘুরছে বনবন করে, জ্বলছে কুশপুতুল, চলছে হুমকি, টপাটপ মাথা কাটার ফতোয়াও পড়ছে যখন তখন। যিনি অস্ত্র চালাচ্ছেন, তিনি জানেন না, আগুন ধরাচ্ছেন যিনি তাঁরও জানা নেই, হুমকি দেওয়া লোকগুলোও জানেন না, ঠিক কী কারণে তাঁদের এই ক্ষোভ। অর্থাৎ তাঁদের ক্ষোভ যে কারণে হলেও হতে পারে, পদ্মাবতী ফিল্মে সেই বিষয়গুলো আদৌ আছে তো? যুক্তির দেখা পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও, কারণ বিপুল আবেগে ভর দিয়ে অসংখ্য মানুষকে ছুটিয়ে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। কেউ জানে না কেন কী কারণে ছুটে চলেছে তারা, লক্ষ্য কী তাদের, তবু হুঙ্কারধ্বনিতে গা ভাসিয়ে রাস্তায় এসে নেমেছে এক বিপুল ভারত।
আরও পড়ুন
এ বার মমতার নাক কাটার হুমকি দিলেন সেই বিজেপি নেতা
দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দিতে পারতেন যাঁরা, সেই রাজনীতিকরা স্রোতের বিপরীতে যাওয়া দূরের কথা, গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন বেশি করে। একের পর এক মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের রাজ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করছেন এই ফিল্মের প্রদর্শন। মূলত বিজেপি-র মুখ্যমন্ত্রীদের এই ঘোষণা দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাগত জানাচ্ছেন পদ্মাবতীকে। এমনটা নয় যে, তিনি এই ফিল্ম দেখে যুক্তির পথে হাঁটতে চাইছেন। তিনি হাঁটছেন বিজেপি বিরোধী আবেগের স্রোত ধরে। গোটা দেশ জুড়ে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি আরও এক বার প্রকাশ্যে এনে দিল সামগ্রিক কাঠামোর নগ্নতাকে। এক জন সাধারণ মানুষও কি এক বার দেখবেন না, যূথবদ্ধ প্রবাহের মতো চালিত হয়ে চলেছি আমরা? ক্রমাগত?
এক বার কি আমরা হাঁটব যুক্তির পথে? সব বাধা পেরিয়েই? পদ্মাবতী আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে। নিজেদের শিরদাঁড়া চিনে নেব আমরা, এক বার?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy