Advertisement
২০ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

দাঁতনখ

অ নাদায়ী ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে খানিক শক্তিশালী করিয়া তুলিতেও কেন অর্ডিন্যান্স জারি করিতে হইবে, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় এই প্রশ্নটি অর্থহীন। এই আমলে অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে শাসনই দস্তুর হইয়াছে।

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৭ ০১:৩১
Share: Save:

অ নাদায়ী ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে খানিক শক্তিশালী করিয়া তুলিতেও কেন অর্ডিন্যান্স জারি করিতে হইবে, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় এই প্রশ্নটি অর্থহীন। এই আমলে অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে শাসনই দস্তুর হইয়াছে। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি অনাদায়ী ঋণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট কড়া না হইলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হস্তক্ষেপ করিতে পারিবে, প্রয়োজনে অনাদায়ী সম্পদটিকে নিলামে চড়াইতে পারিবে? ইহাই অর্ডিন্যান্সের মূল কথা। ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ এখন সাড়ে নয় লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি। গোটা পঞ্চাশেক ঋণগ্রাহক সংস্থার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করা চলে, যাঁহাদের খাতায় এই অনাদায়ী ঋণের সিংহভাগ রহিয়াছে। বিজয় মাল্য সেই তালিকায় সর্বাধিক আলোচিত নাম, কিন্তু বকেয়া ঋণের অঙ্কে তিনি সর্বাগ্রগণ্য নহেন। রাঘবতর বোয়ালরাও আছেন। নূতন অর্ডিন্যান্সের জোরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাঁহাদের খেলাইয়া ডাঙায় তুলিবার মতো মজবুত ছিপ পাইবে বলিয়া সরকারের আশা। বাজার সেই আশার শরিক।

কিন্তু, গোড়ার প্রশ্নটি আরও এক বার করা প্রয়োজন— ঋণ বকেয়া থাকে কেন? অনাদায়ী সম্পদের বোঝা বাড়িয়া উঠে কেন? বহু সমীক্ষায় দেখা গিয়াছে, ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে ঋণখেলাপির হার অত্যন্ত কম। সেই ঋণ যাঁহারা লইয়া থাকেন, বিজয় মাল্য বা গৌতম আদানিদের তুলনায় তাঁহাদের আর্থিক সামর্থ্য ধূলিকণাসম। তবুও তাঁহারা যথাসময়ে ঋণ পরিশোধের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। বিজয় মাল্যরা তোয়াক্কাই করেন না। প্রান্তিক চাষি হইতে শহুরে মধ্যবিত্ত, প্রত্যেকেরই মনে একটি ভয় কাজ করে— যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ না করিলে যদি কোনও সমস্যায় পড়িতে হয়! ভবিষ্যতে ঋণ মিলিবে না, তাহাই বৃহত্তম আশঙ্কা নহে। ঋণ শোধ না করিলে ব্যাঙ্ক হরেক উপায়ে নাকাল করিবে, এই ভয়ই সিংহভাগ মানুষকে ঋণ পরিশোধ করিতে বাধ্য করে। রাঘব বোয়ালদের এই ভয়টিই নাই। তাঁহারা জানেন, বড় খুঁটি ধরা আছে। বিপদে-আপদে সেই খুঁটিই বাঁচাইবে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে হিসাবে ভুল হইয়া যায় বটে। তখন লন্ডনে গা ঢাকা দেওয়া ভিন্ন উপায় থাকে না। কিন্তু, ব্যাঙ্কের হাতে হেনস্থা হওয়া তাঁহাদের জন্য নহে। অর্থাৎ, মূল সমস্যা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাঁতনখ না থাকিবার নহে। সমস্যার কেন্দ্রে রহিয়াছে বৃহৎ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ‘ক্লায়েন্টেলিজম’-এর সম্পর্ক। তেমন প্রভাবশালী খুঁটির আশ্রয় থাকিলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাধ্য কী ঋণখেলাপির সুরাহা করে।

অন্য সমস্যাটি মানসিকতার। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি প্রায় নিশ্চিত ভাবেই জানে, ঋণখেলাপির ঘটনা ঘটিলে, অনাদায়ী সম্পদ জমিয়া উঠিলে, আজ না হউক পরশুর পরের দিন সরকারই তাহার দায়িত্ব লইবে। ফলে, তাহাদের তরফে টাকা আদায়ের তাগিদ কম। রঘুরাম রাজন এই প্রবণতাটির দিকে নির্দেশ করিয়াছিলেন। বর্তমান অর্ডিন্যান্স এই প্রবণতায় রাশ টানিতে পারে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি প্রভাবশালীদের বাধা কাটাইয়া উঠিতে পারে, তবে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি যথেষ্ট সক্রিয় না হইলে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কই সিদ্ধান্ত করিতে পারিবে। অতএব, খেলা রাজনীতিকদের কোর্টে। তাঁহারা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবেন, নাকি ব্যাঙ্ককে নিজের কাজ করিতে দিবেন, এই সিদ্ধান্ত তাঁহাদেরই করিতে হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RBI Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE