Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Women

নবীনা

শুধুমাত্র মেয়েরাই নহেন, সার্বিক ভাবে দেশের তরুণ প্রজন্মকে ভবিষ্যতের হাল ধরিতে হইবে।

দেশের কনিষ্ঠতম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হতে চলেছেন বছর একুশের কলেজ পড়ুয়া আরিয়া রাজেন্দ্রন।

দেশের কনিষ্ঠতম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হতে চলেছেন বছর একুশের কলেজ পড়ুয়া আরিয়া রাজেন্দ্রন।

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২১ ০১:২১
Share: Save:

সর্বব্যাপী রাজনৈতিক বিষবাষ্পের মধ্যে যেন এক ঝলক তাজা বাতাস। কেরলে স্থানীয় স্তরের নির্বাচন পর্ব মিটিবার পর দেখা গিয়াছে রাজনীতির প্রাঙ্গণে পদার্পণ ঘটিয়াছে অন্তত আধ ডজন তরুণীর। তাঁহাদের সকলেরই বয়স কুড়ির কোঠায়। কেহ পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচিত হইয়াছেন, কেহ রাজ্যের সর্ববৃহৎ সিটি কাউন্সিলের পদটি অলঙ্কৃত করিয়াছেন। এবং প্রমাণ করিয়াছেন, রাজনীতি শুধুমাত্রই অভিজ্ঞ পক্বকেশদের বিচরণক্ষেত্র নহে, অনভিজ্ঞ নূতনরাও, এবং মেয়েরাও তাহাতে সমান স্বাগত। সর্বোপরি, তাঁহাদের প্রতিভা শুধুমাত্র রাজনীতির গণ্ডিতেই আবদ্ধ নহে। শিক্ষাক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রাখিয়াছেন তাঁহারা সকলেই, পারদর্শিতা দেখাইয়াছেন ললিতকলাতেও। অর্থাৎ, রাজনীতি এখনও তাঁহাদের সর্বস্ব গ্রাস করে নাই। কর্মে, চিন্তনে তাঁহারা নিজ প্রতিভা, শখকে সযত্নে লালন করিতেছেন, ইহার সঙ্গে যোগ করিয়াছেন রাজনীতিকে।

বস্তুত, ভারতীয় রাজনীতিতে আরও বৃহৎ সংখ্যক মেয়েদের যোগদান একান্ত প্রয়োজনীয়। এই দেশে মেয়েরা সুখে নাই। ঘরে-বাহিরে নানাবিধ নির্যাতনের সম্মুখীন হইতে হয় তাঁহাদের, বৈষম্যের বেড়াজালে আটকাইয়া রাখা হয়। মন্দিরে প্রবেশের অধিকার চাহিতে গেলে সর্বোচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হইতে হয়। এখনও সেই সমাজের এক বৃহৎ অংশের চোখে মেয়েদের স্থান শুধুমাত্র গৃহকোণে, সংসার পালনে এবং সন্তান উৎপাদনে। পৈতৃক সম্পত্তিতে অধিকার, স্ব-উপার্জনে অধিকার, এমনকি দৈহিক অধিকারও কাড়িয়া লইতে সদা তৎপর পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। সেই অধিকার দানে আইন আছে, কিন্তু আইনের দরজায় পৌঁছাইবার ক্ষমতা সকলের নাই। এমতাবস্থায় মেয়েদের দৈনন্দিন অধিকারগুলি প্রতিষ্ঠিত করিতে, এবং বঞ্চিতদের আইনের দরজায় পৌঁছাইয়া দিতে উপযুক্ত জনপ্রতিনিধির উপস্থিতি বড় প্রয়োজন। ভারতীয় রাজনীতিতে মেয়েরা যে উপস্থিত নাই, তাহা নহে। কিন্তু সেই উপস্থিতি প্রয়োজনের তুলনায় নিঃসন্দেহে কম। এবং যাঁহারা আছেন, তাঁহাদের অনেকেই রাজনীতির স্বার্থসন্ধানী আবর্তে পড়িয়া মেয়েদের দৈনন্দিন সমস্যাগুলিকে আর জাতীয় সমস্যা বলিয়া ভাবিতে পারেন না। সুতরাং, প্রয়োজন নূতন মুখের, যাঁহাদের মধ্যে এখনও মেয়েদের সমস্যাগুলিকে ‘মেয়েদের মতো’ করিয়া ভাবিবার ক্ষমতা আছে।

শুধুমাত্র মেয়েরাই নহেন, সার্বিক ভাবে দেশের তরুণ প্রজন্মকে ভবিষ্যতের হাল ধরিতে হইবে। তরুণ মন ভিন্ন ভাবনার, নূতন পথের সন্ধান জানে। দেশের উন্নতির পক্ষে এই ছকভাঙা ভাবনা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মনে হইতে পারে, অভিজ্ঞতার কি তবে কোনও দাম নাই? নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা তো এক দিনে আসিবে না। কাজের মধ্য দিয়া, ভ্রান্তির মধ্য দিয়াই অভিজ্ঞতা তৈরি হইবে। ইহার জন্য অন্য সকল ক্ষেত্রের ন্যায় রাজনীতিতেও অভিজ্ঞতার সঙ্গে অনভিজ্ঞতার মিশ্রণটি যথাযথ হওয়া প্রয়োজন। প্রবীণ তাঁহার রাজনৈতিক শিক্ষা, অভিজ্ঞতাকে ভাগ করিয়া লইবেন নবীনের সঙ্গে। নবীন তাঁহার আধুনিক, পরিশীলিত ভাবনাকে মিশাইবেন দল ও দেশ গড়িবার কাজে। তবে তো দেশ অগ্রসর হইবে। এই মিশ্রণ যথাযথ না হইলে, এক শ্রেণি সর্বদাই আসন ও ভোটবাক্সের চিন্তায় মগ্ন থাকিলে নবীন প্রজন্ম রাজনীতি-বিমুখ হইয়া পড়িবেন। দেশের পক্ষে তাহা সুসংবাদ নহে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women Women Empowerment Politics Kerala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE