Advertisement
E-Paper

অর্থনীতির পথ

অভীষ্ট জয়লাভ হইয়াছে। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতাও প্রশ্নাতীত। অতঃপর আশা করা চলে, নরেন্দ্র মোদী তাঁহার প্রতিশ্রুতিগুলির বাস্তবায়নে কালক্ষেপ করিবেন না। আসমুদ্রহিমাচল যাহার আশায় তাঁহার ঝুলি ভরিয়া দিয়াছে, তাহার নাম অর্থনীতির পুনরুত্থান। তাহার দুইটি পথ। প্রথম, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করিয়া মানুষকে কিঞ্চিৎ স্বস্তি দেওয়া; এবং দ্বিতীয়, ভারতকে ফের চড়া বৃদ্ধির হারের কক্ষপথে ফিরাইয়া আনা। ক্ষমতায় আসিলেই এই দুইটি কাজ সারিয়া ফেলিব, এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দেওয়া যতখানি সহজ, প্রকৃত কাজটি তাহার বহু গুণ দুষ্কর।

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৪ ০০:০৭

অভীষ্ট জয়লাভ হইয়াছে। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতাও প্রশ্নাতীত। অতঃপর আশা করা চলে, নরেন্দ্র মোদী তাঁহার প্রতিশ্রুতিগুলির বাস্তবায়নে কালক্ষেপ করিবেন না। আসমুদ্রহিমাচল যাহার আশায় তাঁহার ঝুলি ভরিয়া দিয়াছে, তাহার নাম অর্থনীতির পুনরুত্থান। তাহার দুইটি পথ। প্রথম, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করিয়া মানুষকে কিঞ্চিৎ স্বস্তি দেওয়া; এবং দ্বিতীয়, ভারতকে ফের চড়া বৃদ্ধির হারের কক্ষপথে ফিরাইয়া আনা। ক্ষমতায় আসিলেই এই দুইটি কাজ সারিয়া ফেলিব, এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দেওয়া যতখানি সহজ, প্রকৃত কাজটি তাহার বহু গুণ দুষ্কর। ভারতে মূল্যস্ফীতি যতখানি চাহিদাতাড়িত, তাহার তুলনায় অনেক বেশি জোগানের অভাবের ফলে। বিশেষত কৃষিক্ষেত্রে। নরেন্দ্র মোদীর হাতেও কোনও জাদুদণ্ড নাই যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিয়াই মূল্যস্ফীতির রাক্ষসকে দেশছাড়া করিবেন। আর্থিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সমস্যা গভীর। ইউপিএ সরকার তাঁহাকে যে অর্থনীতির উত্তরাধিকার দিয়াছে, তাহা পোকায় কাটা। সাম্প্রতিকতম তথ্য বলিতেছে, গত অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থনীতি প্রত্যাশিত ৪.৯ শতাংশ হারেও বাড়ে নাই। হারটি ৪.৭ শতাংশ। সেই বৃদ্ধিরও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কৃষিক্ষেত্র হইতে আসিয়াছে। মৌসম ভবন এই বৎসর অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টির পূর্বাভাস করিয়াই রাখিয়াছে। কাজেই, বৃদ্ধির হারের উন্নতির কাজটিও সহজ নহে। তবে বিনিয়োগকারীরা যে মোদীর উপর ভরসা রাখিয়াছেন, তাহা গত তিন সপ্তাহে স্পষ্ট হইয়াছে। ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের ঢল নামিয়াছে। এই ভরসাটি ধরিয়া রাখিতে পারিলে তাঁহার চিন্তার একাংশ অন্তত কমিবে।

ভরসা ধরিয়া রাখার একমাত্র উপায়, অর্থনীতির রোগ সারাইতে নিজের সদিচ্ছার প্রমাণ দেওয়া। প্রধান কর্তব্য, রাজকোষের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার। ইউপিএ সরকার জনপ্রিয়তা অর্জনের খেলায় মাতিয়া যে ভর্তুকি-রাজ প্রতিষ্ঠা করিয়াছিল, তাহা বিলোপ করিতে হইবে। নরেন্দ্র মোদী ‘গরিবের জন্য বাঁচিবার’ যে প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন, তাহা যেন তাঁহাকে ভর্তুকি বিতরণের চেনা পথে টানিয়া লইয়া না যায়। ভারতের সামাজিক ক্ষেত্রে বহু উন্নয়ন প্রয়োজন। কিন্তু তাহার জন্য সামাজিক পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ করিতে হইবে— বিনা পরিশ্রমে কিছু টাকার ব্যবস্থা করিয়া সেই উন্নয়ন সম্ভব হইবে না। পেট্রোলিয়াম বা রান্নার গ্যাসের ন্যায় ক্ষেত্রে নির্মম ভাবে ভর্তুকি ছাঁটিতে হইবে। অন্য দিকে কর আদায়ের পথটিও স্বচ্ছ এবং সাবলীল করা বিধেয়। তিনি পণ্য ও পরিষেবা করের বকেয়া প্রসঙ্গটি উত্থাপন করিয়াছেন। প্রত্যক্ষ কর বিধির কাজটিও যাহাতে অগ্রসর হয়, সে দিকে নজর রাখিতে হইবে। রাজকোষ তাঁহার নিয়ন্ত্রণে আসিলে তিনি পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করিতে পারিবেন। উন্নততর পরিকাঠামো ব্যতীত যে আর্থিক উন্নতি সম্ভব নহে, কথাটি নরেন্দ্র মোদী বিলক্ষণ জানেন। এবং, পরিকাঠামো খাতে আপাতত সরকারকেই বিনিয়োগ করিতে হইবে। রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানিতে পারিলে নরেন্দ্র মোদী তাঁহার জোড়া সমস্যারও বহুলাংশে সমাধান করিতে পারিবেন। রাজকোষ ঘাটতির সহিত মূল্যস্ফীতির সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক। বাজারে অতিরিক্ত টাকার জোগান কমিলে মূল্যস্ফীতি খানিক কমিবে বইকী। অন্য দিকে, সরকার আর্থিক শৃঙ্খলাকে গুরুত্ব দিলে বিনিয়োগকারীদের নিকট তাহা ইতিবাচক বার্তা বহন করিবে। ইউপিএ সরকার আর্থিক বিশৃঙ্খলাতেই পথভ্রষ্ট হইয়াছিল। মোদী সেই ভুল শুধরাইতে পারিবেন কি?

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy