Advertisement
E-Paper

কেন রাজ্যপাল

বিলিতি প্রবচন বলে, শিশুদের ‘দেখা যাওয়া’ উচিত, ‘শোনা যাওয়া’ উচিত নহে। অর্থাৎ তাহারা যেন তাহাদের অস্তিত্ব শব্দসহকারে জানান না দেয়! বর্তমান যুগের মূল্যবোধ বলে, ইহা অত্যন্ত আপত্তিকর কথা, রীতিমতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। আর ভারতের প্রজাতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক সংবিধান বলে, শিশুদের ক্ষেত্রে নহে, কথাটি বরং একেবারে অক্ষরে অক্ষরে সুপ্রযোজ্য কিছু সীমিত সাংবিধানিক পদের ক্ষেত্রে। যেমন, রাজ্যপাল।

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০০:০৪

বিলিতি প্রবচন বলে, শিশুদের ‘দেখা যাওয়া’ উচিত, ‘শোনা যাওয়া’ উচিত নহে। অর্থাৎ তাহারা যেন তাহাদের অস্তিত্ব শব্দসহকারে জানান না দেয়! বর্তমান যুগের মূল্যবোধ বলে, ইহা অত্যন্ত আপত্তিকর কথা, রীতিমতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। আর ভারতের প্রজাতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক সংবিধান বলে, শিশুদের ক্ষেত্রে নহে, কথাটি বরং একেবারে অক্ষরে অক্ষরে সুপ্রযোজ্য কিছু সীমিত সাংবিধানিক পদের ক্ষেত্রে। যেমন, রাজ্যপাল। অনির্বাচিত এই পদটি কেবল শব্দগত ভাবেই সর্বোচ্চ, বাস্তবগত ভাবে নহে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাজ্যের জনপ্রতিনিধিদের উপরে কেন্দ্র-মনোনীত এই পদাধিকারীর স্থান হইতেই পারে না। এই দস্তুর মাথায় রাখিয়াই বিভিন্ন প্রদেশের জন্য রাজ্যপাল নিয়োগ করে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নিয়মরীতি যাহাই হউক, পদাধিকারী রাজ্যপাল মহাশয় কিন্তু তাঁহার এই নিতান্ত আলঙ্কারিক ভূমিকার বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন নহেন, বিভিন্ন প্রশাসনিক বিষয়ে তিনি নিজের অধিকার ছাপাইয়া পদক্ষেপ করিতেছেন। পশ্চিমবঙ্গ উপর্যুপরি অন্তত দুই জন এমন অতিসক্রিয় রাজ্যপালকে পাইল। গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর পর এম কে নারায়ণন। উদ্বেগজনক।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বদলের ক্ষেত্রে এই অতিসক্রিয়তার নূতন নমুনা দেখা গেল। প্রাক্তন উপাচার্য মালবিকা সরকার তাঁহার পূর্বনির্ধারিত মেয়াদ শেষ হইবার সপ্তাহ-দুয়েক আগে অফিস ছাড়িয়া দিতে বাধ্য হইলেন, পরবর্তী উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া কার্যভার গ্রহণ করিলেন। ঠিক ছিল, মে মাসের ১৫ নাগাদ এই পরিবর্তন সাধিত হইবে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি হইতে শ্রীসরকার সরকারি নির্দেশানুসারে তিন মাসের অতিরিক্ত সময় পাইয়াছিলেন। কোন কারণে তাঁহাকে তড়িঘড়ি দুই সপ্তাহ আগে চলিয়া যাইতে হইল, তাহা সরকারি ভাবে স্পষ্ট করা হয় নাই। কিন্তু মনে করিবার কারণ আছে যে, রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের ইচ্ছাতেই এই বিশেষ তৎপরতা। ঘটনাটি শোভন হইল না। কোনও অঘটন না ঘটিলে বিদায়ী উপাচার্যকে সরকারি তরফে যে শোভনতার সহিত বিদায় দিবার কথা, তাহা দেখা গেল না। কেবল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নহে, গোটা পশ্চিমবঙ্গের জন্যই ইহা কু-দৃষ্টান্ত হইয়া রহিল। কিন্তু কুঘটন কেবল এই অশোভন পদ্ধতির মধ্যেই নিহিত নাই। কেন বিষয়টি রাজ্য সরকারের শিক্ষা মন্ত্রকের বদলে রাজ্যপালের ভবন হইতে নির্দেশিত হইবে? রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, কিন্তু সে পদ তো আলঙ্কারিক। নূতন উপাচার্য খুঁজিয়া বাহির করা এবং তাঁহাকে যথাবিধি কাজে বহাল করা তো তাঁহার দায়িত্ব হইবার কথা নহে!

এখানে আসে গভীরতর প্রশ্ন। রাজ্যপাল কেনই বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসাবে নিযুক্ত হইবেন? প্রথাটি বহু দশক ধরিয়া চলিয়া আসিতেছে বলিয়াই চির কাল চলিবে, ইহা নিশ্চয়ই কোনও যুক্তি হইতে পারে না। কেন্দ্রীয় সরকার মনোনীত এই পদাধিকারী পেশাগত জীবনের ঠিক কোন ক্ষেত্র হইতে আসিবেন, তাহা স্থির থাকে না। শিক্ষা বিষয়ে তাঁহার অধিকার থাকিতেও পারে, না-ও থাকিতে পারে। যথা, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজ্যপাল এক জন সুদক্ষ ও সুনামী প্রশাসক। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করিয়াই কি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মযোগ বিষয়েও সিদ্ধ-ব্যক্তিত্ব? রাজ্যপাল পদটির সহিত আচার্য-আসনের স্বতঃসিদ্ধ সংযোগ না রাখিয়া বরং কোনও স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাবিদকে এই ভূমিকায় বৃত করাই সঙ্গততর হইত না কি? কেবল বর্তমান প্রসঙ্গের প্রেক্ষিতে নহে, সাধারণ ভাবেই ইহা একটি জরুরি প্রশ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান রক্ষণ ও উন্নয়ন এবং প্রশাসনতন্ত্রের সঙ্গে তাহার দূরত্ব বর্ধন: দুইটি উদ্দেশ্যেই এই প্রশ্নের পুনর্বিবেচনা দরকার। শিক্ষার স্বার্থে। নৈতিকতার স্বার্থেও।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy