Advertisement
E-Paper

কথায় নহে, কাজে

শুষ্ক কথায় চিপিটক বিলক্ষণ ভিজিতে পারে, কিন্তু অর্থনীতি? নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে, অথবা তাহারও পূর্বে নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারত বিষয়ে তাঁহার ভাবনার রূপরেখা আঁকিয়াছেন। মোদী মনমোহন সিংহ নহেন, অটলবিহারী বাজপেয়ীও নহেন। নীরবতা অথবা কাব্য নহে, তিনি গদ্যে বিশ্বাসী। চমকদার গদ্য, তাঁহার উদ্ভাবনী প্রতিভার নিদর্শন যাহাতে সুপ্রতুল। তিনি বিশ্ববাসীকে আহ্বান করিয়াছেন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’— আসুন, ভারতে নির্মাণ করুন।

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৫

শুষ্ক কথায় চিপিটক বিলক্ষণ ভিজিতে পারে, কিন্তু অর্থনীতি? নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে, অথবা তাহারও পূর্বে নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারত বিষয়ে তাঁহার ভাবনার রূপরেখা আঁকিয়াছেন। মোদী মনমোহন সিংহ নহেন, অটলবিহারী বাজপেয়ীও নহেন। নীরবতা অথবা কাব্য নহে, তিনি গদ্যে বিশ্বাসী। চমকদার গদ্য, তাঁহার উদ্ভাবনী প্রতিভার নিদর্শন যাহাতে সুপ্রতুল। তিনি বিশ্ববাসীকে আহ্বান করিয়াছেন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’— আসুন, ভারতে নির্মাণ করুন। ভাষার খেলায় প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ সুবিদিত, বিশেষত সংক্ষিপ্ত নাম-নির্মাণে। মঙ্গল অভিযানের নামটি যেমন তাঁহার বয়ানে মাতৃত্বের স্পর্শ পাইয়াছে, তেমনই প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকে তিনি ‘ফার্স্ট ডেভেলপ ইন্ডিয়া’ বানাইয়াছেন। এই প্রতিভায় কেহ মুগ্ধ হইতে পারেন, আবার কাহারও নিকট এই বাক্-চাতুর্য কিঞ্চিৎ বাড়াবাড়ি ঠেকিবে— পছন্দের অধিকার ব্যক্তিগত। কিন্তু, সমস্ত কথার ভিড়েও একটি নূতন বার্তা দৃষ্টি এড়াইবে না। মোদী বলিয়াছেন, ভারতে বিনিয়োগ টানিবার জন্য তিনি আর্থিক সুবিধার লোভ দেখাইতে চাহেন না। তিনি ভারতে এমন একটি বিশ্বাসের পরিমণ্ডল গড়িয়া তুলিতে চাহেন, যাহাতে বিনিয়োগকারীরা স্বতঃই ভারতের প্রতি আকৃষ্ট হইবেন। নূতন কথা ইহাই।

কিন্তু, ‘হুইল-কগ’ নির্মিত সিংহের ছবিটিও যাহাকে ঢাকিতে পারে নাই, তাহা ভারতের সার্বিক সংস্কারহীনতা। কয়লাখনি বণ্টনের প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায় সেই সংস্কারহীনতার একটি সুতীব্র প্রমাণ। ১৯৯৩ সাল হইতে যত কয়লাখনি বণ্টিত হইয়াছিল, আদালতের রায়ে তাহার মাত্র চারটি বাদে সবকয়টি বণ্টনের সিদ্ধান্তই বেআইনি ঘোষিত হইয়াছে। খনি বণ্টনের পদ্ধতিতে অস্বচ্ছতা ছিল, অনস্বীকার্য। কিন্তু, এই রায়ের বার্তাটিও একই রকম প্রবল: ভারতীয় অর্থনীতি চরিত্রে অনিশ্চিত। যেখানে একুশ বৎসরের পুরাতন সিদ্ধান্ত বাতিল হইতে পারে, সেখানে সরকারের কোনও আশ্বাসেই বিশ্বাস করা কঠিন। বাজারমুখী গণতান্ত্রিক কোনও দেশে এমন ঘটনা অস্বাভাবিক। আরও অস্বাভাবিক হইল, যাঁহারা খনি পাইয়াও নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তাঁহাদের তুলনায় কঠোরতর শাস্তি পাইতেছেন তাঁহারা, যাঁহাদের খনিতে কাজ হইয়াছে, তাঁহাদের বিপুল জরিমানা জমা করিতে হইবে। আদালতের আদেশে ফের কোল ইন্ডিয়াই কার্যত দেশের সব খনির অধিকারী হইল। রাষ্ট্রায়ত্তকরণের ভূত যে একবিংশ শতকের ভারতের স্কন্ধ হইতে নামে নাই, আরও এক বার তাহা স্পষ্ট।

ভারতে নির্মাণ করিবার জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করিয়া তুলিতে হইলে সংস্কার ভিন্ন গতি নাই। কয়লাখনি লইয়া যে দুর্নীতি গত একুশ বৎসরে হইয়াছে, তাহাও সংস্কারের অভাবেরই ফল। কয়লার ন্যায় প্রাকৃতিক সম্পদে রাষ্ট্রের এমন খবরদারি নিতান্ত অপ্রয়োজনীয়। তাহাতে বাজারের অধিকার। দেশের মানুষ যাহাতে প্রাকৃতিক সম্পদের আর্থিক অধিকার হইতে বঞ্চিত না হয়, রাষ্ট্র সে দিকে বিলক্ষণ নজর রাখিবে, কিন্তু সেই অবধি। গত দুই দশকে পাঁচ জন প্রধানমন্ত্রী এই স্বাভাবিক প্রশ্নটিকে স্বীকার করিতে পারেন নাই। তাঁহারা আইন সংস্কারের পথটি সযত্নে এড়াইয়া গিয়াছেন। শুধু কয়লাখনিই নহে, আরও বহু ক্ষেত্রেই এই সংস্কার বকেয়া পড়িয়া আছে। ইন্দিরা গাঁধীর জমানার ভূতটিকে সম্পূর্ণ তাড়াইতে না পারিলে কাহারও কোনও বাক্পটুত্বই ভারতকে বিনিয়োগের কেন্দ্র করিয়া তুলিতে পারিবে না।

editorial anandabazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy