Advertisement
E-Paper

তবু ভাল

সদ্য-বিলুপ্ত শ্যামল সেন কমিশন সম্বন্ধে যত কথা বলিবার, তাহার সবটুকু নেতিবাচক নহে। এই কমিশনের অন্তত একটি ইতিবাচক দিক আছে। তাহা হইল, কমিশনটি আর নাই। এমন অপ্রয়োজনীয়, অনৈতিক, অস্বচ্ছ এবং বিপজ্জনক একটি কমিশন যে তৈরি হইয়াছিল, এবং এত দিন টিকিয়া ছিল, তাহা পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে অতি দুর্ভাগ্যের। বহু বিলম্বে হইলেও সরকার কমিশনটির ঝাঁপ ফেলিয়াছে, তাহাই বাঁচোয়া। সারদা বা অন্য কোনও ভুঁইফোড় আর্থিক সংস্থায় যাঁহারা টাকা খোয়াইয়াছেন, তাঁহাদের দুর্ভাগ্যের দায় সরকারের নহে।

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৫

সদ্য-বিলুপ্ত শ্যামল সেন কমিশন সম্বন্ধে যত কথা বলিবার, তাহার সবটুকু নেতিবাচক নহে। এই কমিশনের অন্তত একটি ইতিবাচক দিক আছে। তাহা হইল, কমিশনটি আর নাই। এমন অপ্রয়োজনীয়, অনৈতিক, অস্বচ্ছ এবং বিপজ্জনক একটি কমিশন যে তৈরি হইয়াছিল, এবং এত দিন টিকিয়া ছিল, তাহা পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে অতি দুর্ভাগ্যের। বহু বিলম্বে হইলেও সরকার কমিশনটির ঝাঁপ ফেলিয়াছে, তাহাই বাঁচোয়া। সারদা বা অন্য কোনও ভুঁইফোড় আর্থিক সংস্থায় যাঁহারা টাকা খোয়াইয়াছেন, তাঁহাদের দুর্ভাগ্যের দায় সরকারের নহে। তাঁহাদের অনেকেই দরিদ্র হইলেও নহে। তাঁহারা তৃণমূল কংগ্রেসের বর্তমান বা ভবিষ্যৎ ভোটার হইলেও নহে। এমন জালিয়াত আর্থিক সংস্থার বাড়বাড়ন্ত রোধ করা সরকারের কাজ ছিল। সরকার তাহাতে ব্যর্থ। পক্ষান্তরে, এই সন্দেহ ক্রমশই বাড়িতেছে যে, সেই সংস্থাগুলির ফুলিয়া ফাঁপিয়া উঠায় শাসক দলের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। কিন্তু রাজকোষের টাকা খরচ করিয়া সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা চলে না। কোনও বেসরকারি সংস্থা এবং কিছু ব্যক্তির মধ্যে হওয়া চুক্তির ব্যর্থতার দায়ভার সরকারের উপর বর্তায় না। মুখ্যমন্ত্রী অনৈতিক ভাবে করদাতার উপর সেই বোঝা চাপাইয়াছেন। প্রসঙ্গত, তাঁহাকে স্মরণ করাইয়া দেওয়া যাউক, সিবিআই এই কেলেঙ্কারির তদন্ত করিতেছে। আমানতকারীদের টাকা ফিরাইবার দায় তাহাদের নাই। কাজেই, ‘এই বার সিবিআই টাকা ফেরত দিক’ মর্মে রাজনীতিটি, পশ্চিমবঙ্গের মানেও, বড় কাঁচা।

কমিশনে প্রায় সতেরো লক্ষ আবেদন জমা পড়িয়াছিল। তাহার এক-তৃতীয়াংশেরও কম মানুষ ক্ষতিপূরণ পাইয়াছেন। কমিশনের প্রধানই স্বীকার করিয়াছেন, বহু আবেদনপত্র এখনও বস্তাবন্দি পড়িয়া আছে। তাহা হইলে কীসের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ-প্রাপকদের বাছিয়া লওয়া হইল? জানিবার উপায় নাই। এই অস্বচ্ছতাই সন্দেহের জন্ম দেয়। কেহ অনুমান করিতেই পারেন, ক্ষতিপূরণ পাইবার যোগ্যতা রাজনৈতিক আনুগত্যের অঙ্কে স্থির হইয়াছে। অনুমানটি মিথ্যা, এমন দাবি করিবার কোনও উপায় কমিশনের নাই। তাঁহারাই সেই উপায় রাখেন নাই। এক্ষণে একটি প্রশ্ন উঠিতে পারে। এই কমিশন যে সোজা পথে চলিবে না, তাহা ভূতপূর্ব বিচারপতি শ্যামল সেন মহাশয়ের অনুমানের অতীত ছিল, এ কথা মানিয়া লওয়া মুশকিল। এমন একটি অনৈতিক, অস্বচ্ছ কমিশনের প্রধান হইতে তিনি সম্মত হইয়াছিলেন কেন?

কমিশন যে সকল আবেদনকারীকেই টাকা ফিরাইয়া দিতে পারে নাই, তাহা সুসংবাদ। কেবল রাজকোষের পক্ষে নহে, রাজ্যের ভবিষ্যতের পক্ষেও। সারদা-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফিরাইয়া দেওয়ার খেলাটির সর্বাপেক্ষা বিপজ্জনক দিক ছিল, তাহা মানুষকে আরও বেপরোয়া করিয়া তুলিত। মানুষ জানিতেন, ঝুঁকির আমানতে টাকা রাখিয়া ঠকিলেও ভয় নাই— রাজ্য সরকার রক্ষাকর্তার ভূমিকা লইবে। ফলে, এই ধরনের ঝুঁকির আকর্ষণ বাড়িত, সুতরাং বিপদও। পরিণামবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখিলে এই ‘মরাল হ্যাজার্ড’ তৈরি করাই সেন কমিশনের বৃহত্তম কুপ্রভাব। সকলে টাকা না পাওয়ায় তবুও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি অনিশ্চয়তা রহিল। যাঁহারা টাকা পাইলেন না, তাঁহাদের প্রতি কোনও অন্যায় হয় নাই। বরং, যাঁহারা পাইয়াছেন, তাঁহাদের প্রাপ্তি অন্যায়। কিছু মানুষ অন্যায় সুবিধা পাইয়াছেন বলিয়া সকলকেই তাহা দিতে হইবে, এমন দাবি বুঝি এই রাজ্যেই সম্ভব।

anandabazar editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy