Advertisement
E-Paper

মধ্যযুগের সাধনা

আফ্রিকার অন্যতম মজবুত অর্থনীতির দেশ নাইজিরিয়া। কেবল তেল বেচিয়াই বছরে দশ হাজার কোটি ডলার তাহার আয়। কিন্তু জেহাদি সন্ত্রাসবাদী ‘বোকো হারাম’ গোষ্ঠীর জঙ্গি বর্বরতায় দেশটি উত্তরোত্তর বিপন্ন। এই গোষ্ঠীর নামের অর্থ: ‘পাশ্চাত্য শিক্ষা নিষিদ্ধ’। তবে কার্যক্ষেত্রে কেবল পশ্চিমী শিক্ষা নয়, সব ধরনের শিক্ষাই তাহারা নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী, বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে। কেননা শিক্ষা আনে চেতনা, আর চেতনা দেয় প্রশ্ন করার সাহস ও কল্পনাশক্তি।

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০০:০৩

আফ্রিকার অন্যতম মজবুত অর্থনীতির দেশ নাইজিরিয়া। কেবল তেল বেচিয়াই বছরে দশ হাজার কোটি ডলার তাহার আয়। কিন্তু জেহাদি সন্ত্রাসবাদী ‘বোকো হারাম’ গোষ্ঠীর জঙ্গি বর্বরতায় দেশটি উত্তরোত্তর বিপন্ন। এই গোষ্ঠীর নামের অর্থ: ‘পাশ্চাত্য শিক্ষা নিষিদ্ধ’। তবে কার্যক্ষেত্রে কেবল পশ্চিমী শিক্ষা নয়, সব ধরনের শিক্ষাই তাহারা নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী, বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে। কেননা শিক্ষা আনে চেতনা, আর চেতনা দেয় প্রশ্ন করার সাহস ও কল্পনাশক্তি। তাই বোকো হারাম-এর জেহাদিরা নাইজিরিয়ার একটি আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়ে রাতের অন্ধকারে হানা দিয়া প্রায় তিনশত ছাত্রীকে অপহরণ করে। ৫৩ জন পলায়নে সমর্থ হইলেও বাকিরা এখনও জেহাদিদের হাতে বন্দি। বোকো হারাম-এর নেতা আবু বকর শিয়াকু এক ভিডিও-বার্তায় জানাইয়া দিয়াছেন, অপহৃত এই কিশোরীদের তিনি বাজারে বিক্রয় করিবেন। মাথাপিছু ১২ ডলার দরও ধার্য হইয়া গিয়াছে। নাইজিরিয়ার সরকারের উপর আন্তর্জাতিক জনমতের ধিক্কার আছড়াইয়া পড়িয়াছে। কিন্তু ঘটনার পর বেশ কিছু কাল কাটিয়া গেলেও অপহৃত কিশোরীদের কোনও সন্ধান মেলে নাই, দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের সম্ভাবনাও দেখা যাইতেছে না।

বরং এই অপহরণ-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজধানী আবুজায় জমায়েত বিক্ষোভকারীদের দুই নেত্রীকে গ্রেফতার করা হইয়াছে এবং প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথন-এর স্ত্রী এই ধরনের প্রতিবাদ হইতে দেশের মহিলাদের দূরে থাকার পরামর্শ দিয়াছেন। স্বভাবতই প্রেসিডেন্ট জোনাথনের সরকার বোকো হারাম-এর জেহাদিদের গ্রেফতার করিতে আদৌ ইচ্ছুক কি না, সেই প্রশ্নও উঠিয়াছে। ২০০২ সালে মহম্মদ ইউসুফ স্থাপিত বোকো হারাম প্রথমাবধি আল-কায়দার সহিত সংযোগ রাখিয়া চলিয়াছে। ২০০৯ সালে নাইজিরিয়ার জেলে ইউসুুফের মৃত্যু হইলেও বোকো হারাম-এর তৎপরতায় ভাটা পড়ে নাই। একটি হিসাব অনুযায়ী গত বছরেই বোকো হারাম-এর সহিত সংঘর্ষে সব মিলাইয়া দেড় হাজার মানুষের মৃত্যু হইয়াছে। আজুবায় বোমারু হামলা, গাড়ি-বোমা, আত্মঘাতী ফিদাইন হানা ক্রমশ বাড়িতেছে। এখন তাহার সহিত যুক্ত হইয়াছে মেয়েদের অপহরণ। অপহৃতাদের বিক্রয় করিয়া দিবার ঘোষণা আপাতদৃষ্টিতে চমকপ্রদ হইলেও ইতিহাসের দিক হইতে নজিরবিহীন নয়। আফগানিস্তানের তালিবান-এর মতো নাইজিরিয়ার বোকো হারামও যে মধ্যযুগকেই ফিরাইয়া আনিতে চায়, তাহা শরিয়তি শাসন কায়েমের প্রয়াসেই স্পষ্ট। কোনও আধুনিক গণতন্ত্র এই দাবি শিরোধার্য করিতে প্রস্তুত নয়। তাই গণতন্ত্রকেই ইসলামের বিপরীত বর্গ রূপে প্রচার করা হইতেছে।

জেহাদিরা আঘাত হানিয়াছে এমন জায়গায়, যেখানে তাহার ক্ষত ও ক্ষরণ সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হইবে। অপহৃত কিশোরীদের উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা তো বটেই, অন্যান্য বালিকা বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বাবা-মায়েরাও শঙ্কিত। অনেকেই মেয়েদের স্কুলের পড়া ছাড়াইয়া দিবার কথা ভাবিতেছেন। আফগানিস্তানেও তালিবানরা এ ভাবেই মেয়েদের শিক্ষিত করার সরকারি উদ্যোগ বানচাল করিতে তৎপর হইয়াছিল। প্রিয়জনের অনিষ্ট আশঙ্কায় অভিভাবকরা যদি মেয়েদের পড়া ছাড়াইয়া দেন, তাহাতে শেষ পর্যন্ত বোকো হারাম-এর জেহাদিদেরই জয় হইবে। এখানেই নাইজিরিয়ার সরকার ও সমাজের প্রকৃত পরীক্ষা।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy