খোদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে উঠছে ইসলাম-বিদ্বেষের অভিযোগ! হতবাক শিক্ষক-অধ্যাপকেরা। বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা না করে পড়ুয়াদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে জানা গিয়েছে, বছর শেষে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে আসবে রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশন।
গত ২৩ বছর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করছেন শাশ্বতী হালদার। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি কখনও। বর্তমানে তিনিই বিভাগীয় প্রধান। গত ২২ ডিসেম্বর তিনিই স্নাতক তৃতীয় বর্ষের পঞ্চম সেমেস্টারের এক ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছাত্রীকে অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে কথা বলেছিলেন। সবটাই ঘটেছিল পরীক্ষায় স্বচ্ছতার স্বার্থে ছাত্রীর সম্মতিতে। অধ্যাপিকার দাবি, তল্লাশির আগে ও পরে তিনি ছাত্রীর কাছে দুঃখপ্রকাশও করেছিলেন। সে সময় ছাত্রীটি কোনও আপত্তি তোলেননি বরং নিজেই হিজাব খুলে দেখিয়েছিলেন তাঁর কানে হেডফোন নেই। অধ্যাপিকা এবং তাঁর সঙ্গে এক মহিলা গবেষক দাঁড়িয়েছিলেন পাশে। তাঁরা কেউই ছাত্রীর গায়ে হাত দেননি।
আরও পড়ুন:
এর পর কোথাও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। কিন্তু সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সকলের সামনে একদল পড়ুয়া পোস্টার হাতে দাবি তুললেন, ‘মাই বডি মাই চয়েস’ (আমার শরীর আমার মর্জি), ‘সে নো টু ইসলামোফবিয়া’ (ইসলাম-বিদ্বেষকে না বলুন)। আর তাতেই উস্কে উঠেছে বিতর্ক। গোটা ঘটনায় মর্মাহত শাশ্বতী।
আনন্দবাজার ডট কমকে অধ্যাপিকা বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা আমার সন্তানের মতো। পরীক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই আমাদের নজরদারি চালাতে হয়। সেই মতোই সে দিন তল্লাশি চলছিল। ওই ছাত্রীর সম্মানহানি হয় বা ভাবাবেগে আঘাত লাগে, এমন কোনও আচরণ আমি করিনি। এমনকি ছাত্রীও তেমন কিছু জানায়নি আমাকে। তার পর যা ঘটল, তাতে আমি হতবাক।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত কয়েক দিন ধরেই পরীক্ষাকক্ষে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ উঠছিল। কখনও চিরকুটে, কখনও কাঠগোলাপের পাপড়িতে মিলছিল নকল। এমনকি দুই ছাত্রী (অমুসলিম) মাথাঢাকা শীতপোশাকের আড়ালে ব্লু-টুথ হেডফোন ব্যবহার করছিলেন বলেও অভিযোগ ওঠে। গত ২২ ডিসেম্বর যাদবপুরে ইংরেজি বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার সময় ৬৫ জন প়ড়ুয়াকে দু’টি ঘরে বসানো হয়। বার বার নকল করার অভিযোগ ওঠায় বিভাগীয় প্রধান পরীক্ষাকক্ষ পরিদর্শন করেন। সে সময়ই দুই হিজাব পরিহিতা ছাত্রীকে আলাদা ঘরে নিয়ে গিয়ে কথা বলা হয়। সঙ্গে ছিলেন এক মহিলা গবেষকও। তবে, তাঁদের কাছে নকল বা অন্য কোনও যন্ত্র পাওয়া যায়নি। সে জন্য ছাত্রীদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করা হয়। সময় নষ্ট হওয়ায় পরীক্ষার পর অতিরিক্ত ১০ মিনিট বরাদ্দ করা হয় তাঁদের জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নেয়।
শাশ্বতী বলেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কোনও ভাবেই কোনও ধর্মীয় বা সম্প্রদায়গত বিদ্বেষকে প্রশ্রয় দেয় না। আমি নিজেও তফশিলি জাতিভুক্ত এক শিক্ষিকা। যদি ওই ছাত্রীর ভাবাবেগে আঘাত লেগে থাকে, তবে আমি এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নিতে প্রস্তুত।” অভ্যন্তরীণ তদন্তের আগে অন্য বিভাগে শিক্ষক-অধ্যাপকেরা কেউই সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে রাজি নন। তবে প্রায় সকলেই মনে করছেন ভুল বোঝাবুঝির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার পড়়ুয়াদের সঙ্গে এক অনলাইন বৈঠকের আয়োজন করেছেন কর্তৃপক্ষ। গড়া হতে চলেছে তদন্ত কমিটি। ঠিক কী ঘটেছিল, তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবেন সদস্যেরা। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “বুধবার সমাবর্তন ছিল, তার পর দিন ক্রিসমাস এবং শুক্রবার সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি রয়েছে। তাই অনলাইন বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। তা ছাড়া তদন্ত কমিটি নিজের মতো করে কাজ করবে। রিপোর্ট অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।” আগামী ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলবেন রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্যরা।