Advertisement
E-Paper

পড়ুয়াদের মধ্যে বাড়ছে অপরাধ মনস্কতা, পরিস্থিতি সামলাতে কী পদক্ষেপ করছে শিক্ষামহল?

পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি পড়ুয়াদের মধ্যে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ তৈরি হওয়া প্রয়োজন, মত শিক্ষামহলের।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৫ ১৮:৪১
The shadow of crime has entered the minds of schoolchildren!

স্কুলপড়ুয়াদের মনের প্রবেশ করেছে অপরাধের ছায়া! গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ছোটবেলার ‘আড়ি-ভাব’-এর নিষ্পাপ বন্ধুত্বের দিনগুলো বড় রঙিন। কিন্তু সেই বন্ধুবেলায় দাগছোপ লাগছে হিংসা-প্রতিশোধের। কয়েকটা ঘটনা পর পর বললেই ছবিটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

১৯ অগস্ট রাজ্যের একটি সরকারি স্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্র ক্লাসে বসে দুষ্টুমি করছিল। তাকে ইতিহাসের শিক্ষক চড় মেরে শাসন করেন এবং লাস্ট বেঞ্চ বসার শাস্তি দেন। এর পর ওই ছাত্র প্রথমে প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ জানাতে যায়। তিনি উপস্থিত না থাকায় পিস্তল হাতে ওই শিক্ষককে ভয় দেখাতে চলে যায়। এক সিভিক ভলান্টিয়ারের তৎপরতায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। পরে পুলিশ ওই পিস্তল বাজেয়াপ্ত করে ছাত্রকে গ্রেফতার করে এবং জানায় যে তাতে কোনও গুলি ভরা ছিল না।

চলতি বছর ৫ মার্চ উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষার দিন পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রধানশিক্ষক-সহ পাঁচ শিক্ষক-শিক্ষিকা জখম হন পরীক্ষার্থীদের মারে। জানা যায় তল্লাশিতে বাধা দিলে শিক্ষকদের সঙ্গে বাগ্‌যুদ্ধে জড়ায় তারা, পরে তা মারামারি পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছয়।

উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যের ছবিটাও খানিক এমনই। গত ২০ অগস্ট গুজরাতের অহমদাবাদের একটি স্কুলে দশম শ্রেণির পড়ুয়ার সঙ্গে বিবাদ হওয়ায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র।

Several incidents of criminal tendencies in children are worrying the education community.

শিশু মনে অপরাধপ্রবণতার একাধিক ঘটনা ভাবাচ্ছে শিক্ষামহলকে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

১০ জুলাই, হরিয়ানার হিসার প্রদেশের একটি স্কুলের প্রিন্সিপলকে কুপিয়ে খুন করে ওই স্কুলেরই দ্বাদশ শ্রেণির দুই ছাত্র। ঘটনাচক্রে সে দিন ছিল গুরু পূর্ণিমা। জানা গিয়েছে, নিয়ম মেনে ছাত্রদের চুল ছেঁটে আসার কথা বলেছিলেন প্রিন্সিপাল। তাতে চটে যায় দুই ছাত্র।

গত ৪ জুলাই তামিলনাড়ুর ইরোডের একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রকে তারই সহপাঠীরা মিলে পিটিয়ে মেরে ফেলে। একটি মেয়ের সঙ্গে কথা বলাই ছিল তার ‘অপরাধ’।

কিন্তু কেন বাড়ছে শিশু মনে এই অপরাধপ্রবণতা?

কলকাতার যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্যের মতে, সংবাদপত্রে, সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন হিংসাত্মক, ঘৃণ্য ঘটনার কথা উঠে আসে। যা বেশিরভাগ সময়েই পড়ুয়াদের মনের উপযোগী হয় না। ফলে তাদের মধ্যে ছোট থেকেই হিংসাত্মক মনোভাব তৈরি হয়ে চলেছে।

শিল্পকলা বয়েজ় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস ঘোষ বলেন, “করোনা পরবর্তী সময়ে পড়ুয়াদের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ অনেকটাই বেড়েছে। এ ছাড়াও পরিবারের আর্থ-সামাজিক স্থিতি, অভিভাবকদের অতিরিক্ত সন্তান বাৎসল্য বা বলা যায় অন্ধস্নেহের কারণেও এই প্রবণতা বাড়ছে। পড়ুয়ারা স্কুলে এসেও অন্যায় করতে ভয় পাচ্ছে না।”

অঙ্কের শিক্ষক তন্ময় মুখোপাধ্যায় অবশ্য দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির উপরই এর দায়ভার চাপিয়েছেন। তাঁর সাফ বক্তব্য, “যে ভাবে আশেপাশের পরিবেশ বদলাচ্ছে, তেমন ভাবেই পড়ুয়ারা নিজেদের মনোভাব তৈরি করে চলেছে।”

অপরাধ করার প্রবণতা এতই প্রবল, যে শাস্তির তোয়াক্কাই করছে না অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী। এতে অভিভাবকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকদের একাংশ।

Teachers are considering counseling students.

পড়ুয়াদের নিয়ে কাউন্সেলিংয়ের কথা ভাবছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ছবি: সংগৃহীত।

এ নিয়ে রাজ্য কী ভাবছে?

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে নৈতিকতার পাঠ দিতে কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে, তা নিয়ে দফায় দফায় শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শিলিগুড়িতে প্রায় সাড়ে ৮০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় নতুন করে স্কুলপড়ুয়াদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি অনুযায়ী কেমন ব্যবহার করা উচিত, কী ভাবে আর পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলা দরকার, ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য কতটা— সবটাই নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছে পর্ষদ।

গুজরাতে অহমদাবাদের ঘটনার পর রাজ্যের পাঁচ লক্ষ পড়ুয়াকে নিয়ে শুরু হয়েছে বিশেষ কাউন্সেলিং পরিষেবা। প্রতিটি স্কুলের দু’জন শিক্ষককে কাউন্সেলর হিসাবে প্রশিক্ষণ দেবে সেই রাজ্যের সরকার। তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের পরবর্তী সময়ে নিয়মিত ভাবে কাউন্সেলিং করাবেন।

সিবিএসই (সেন্টাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন)-এর তরফে প্রতি বছরই একটি ‘প্যারেন্টিং ওয়ার্কশপ’ করানো হয়। চলতি বছরেও তা সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হতে চলেছে। ডিজিটাল দুনিয়ার ঘেরাটোপে থেকেও যাতে পড়ুয়া-শিক্ষক-অভিভাবকরা সুস্থ থাকতে পারেন, তারই পাঠ ওই কর্মশালায় দেওয়া হবে।

তবে, স্কুল স্তরে শিক্ষাদানের পাশাপাশি, পারিবারিক পরিবেশেও একই বিষয়ের সমন্বয় থাকা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন বলে মনে করেন বেথুন কলেজের উইমেন স্টাডিজ় সেন্টারের ডিরেক্টর এবং মনোবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নীলাঞ্জনা বাগচী। তাঁর কথায়, “স্কুলে যা শেখানো হচ্ছে, তার বিপরীত প্রতিফলন যদি বাড়িতে দেখা যায়, সে ক্ষেত্রে সেই ছাত্র বা ছাত্রী বিভ্রান্ত হতে পারে। তাই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকদেরও এই ধরনের কর্মসূচিতে শামিল করা প্রয়োজন রয়েছে।”

students mental health School Students Issue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy