Advertisement
০১ ডিসেম্বর ২০২৪
Education

শিক্ষকতাকে পেশা করতে চান? রইল খুঁটিনাটি সব তথ্য

বাবা-মা ছাড়াও একটি সন্তানকে তাঁর নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ এবং সুচেতনা গঠন করতে সাহায্য করেন শিক্ষকরা। পেশা হিসাবে শিক্ষকতাকে নির্বাচন করতে হলে কিছু বিষয় অবশ্যই রপ্ত করার প্রয়োজন।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:১৫
Share: Save:

“শিক্ষার উদ্দেশ্য হল কৌশল এবং বিশেষজ্ঞতার সঙ্গে ভাল মানুষ তৈরিকরা, এক মাত্র শিক্ষকরাই পারেন এই রকম মানুষ তৈরি করতে”- এপিজে আব্দুল কালাম

এক জন শিক্ষার্থীর জীবনে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। একটি ছাত্র বা ছাত্রীর ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতা নির্ভর করে এক জন প্রকৃত শিক্ষকের কর্মদক্ষতার উপরে। সমাজে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার-সহ সকল পেশাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, এই সকল পেশাতেইশিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থবহ ভূমিকা পালন করেন শিক্ষকরা। বাবা-মা ছাড়াও একটি সন্তানকে তাঁরনৈতিকতা, দায়িত্ববোধ এবং সুচেতনা গঠন করতে সাহায্য করেন শিক্ষকরা। পেশা হিসাবে শিক্ষকতাকে নির্বাচন করতে হলে কিছু বিষয় অবশ্যই রপ্ত করার প্রয়োজন। ধৈর্য, গভীর বিষয়জ্ঞান এবং অসাধারণ জ্ঞাপন-দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।

ভারতে শিক্ষকতাকে পেশা করতে চাইলে কী কী প্রয়োজন, তা বিস্তারিত আলোচনা করা হল: শিক্ষকতার বিভিন্ন স্তর:

আপনি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিদ্যালয় না বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চান, সবার আগে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। তাই শিক্ষকতাকে পেশা করার আগে স্তর নির্ধারণ করা দরকার। নীচে ভিন্ন স্তরের বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

প্রি-প্রাইমারি স্কুল টিচার:

পরিবারের পরে সবথেকে গুরুদায়িত্ব পালন করেন একজন প্রি-প্রাইমারি স্কুল টিচার। তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের দায়িত্বভার থাকে তাঁদেরউপর। শিশুদের বর্ণ পরিচয় শেখানো, সমাজের সঙ্গে পরিচিত করানো থেকে কী ভাবে একটি শিশু নিজের ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলবে, সেই সব কিছুই এক জন প্রি-প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের উপর নির্ভর করে।

প্রাইমারি স্কুল টিচার:

প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর যে সকল শিশুর বয়স ছয় থেকে বারো বছর, তাদের পড়াশোনার দায়িত্ব থাকে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের উপর। মূলত, শিশুদের এই বয়সে সঠিক এবং উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করাই এক জন আদর্শ প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের দায়িত্ব, যাতে শিশুরা বড় হয়েও সেই শিক্ষা বহন করে নিয়ে যেতে পারে।

সেকেন্ডারি স্কুল টিচার:

ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার দায়িত্ব থাকে এক জন স্নাতক পাশ করা সেকেন্ডারি স্কুল টিচারের। মূলত, এই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জীবন সম্পর্কে বোঝা, তাদের কোন বিষয়ে সব থেকে বেশি আগ্রহ রয়েছে, কী সমস্যার মধ্যে রয়েছে সেগুলি পর্যালোচনা করা, পাশাপাশি, তাঁদের আগ্রহ এবং আকাঙ্ক্ষাকে কী ভাবে ভবিষ্যৎ জীবনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে সেই বিষয়গুলিও দেখাশোনা করা এক জন সেকেন্ডারি স্কুল টিচারের দায়িত্ব।

সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল টিচার:

স্নাতকোত্তর ও বিশেষ বিষয়ের উপর গভীর জ্ঞান রয়েছে যাঁদের, তাঁরা সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল টিচার হিসাবে নিজের পেশা নির্বাচন করতে পারবেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশেষ বিষয়ের উপর পড়াশোনা করানো এবং তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ কোন বিষয়ের উপর গড়ে তুলতে পারবে সেই বিষয়ে সাহায্য করাও একজন সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল টিচারের দায়িত্ব।

স্পেশাল এডুকেটর:

যারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, তাদেরকে সঠিক শিক্ষা প্রেরণ করাই এক জন স্পেশাল এডুকেটরের প্রধান কাজ। এই স্তরে শিক্ষক হওয়ার জন্য প্রয়োজন বিশেষ প্রশিক্ষণের, যাতে শিক্ষকরা সঠিক ভাবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন বুঝতে পারেন এবং সঠিক ভাবে তাঁর মূল্যায়ন করতে পারেন।

লেকচারার/ প্রফেসর:

সাধারণত, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক বা অধ্যাপক হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মরত হন এক জন প্রফেসর। এই স্তরে কাজ করার জন্য প্রয়োজন বিশেষ বিষয়ের উপর গভীর জ্ঞান। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন বিশেষ কোনও বিষয়ের উপর নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য। সে ক্ষেত্রে এক জন অধ্যাপকের সঠিক বিষয়ে জ্ঞানের গভীরতা থাকা বাঞ্ছনীয়।

শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা:

আপনি কোন স্তরে শিক্ষকতা করতে চাইছেন, সেটা নির্বাচন করা সব থেকে প্রয়োজনীয়। ভারতে শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে নিতে চাইলে প্রয়োজন উপযুক্ত ডিগ্রির। স্নাতক পড়ার সময় কী বিষয় নিয়ে পড়ছেন, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে এখন ভারতে শিক্ষক হতে চাইলে বিএড এবং উচ্চ স্তরের ক্ষেত্রে এমএড থাকা বাঞ্ছনীয়। রাজ্য-কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় বা কলেজের শিক্ষক হওয়ার জন্য প্রথমে একজন প্রার্থীকে অবশ্যই সেট, টেট, নেট-সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য স্তরের শিক্ষণ প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করা বাধ্যতামূলক।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

শিক্ষক হওয়ার জন্য কী কী কোর্স রয়ছে:

এক জন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা। ভারতে প্রি-প্রাইমারি এবং প্রাইমারি বিদ্যালয় শিক্ষকতা করার ন্যূনতম যোগ্যাতা ব্যাচেলর অফ এডুকেশন। নীচে বিস্তারিত কোর্সগুলি আলোচনা করা হল:

ব্যাচেলর অফ এডুকেশন:

উচ্চমধ্যমিক বা গ্র্যাজুয়েশন সম্পূর্ণ হওয়ার পর এই কোর্সে নাম নথিভুক্ত করা যায়। উচ্চমধ্যমিক এবং গ্র্যাজুয়েশনে নূন্যতম ৫০ শতাংশ নম্বর থাকা প্রয়োজন। নাম নথিভুক্ত করার পর এই কোর্সের প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করা বাধ্যতামূলক।

বিএ বিএড:

এই কোর্স দ্য ব্যাচেলর অফ আর্টস (বিএ) এবং ব্যাচেলর অফ এডুকেশন (বিএড) সমন্বিত। এই কোর্সের জন্য ইংরেজি ভাষার দক্ষতা থাকা খুবই প্রয়োজন। কোর্সটির সময়সীমা চার বছরের। পরীক্ষার্থীরা তাদের পছন্দে এই কোর্স নির্বাচন করে নিতে পারে। বি এসসি বিএড বিএ বিএড এর মতনই ব্যাচেলর অফ সায়েন্স (বিএসি) এবং ব্যাচেলর অফ এডুকেশন কোর্স। এ ক্ষেত্রে সায়েন্স সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই কোর্সের মেয়াদও চার বছরের। একই ভাবে পরীক্ষার্থীরা নিজের পছন্দ অনুযায়ী এই কোর্স নির্বাচন করে নিতে পারে। ডিপ্লোমা ইন এলমেটারি এডুকেশন প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য এই ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন (ডিইআইইডি)। প্রাইমারি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কিভাবে দেওয়া হয় সেই বিষয়ই পুঙ্খানুপঙ্খ ভাবে শেখানো হয় এই কোর্সে। এই কোর্সের মেয়াদ ২ বছর। ১০+২ পরীক্ষায় নূন্যতম ৫০ শতাংশ নম্বর থাকা প্রয়োজন এই কোর্সে নাম নথিভুক্ত করার জন্য।

মাস্টার অফ এডুকেশন:

এই কোর্সটির মেয়াদ ২ বছরের। এই কোর্সের মাধ্যমে শেখানো হয় যে, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কী ভাবে দেওয়া হবে, কী ভাবে এক জন শিক্ষক তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন এবং শিক্ষকদের ক্ষমতা ও শিক্ষণ পদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত। এই কোর্সের মধ্য দিয়ে শুধু মাত্র শিক্ষণ পদ্ধতি বা শিক্ষা বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয় তা নয়, এক জন শিক্ষাবিদ নিজের শিক্ষার বিষয়কে কী ভাবে আরও উন্নত করতে পারবেন এবং নিজের গবেষণার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবেন, সেই বিষয়েও পর্যালোচনা করা হয়। প্রার্থীর বিএ বিএড, বি এসসি বিএড অথবা ডিইআই বিএড বা বিইআইএড-এ ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ নম্বর থাকা প্রয়োজন এই কোর্সের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসার জন্য।

এমএ এডুকেশন:

এম এ এডুকেশনে মূলত নজর দেওয়া হয় কী ভাবে এক জন শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে পারবেন। এই কোর্সের ডিগ্রিকেস্পেশালাইড ডিগ্রি হিসাবে ধরা হয়। এই কোর্সের জন্য বিশেষ কোনও বিষয়ের উপর ব্যচেলর ডিগ্রি থাকা আবশ্যক। ভারতের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠান এই কোর্সের প্রবেশিকা পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে।

শিক্ষক হওয়ার জন্য কী কী প্রবেশিকা পরীক্ষা রয়েছে:

কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রবেশিকা পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে। যে পরীক্ষাগুলি পাশ করলে এক জন প্রার্থী শিক্ষক হতে পারবেন, সেগুলি নীচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট (টেট):

এই প্রবেশিকা পরীক্ষা রাজ্য এবং কেন্দ্র উভয়ের তরফ থেকেই আয়োজন করা হয়। ভারতের সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য টেট পাশ করা প্রয়োজন। টেট পরীক্ষায় বসার জন্য প্রার্থীকে বিটিসি (ডিইআইএড), বিএড, বিইআইএড-এর পেশাগত যোগ্যাতা থাকতে হবে। পাশ করার জন্য ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর থাকা বাঞ্ছনীয়।

সেন্ট্রাল টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট (সিটেট):

কেন্দ্র সরকারের অন্তর্ভুক্ত যে বিদ্যালয়গুলি রয়েছে এবং সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসসি) বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য সিটেটের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসতে হয়। শুধু মাত্র যে সকল বিদ্যালয় ইউ টি স্বীকৃত, তারাই সিটেট পাশ করা প্রার্থীদের শিক্ষকতার করার সুযোগ দেয়। এই পরীক্ষা সম্পূর্ণ ভাবে সিবিটি বা কম্পিটারের উপর নির্ভর করে হয়। বছরে দু’বার পরীক্ষা নেওয়া হয়। এক বার সিটেট পাশ করে যাওয়ার পর কেন্দ্র সরকারের অন্তর্ভুক্ত কেভিএস, এনভিএস এর মতন বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকতা শুরু করতে পারেন প্রার্থীরা। এ ছাড়াও, অনেক বেসরকারি বিদ্যালয়ও সিটেট পাশ করা প্রার্থীদের শিক্ষকতার করার সুযোগ দেয়।

স্টেট টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট (সিটেট):

রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। প্রার্থীরা যাতে নিজের রাজ্যে শিক্ষকতা করতে পারেন, রাজ্য সরকারের অন্তর্ভুক্ত বিদ্যালয়গুলিতে তার জন্য এই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। দু’টি ভাগে পরীক্ষা নেওয়া হয়। পেপার এক এবং পেপার দু’ই। যে সকল প্রার্থী নবম এবং দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পড়াতে চান তাঁদের জন্য পেপার এক। এবং যারা একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পড়াতে চান তাঁদের জন্য পেপার দু’ই। যে রাজ্য থেকে প্রার্থী এই পরীক্ষায় বসবেন তাকে অবশ্যই সেই রাজ্যের বসবাসকারী হতে হবে।

ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট (নেট):

এখন ইউজিসি নেট ইউজিসির পক্ষ থেকে সিবিএসসি দ্বারা পরিচালিত হয়। ভারতে যে বিশ্ববিদ্যালয় গুলি রয়েছে সেখানে অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ (জিআরএফ) বা মার্লি প্রফেসর হিসাবে শিক্ষকতা করার জন্য এই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। বছরে দু’বার পরীক্ষা নেওয়া হয় দু’টি ভাগে। পেপার এক এবং পেপার দু’ই। এবং এই দুটি পেপারেই পরীক্ষা দিতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা করার জন্য।

এক জন শিক্ষক মানেই তিনি এক জন ভাল পরামর্শদাতা, বন্ধু, অভিভাবক। যার গুরুত্ব কখনোই শেষ হয় না। জীবনে চলার প্রতি মুহূর্তে এক জন ভাল শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যদি আপনি মনে করেন আপনার মধ্যে এই দক্ষতা রয়েছে, তা হলে অবশ্যই নিজেকে এক জন আদর্শ শিক্ষক তৈরি করার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিতে পারেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy