বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে শ্রীনগরে বন্যার এএফপির তোলা ছবি।
জম্মু-কাশ্মীরে রবিবার ফের বৃষ্টি শুরু হওয়ায় প্রশাসন ও বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্য আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির মাত্রাও বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে দফতর। তার সঙ্গে দোসর হয়েছে বজ্র-বিদ্যুত্। গত তিন দিন ধরে আকাশ-ভাঙা বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল। ফলে উদ্ধার কাজের গতিও বেড়েছিল। এত দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত এলাকাগুলিতে জলস্তর বাড়ায় উদ্ধারকাজে প্রচণ্ড বেগ পেতে হয় সেনাবাহিনীকে। দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করেও ভূস্বর্গের দু’লক্ষ মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা। জম্মুর অবস্থা বেশ কিছুটা উন্নতি হলেও কাশ্মীরের ছবিটা তেমন বদলায়নি এ ক’দিনে। উত্তর কাশ্মীরের জলস্তর বাড়তে থাকায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। মধ্য কাশ্মীরে ঝিলম বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ফলে সেখানেও পরিস্থিতি নতুন করে অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের হিসাব অনুযায়ী বন্যায় জম্মুতে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১২৯ জনের। অন্য দিকে, কাশ্মীরে প্রাণ হারিয়েছেন ৩০-৩৫ জন। এখনও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ জলবন্দি হয়ে রয়েছেন। তার উপর এ দিন সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় উদ্ধারকারী দলকে আরও কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে প্রশাসনিক মহলের ধারণা।
গত তিন দিন বৃষ্টি না হওয়ায় জম্মু ও কাশ্মীরের বেশ কিছু জায়গায় জলস্তর নামতে শুরু করায় উদ্ধারকাজ চালোনোর ক্ষেত্রে প্রশাসন কিছুটা স্বস্তির আশ্বাস পেয়েছিল। কিন্তু প্লাবিত এলাকাগুলিতে জলবাহিত রোগের সংক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় তাদের কপালে নতুন করে চিন্তার ভাঁজ ফেলতে শুরু করেছে।
এ দিন জম্মু-কাশ্মীর পরিদর্শনে যান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। রাজ্যের এ রকম কঠিন পরিস্থতিতে সংক্রমণ ঠেকাতে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা শনিবার বলেন, “ আমাদের এখন প্রধান কাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্যাদুর্গত এলাকাগুলিতে ওষুধ ও পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। সংক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে বন্যায় বিধ্বস্ত জম্মু-কাশ্মীর। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেনা, বায়ুসেনা, নৌসেনা ও দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে গত বারো দিন ধরে।
রাজ্যের ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের হিসাব অনুযায়ী বন্যায় এখনও পর্যন্ত পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। দফতরের সচিব বিনোদ কল জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দক্ষিণ কাশ্মীরের চার জেলা— অনন্তনাগ, কুলগাম, সোপিয়ান ও পুলওয়ামা। ঝিলমের গ্রাসে শ্রীনগরের ৬০ শতাংশ সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পাঁচটি বড় সরকারি হাসপাতাল, ৫০টি ছোট-বড় সেতু, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। তবে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতির হিসাবটা অনেক বেশি হবে বলে ধারণা বিনোদবাবুর। প্লাবিত এলাকাগুলি থেকে জল নামার পর সেই ক্ষতির হিসাবও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন জানান, এ রাজ্যের ২১ জন পর্যটককে বায়ুসেনার বিমানে পহেলগাঁও থেকে উদ্ধার করে শ্রীনগরে নিয়ে আসা হয়েছে। এঁদের মধ্যে কয়েক জনকে বিমানে রাজ্যের উদ্দেশে রওনা করিয়ে দেওয়া হবে। বাকিদের ট্রেনে ফেরানো হবে। তিনি আরও জানান, জম্মু-কাশ্মীরের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এ রাজ্যের নিখোঁজ পর্যটকদের ব্যাপারে নিরন্তর যোগাযোগ রাখা হচ্ছে দিল্লির রেসিডেন্স কমিশনারের মাধ্যামে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy