নাজাফ শহরে বিদ্রোহীদের মোকাবিলায় প্রস্তুত হচ্ছে ইরাকি সেনা। ছবি: রয়টার্স।
ইরাকে খোঁজ মিলছে না ৪০ জন ভারতীয় শ্রমিকের। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, তাঁরা অপহৃত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মসুল শহরে গৃহনির্মাণের শ্রমিক। বুধবার বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন জানান, ৪০ জন ভারতীয় শ্রমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ইরাকে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীরা এঁদের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এর আগে তিকরিত শহরে ৪৬ জন ভারতীয়ের আটকে পড়ার খবর এসেছিল। এখনও তাঁদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। পুরো বিষয়টি দেখভালের জন্য পোড়খাওয়া কূটনীতিবিদ সুরেশ রেড্ডিকে ইরাকে পাঠানো হচ্ছে বলে সৈয়দ আকবরউদ্দিন জানান।
বুধবার ইরাকে বিবদমান শিয়া, সুন্নি এবং কুর্দ নেতারা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকের শেষে বিশিষ্ট শিয়া নেতা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম আল-জাফরি যৌথ বিবৃতি পাঠ করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদীরা ইরাকের কোনও জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নয়। ইরাকের সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকারের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদী শক্তিগুলিরও তীব্র নিন্দা করা হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মালিকি ছাড়াও সুন্নি নেতা ও ইরাকি সংসদের স্পিকার উসামা আল-নুজাইফি-র মতো নেতারাও অংশ নেন। যদিও বৈঠকের আগেই প্রধানমন্ত্রী মালিকি তাঁর বিষোদ্গার বজায় রাখেন। এ বার ইরাকের গণহত্যার জন্য তিনি সুন্নি প্রধান সৌদি আরবকে দায়ী করেন। যদিও রিয়াধ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আগে তিনি সুন্নি রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনার কথাও বাতিল করে দিয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকার ক্রমাগত চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী মালিকি-র এই পদক্ষেপ। মঙ্গলবারই ইরাকে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত মার্কিন কূটনীতিবিদ ব্রেট ম্যাকগ্রুক এবং ইরাকে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত স্টিফেন বিক্রফ্ট-এর সঙ্গে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মালিকির বৈঠক হয়।
যদিও এই বিবৃতির পরেও ইরাকে সংঘর্ষ বিরতির কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। ‘ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ত’-এর (আইএসআইএল) বিদ্রোহীদের নতুন শহর দখলের চেষ্টার পাশাপাশি ইরাকি সেনা বিদ্রোহীদের দখলে থাকা শহরগুলি পুনরুদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। তাল আফার-এ ইরাকি সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল আবু আল-ওয়ালিদ এই অঞ্চলের অধিকাংশ জায়গার দখল ফিরে পাওয়ার দাবি করেছেন। যদিও ওই অঞ্চলে এখনও বিদ্রোহীদের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। বুধবার বিদ্রোহীরা কিরকুকের কাছে মুলতাকা অঞ্চলের একটি পুলিশ ফাঁড়ি দখলের চেষ্টা করলেও কুর্দ পেশমেরগা যোদ্ধারা তাঁদের হঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।
সালাহেদ্দিন প্রদেশের পুলিশ প্রধান জেনারেল হামাদ আল-নামিস সামারা গিয়েছেন। ইরাকি সেনা এখান থেকে তিকরিত পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে বলে খবর। ইরাকি সেনা এখানে বাগদাদ-সামার হাইওয়ের দখল ফিরে পেয়েছে বলে ইরাকি প্রশাসন দাবি করেছে। বিদ্রোহীরা আজও বাকুবা দখলের চেষ্টা করে। তারা বাকুবার মাফরাক শহরে একটি পুলিশ ফাঁড়ি দখলেরও চেষ্টা চালায়। এই সময়ে ফাঁড়িতে আটক ৪১ জন বন্দির মৃত্যু হয় বলে ইরাকি প্রশাসন জানিয়েছে। যদিও আইএসআইএল-এর দাবি, ইরাকি সেনা এঁদের হত্যা করেছে। এ দিকে বাগদাদে শিয়া প্রধান অঞ্চল মারিদি বাজারে গাড়িবোমা বিস্ফোরণে আট জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় ২৩ জন আহত হয়েছেন। এই দু’টি ঘটনায় জাতিবিদ্বেষ আরও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার ইরাকি সেনা বাজি তৈল শোধনাগার রক্ষা করতে পারলেও এ দিন নিরাপত্তার স্বার্থে শোধনাগারটির উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এতে উত্তর ও পশ্চিম ইরাকে তেল সরবরাহে তীব্র সমস্যা হবে বলে আশঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy