নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম রেল বাজেটে প্রাপ্তির ঝুলি কার্যত শূন্যই রইল পশ্চিমবঙ্গের। রেল বাজেট নিয়ে আপামর বাঙালির প্রত্যাশা ছিল রেলমন্ত্রীর কাছে। দেশ জুড়ে রেলের উন্নয়ন, যাত্রী সুরক্ষা, নতুন ট্রেন চালু করার মতো বিষয়গুলি বাজেটে থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ কিন্তু পারতপক্ষে বঞ্চিতই। প্রাথমিক ভাবে হাওড়া-বেলদা মেমু সম্প্রসারণ ও শালিমার-চেন্নাই প্রিমিয়াম ট্রেন চালু করার কথা বলা হয়েছে রেল বাজেটে।
তবে সামগ্রিক ভাবে রেলের উন্নয়ন নিয়েই জোর দেওয়া হয়েছে বাজেটে। রেলকে ‘অচলাবস্থা’ থেকে তুলে আনতে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে এ দিন রেলমন্ত্রী জানান। যার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে বাজেটের আগে রেলের ভাড়া ১৪.২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। এ দিনের বাজেটে ভাড়া বাড়ানোর কথা না বললেও রেলের পরিকাঠামো উন্নয়নে বেসরকারি বিনিয়োগ ও পিপিপি মডেলকে মূল হাতিয়ার করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষেই সায় দিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
রেলমন্ত্রী যা বললেন
সংসদে বাজেট পেশ করার আগে
রেলমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।
• ভারতীয় নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণ করাই আমাদের লক্ষ্য।
• বিশ্বের বৃহত্তম পণ্য পরিবহণ হিসাবে রেলকে গড়ে তুলতে হবে।
• ভারতকে সচল করতে রেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
• যাত্রী সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোনও আপস করা হবে না।
• নতুন প্রকল্পের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন।
• পিছিয়ে পড়ে এলাকায় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বাড়াতে হবে।
• অসম্পূর্ণ প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
• নতুন ট্রেন ঘোষণা করে প্রশংসা পাওয়া একমাত্র লক্ষ্য নয়।
• আয় বাড়াতে রেলে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রয়োজন।
• রেলের ক্ষতি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের প্রয়োজন।
• রেলে বিদেশি বিনিয়োগ চালু করা হবে।
• রেলের হীরক চতুর্ভুজ প্রকল্প রূপায়নে ৯ লক্ষ কোটি টাকা প্রয়োজন।
• হাইস্পিড ট্রেনের জন্য প্রয়োজন পিপিডি মডেল।
• রেলের পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে।
• রেলের আয় লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৪২০০ কোটি টাকা কম।
• যাত্রিভাড়া থেকে আয় ৪৪ হাজার কোটি টাকা।
• শালিমার থেকে চেন্নাই প্রিমিয়াম এক্সপ্রেস চালু করা হবে।
• স্বামী বিবেকানন্দের নামে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা।
• বেঙ্গালুরুতে শহরতলির ট্রেন চালানো হবে।
• উত্তরাখণ্ডে ৪টি ধামে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা।
• ১১টি ট্রেনের যাত্রাপথ সম্প্রসারিত হবে।
• ৫টি জনসাধারণ ও ৫টি প্রিমিয়াম, ৬টি এসি, ২৭টি এক্সপ্রেস, ৮টি প্যাসেঞ্জার, ৫টি ডেমু, ২টি মেমু ট্রেন চালু করা হবে।
• মোট ৯টি রুটে হাইস্পিড ট্রেন চলবে।
• বুলেট ট্রেনের জন্য প্রয়োজন ৬০ হাজার কোটি টাকা।
• হাইস্পিড ট্রেনের গতি ১৬০/২০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
• তীর্থস্থানগুলির জন্য বিশেষ ট্রেন।
• দিল্লি-চন্ডীগড়, দিল্লি-আগরা, দিল্লি-কানপুর, দিল্লি-পাঠানকোট, নাগপুর-বিলাসপুর, কানপুর-নাগপুর, নহীশূর-বেঙ্গালুরু, গোয়া-মুম্বই, চেন্নাই-হায়দরাবাদ, মুম্বই-হায়দরাবাদ—রুটে হাইস্পিড ট্রেন।
• হাওড়া-বেলদা মেমু সম্প্রসারণ।
• রেলে মিলবে পরিশ্রুত পানীয় জল।
• সব ক’টি স্টেশনে চলমান সিঁড়ি, ওভারব্রিজ, লিফ্ট ও জলের ব্যবস্থা করা হবে।
• যাত্রীদের সময় বাঁচাতে স্বয়ংক্রিয় টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে স্টেশনগুলিতে।
• প্ল্যাটফর্ম টিকিট মিলবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
• সমস্ত বড় স্টেশনগুলিতে ফুড কোর্ট গড়ে তোলা হবে।
• পোস্ট অফিস থেকে ট্রেনের টিকিট বিক্রি হবে।
• সমস্ত স্টেশনে রিটায়ারিং ঘরের ব্যবস্থা।
• আরও বেশি ট্রেনে বায়ো-টয়লেটের ব্যবস্থা।
• মহিলা কামরায় মহিলা আরপিএফ-এর ব্যবস্থা।
• ৫০টি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব দেওয়া হবে পেশাদারি সংস্থাকে।
• একসঙ্গে ১ লক্ষ ২০ হাজার লোক ই-টিকিট পরিষেবা পাবেন।
• দূরপাল্লার ট্রেনে যাত্রীদের ঘুম ভাঙানোর জন্য অ্যালার্মের ব্যবস্থা।
• বিশেষ কয়েকটি ট্রেনে অফিস অন হুইলস-অর্থাত্ ট্রেনে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যেমে অফিসের কাজ করতে পারবেন যাত্রীরা।
• রেলের নিরাপত্তা বাড়াতে ৪ হাজার মহিলা আরপিএফের ছাড়াও ৭ হাজার আরপিএফ নিয়োগ করা হবে।
• বিভিন্ন ট্রেন ও স্টেশনে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
• ভাড়ার পুনর্বিন্যাস হওয়া সত্ত্বেও রেলের আয় বাড়েনি।
• আন্তর্জাতিক মানের ১০টি স্টেশন।
• ১৮টি নতুন লাইনের সমীক্ষা করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে—ঝাড়গ্রাম-বান্দোয়ান, কেদার-বদ্রি।
• গেজ পরিবর্তন, তৃতীয় ও চতুর্থ রেললাইনের জন্য ১০টি সমীক্ষা।
• পিপিপি মডেলে বিমানবন্দরের মতো স্টেশন তৈরি করা হবে।
• উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য ৫৪ শতাংশ অতিরিক্ত বরাদ্দ।
• বেসরকারি উদ্যোগে বন্দরগুলিকে রেলের মাধ্যমে যোগাযোগের উদ্যোগ।
• টেকনিক্যাল ও নন-টেকনিক্যাল বিষয়ে রেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রস্তাব।
• পর্যটনকে উত্সাহিত করতে অঞ্চলভিত্তিক সার্কিট চিহ্নিত করা হবে।
• দুর্ঘটনা রুখতে স্বয়ংক্রিয় দরজাযুক্ত ট্রেনের প্রস্তাব।
• ব্যাটারিচালিত গাড়ি রাখা হবে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে।
প্রতিক্রিয়ায় রেল বাজেট
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
এই রেল বাজেটে স্বচ্ছতা ও যাত্রী নিরাপত্তার উপর
বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।কোনও বিশেষ রাজ্যকে
গুরুত্ব না-দিয়ে দেশের উন্নতির দিকেই লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী
কেন্দ্রের নয়া সরকারের হাতে বাংলা বঞ্চিত এবং অপমানিত।
রাহুল গাঁধী, কংগ্রেসের সহ-সভাপতি
এই রেল বাজেট দিশাহীন এবং হতাশাজনক। দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে।
কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়ার পক্ষে এই বাজেটের সমস্ত প্রতিশ্রুতি পালন করা সম্ভব হবে না।
মণীশ তিওয়ারি
কংগ্রেস দলনেতা
নিরাশাজনক।
এটি রেল বাজেট নয়।
রেলের বেসরকারিকরণ।
অধীররঞ্জন চৌধুরী
কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী
এটি শুধুমাত্র পিপিপি, এফডিআই
এবং বেসরকারিকরণের বাজেট।
সাধারণ যাত্রীদের ও রেলের ক্ষেত্রে
বিপজ্জনক সময় আসছে।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ
এই রেল বাজেটে নতুন
ভাবনার অভাব রয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
রেল বাজেট দ্বারা উদ্বুদ্ধ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy