Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভূস্বর্গে বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেই ভূমিধসে মৃত ৭, নিখোঁজ প্রায় ৩০

গত ছয় দশকে বন্যার এমন চেহারা দেখেনি কাশ্মীর উপত্যকা। ভূস্বর্গ সত্যিই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। গত বছরের উত্তরাখণ্ডে ভয়ানক বিপর্যয়ের আতঙ্ক লেগে রয়েছে গোটা উপত্যকার চোখেমুখে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনা, বায়ুসেনা, নৌসেনা, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে। দিনরাত এক করে চলছে উদ্ধার এবং ত্রাণের কাজ।

হেলিকপ্টার থেকে তোলা তাউই নদীর উপর ভেঙে পড়া সেতু। ছবি: রয়টার্স

হেলিকপ্টার থেকে তোলা তাউই নদীর উপর ভেঙে পড়া সেতু। ছবি: রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৬:০১
Share: Save:

গত ছয় দশকে বন্যার এমন চেহারা দেখেনি কাশ্মীর উপত্যকা। ভূস্বর্গ সত্যিই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। গত বছরের উত্তরাখণ্ডে ভয়ানক বিপর্যয়ের আতঙ্ক লেগে রয়েছে গোটা উপত্যকার চোখেমুখে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনা, বায়ুসেনা, নৌসেনা, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে। দিনরাত এক করে চলছে উদ্ধার এবং ত্রাণের কাজ। বৃষ্টির পরিমাণ কমায় জলস্তর নেমেছে বটে, কিন্তু তাতে উদ্ধার কাজে তেমন কোনও সুরাহা হয়নি বলে সেনার দাবি। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, মঙ্গলবার হাল্কা থেকে ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে উপত্যকায়। বেশ কয়েক জায়গায় সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয় বলে সূত্রের খবর।

এরই মধ্যে এ দিন সকালে প্রবল বৃষ্টির কারণে উধমপুরের কাছে পাঞ্চেরিতে ভূমিধস নামে। ধসে ধূলিসাত্ হয়ে গিয়েছে প্রায় ২৫টি বাড়ি। ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় ৭টি দেহ। সেনা এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সেখানে উদ্ধারকাজ চালায়। এই ঘটনায় এ দিন দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন নিঁখোজ বলে সেনা সূত্রে খবর। রাজ্য পুলিশের ডিআইজি গরিব দাস বলেন, “৭ জনের দেহ-সহ এক ব্যক্তির দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। ধসে যাঁরা আটকে পড়েছেন, তাঁদের সন্ধানে উদ্ধারকাজ চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।”

জম্মুর বাকি অংশের পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে সেনার দাবি। সেই সব জায়গায় ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর কাজকেই আপাতত সেনা অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সেনা সূত্রে খবর, গোটা উপত্যকা জুড়ে উদ্ধার এবং ত্রাণ কাজ চালানো হচ্ছে। কাজে আরও গতি আনতে বেশি সংখ্যক হেলিকপ্টার এবং নৌকা ব্যবহার করা হচ্ছে বলে তাদের দাবি। লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুব্রত সাহা বলেন, “সোমবার রাত ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দুর্গত এলাকা থেকে ৯৯৬ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।” তিনি জানান, উপত্যকার কিছু এলাকায় আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। সেই সমস্ত জায়গায় হেলিকপ্টারের সাহায্যে উদ্ধারকাজের গতি বাড়ানো হবে। উদ্ধারের কাজে এত দিন বায়ুসেনার হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছিল। এ দিন থেকে পবন হংসের হেলিকপ্টারও উদ্ধারকাজে ব্যবহার করা হয়। এয়ার ইন্ডিয়ার দু’টি বিশেষ বিমান উদ্ধারকাজের জন্য সব সময় প্রস্তুত রয়েছে বলে এ দিন জানিয়েছেন সংস্থার সিএমডি রোহিত নন্দন।

এ দিন বন্যা বিধ্বস্ত উত্তর কাশ্মীর থেকে ৭ জন বিদেশি পর্যটককে উদ্ধার করেন সেনা ও বায়ু সেনার জওয়ানরা। তাঁদের মধ্যে এক জন মার্কিন পর্যটকও আছেন। উদ্ধারের পর তাঁকে শ্রীনগর বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। সেনা সূত্রে খবর, ওই পর্যটককে দিল্লি উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। উত্তর কাশ্মীর থেকে এ দিন ৬ জন পাক নাগরিককেও উদ্ধার করা হয়। সেনাবাহিনীর জওয়ানরা তাঁদের উদ্ধার করার পর সাফের এলাকায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। ওই পাকিস্তানি নাগরিকরা বৈধ অনুমতি নিয়েই কাশ্মীর ঘুরতে এসেছিলেন বসে সূত্রের খবর।

রাজ্যের বহু পর্যটক এখন কাশ্মীরে আটকে রয়েছেন। তাঁদের সবিস্তার খোঁজখবর জানাতে এ দিন রাজ্য সরকারের কাছে বিশেষ সেল খোলার দাবি জানিয়েছেন বহরমপুরের সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। পাশাপাশি তিনি জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকায় সেনাবাহিনীকে বিশেষ তত্পরতার সঙ্গে উদ্ধার ও ত্রাণকাজ চালানোর আবেদন জানিয়েছেন।

গত কয়েক দিনের বন্যা পরিস্থিতিতে গোটা কাশ্মীর উপত্যকায় ভেসে গিয়েছে শহর থেকে গ্রাম— সর্বত্র। ঘরছাড়া হয়েছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। বন্ধ হয়ে গিয়েছে টেলিফোন ও বিদ্যুৎ পরিষেবা। বেশ কয়েকটি সেতুও ভেঙে গিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। সোমবার রাতভর জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকা থেকে প্রচুর দুর্গত মানুষকে উদ্ধার করেছেন সেনা ও বায়ুসেনার কর্মীরা। ১৬টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। রয়েছেন চিকিত্সকদের ৬৫টি দল। সেনা চিকিত্সক জগদীশ সিংহ জানিয়েছেন, মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলিতে প্রতি দিন প্রায় ২৩০ থেকে ৩০০ জনের চিকিত্সা করা হচ্ছে। অসুস্থ ব্যক্তিদের স্থানান্তরিত করার প্রয়োজনে রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা। ক্যাম্পগুলিতে শল্য চিকিত্সকেরাও আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। জেলা হাসপাতালগুলির পাশাপাশি এ কাজে হাত লাগিয়েছে অনেক অসরকারি সংগঠনও।


ত্রাণ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হেলিকপ্টারে। ছবি: রয়টার্স।

অন্য দিকে, উদ্ধার এবং ত্রাণের কাজ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর তরফে লেফটেন্যান্ট চেতন বলেছেন, “দিনে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বার নৌকা করে দুর্গতদের উদ্ধার করা হচ্ছে। প্রত্যেক বারে নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে প্রায় ১০-১৫ জনকে।” ত্রাণসামগ্রী হেলিকপ্টারের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে দুর্গত এলাকাগুলিতে। এরই মধ্যে বৈষ্ণোদেবীর উদ্দেশে ফের যাত্রা শুরু করেছেন প্রায় ২৫ হাজার পূণ্যার্থী।

বন্যার কারণে বিএসএনএল-সহ অন্য টেলিকম সংস্থাগুলির পরিষেবা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে উপত্যকা জুড়ে। এ দিন সেনা ও বায়ু সেনার সাহায্য নিয়ে যুদ্ধকালীন তত্পরতার সঙ্গে বিএসএনএল গোটা রাজ্যে স্যাটেলাইটের উপর নির্ভর করে মোবাইল পরিষেবা চালু করার কাজ চালায়।

জম্মু-কাশ্মীরের এমন বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে পাশে দাঁড়িয়েছে প্রতিবেশী রাজ্য উত্তরাখণ্ড। গত বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ওমরের উপত্যকায়। ১০ কোটি টাকা অার্থিক সাহায্যের পাশাপাশি উদ্ধারের কাজে পাঠানো হয়েছে ৫০টি রিভার র‌্যাফ্ট। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যসচিব সুভাষ কুমার জানিয়েছেন, আরও ৩০টি রিভার র‌্যাফ্ট পাঠানো হবে। এ ছাড়া জলমগ্ন এলাকা থেকে জল সরাতে সাব-মার্সিবল পাম্পও পাঠানো হচ্ছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি তাঁর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা জম্মু-কাশ্মীর সরকারকে পাঠিয়েছেন। সঙ্গে শুকনো খাবার এবং উদ্ধারের কাজে ব্যবহারের জন্য বেশ কয়েকটি নৌকাও পাঠাচ্ছে বিহার সরকার। ওড়িশা সরকারও ত্রাণের কাজে জম্মু-কাশ্মীরের পাশে দাঁড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাঠানো হয়েছে ৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার কাজে অভিজ্ঞ ৪০ জনকে উপত্যকায় পাঠানো হবে বলে ওড়িশা সরকারের তরফে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE