Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মাখড়ায় ঢোকার আগেই গ্রেফতার বিজেপি প্রতিনিধিরা

১৪৪ ধারা ভেঙে দুষ্কৃতীদল গ্রামে তাণ্ডব ও সাধারণ মানুষের প্রাণ নিলেও জন প্রতিনিধিদের সেই গ্রামে ঢোকার সময়ে বাধা দেওয়ার সরকারি প্রয়াস অব্যাহতই রইল। বুধবার আটকানো হয়েছিল তিন প্রধান বিরোধী দলের সদস্যদের। বৃহস্পতিবার আটকানোর সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতারও করা হল বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের। গ্রেফতার হলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুখতার আব্বাস নকভি, সাংসদ কীর্তি আজাদ, উদিত রাজ এবং দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ।

পাড়ুইয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি। ছবি: বিশ্বজিত্ রায়চৌধুরী।

পাড়ুইয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি। ছবি: বিশ্বজিত্ রায়চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ১৭:২৮
Share: Save:

১৪৪ ধারা ভেঙে দুষ্কৃতীদল গ্রামে তাণ্ডব ও সাধারণ মানুষের প্রাণ নিলেও জন প্রতিনিধিদের সেই গ্রামে ঢোকার সময়ে বাধা দেওয়ার সরকারি প্রয়াস অব্যাহতই রইল। বুধবার আটকানো হয়েছিল তিন প্রধান বিরোধী দলের সদস্যদের। বৃহস্পতিবার আটকানোর সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতারও করা হল বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের। গ্রেফতার হলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুখতার আব্বাস নকভি, সাংসদ কীর্তি আজাদ, উদিত রাজ এবং দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। পুলিশ, কমব্যাট ফোর্সের সঙ্গে বিজেপি কর্মী এবং গ্রামবাসীদের ধাক্কাধাক্কিতে ফের এক বার কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মাখড়া। আহত হলেন বেশ কয়েক জন। মাখড়া যাওয়ার তিন কিলোমিটার আগেই আটকানো হয় তাঁদের। পাড়ুই থানায় নিয়ে যাওয়ার পর জামিনে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। গ্রেফতার হয়ে রাহুলবাবু বলেন, “সিপিএম গেলেও শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হল না। চার জন ঢুকলে ১৪৪ ধারা ভাঙা হত না। পুলিশ তা-ও আমাদের ঢুকতে দিল না। মাখড়ার কথা জাতীয় স্তরে তুলে ধরা হবে।” রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে নকভি বলেন, “খুবই খারাপ অবস্থা রাজ্যের। সন্ত্রাসবাদীদের আখড়া হয়ে উঠছে রাজ্য।” দিল্লি ফিরে কেন্দ্রীয় সরকারকে সবিস্তার রিপোর্ট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। দলের নেতাদের গ্রেফতারির প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি, চলে পথ অবরোধও। ব্যারাকপুরের বাসুদেবপুর মোড়ের কাছে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করেন কয়েকশো বিজেপি কর্মী-সমর্থক।

এ দিকে মাখড়া কাণ্ডের পর ফের এক বার বিতর্কে বীরভূম জেলা পুলিশ। চৌমণ্ডলপুরে পুলিশের উপর হামলায় পুলিশি হেফাজতে থাকা এক অভিযুক্তকে ফের আদালতে হাজির করিয়ে নিজেদের হেফাজতে চায় পুলিশ। ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিচারক আদালতে ডেকে পাঠিয়ে তীব্র ভর্ত্সনা করেন গ্রেফতারকারী অফিসার এবং পাড়ুই থানার ওসি-কে। শুক্রবার আদালতে এসে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে জেলা পুলিশ সুপার এবং তদন্তকারী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আসতে বলা হয়েছে পাড়ুই থানার ওসিকেও। চৌমণ্ডলপুরের ঘটনায় দু’দিন আগেই ইলমবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয় আলি জিন্নাকে। মাখড়া কাণ্ডে ধৃত চার জনের সঙ্গে এ দিন ফের তাকে আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে চায় পুলিশ।

পাড়ুইয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধি দলের গ্রেফতারির প্রতিবাদে
সিউড়ির রাস্তায় বিজেপির বিক্ষোভ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

এ দিন যাত্রা শুরু হওয়ার আগেই প্রশাসনের তরফ থেকে সতর্কবার্তা এসেছিল। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে বিজেপির প্রতিনিধিদলকে মাখড়ায় যাওয়ার আগে সতর্ক করে জানানো হয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকার কথা।

গত মঙ্গলবার বহিরাগতদের আক্রমণে যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নেয় বীরভূমের মাখড়া। মৃত্যু হয় তিন জনের। বুধবার সেখানে গিয়েছিলেন বাম-কংগ্রেস-বিজেপির প্রতিনিধিদল। কিন্তু ১৪৪ ধারা জারি থাকায় তাঁদের কাউকেই গ্রামে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। ১৪৪ ধারা ভাঙায় গ্রেফতারও করা হয় বাম প্রতিনিধিদলের বেশ কয়েক জন সদস্যকে। বৃহস্পতিবার যে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল মাখড়ায় আসবে তা আগে থেকেই দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। চিঠি দিয়ে তা জানানো হয়েছিল রাজ্য সরকারকেও। এর পরেই স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফ থেকে এই চিঠি। চিঠিতে দলটিকে মাখড়া যেতে সরাসরি নিষেধ করা না হলেও ওই অঞ্চলে যে ১৪৪ ধারা জারি আছে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুল সিংহ জানান, ওই ফ্যাক্স বার্তায় বলা হয়েছে, ‘মাখড়া গ্রামে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। সেই মতো সফরসূচি ঠিক করুন।’


কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে চলছে পথ অবরোধ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

চিঠি পেয়ে রাহুলবাবু বলেন, “নন্দীগ্রামের কায়দায় মাখড়ায় বিরোধীদের আটকাচ্ছে প্রশাসন। সে বারে বিরোধী-সহ কাউকেই এলাকায় ঢুকতে দেয়নি সিপিএম। এ বার ১৪৪ ধারা জারি করে সেই পথেই চলছে তৃণমূল।” স্বরাষ্ট্র দফতরের পাঠানো চিঠি নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবছে বিজেপি। চিঠিটি রাজ্যপালকে দেখানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বিজেপির তরফ থেকে। তবে স্বরাষ্ট্র দফতরের ‘নিষেধাজ্ঞা’ উপেক্ষা করেই সকাল ৯টা নাগাদ মাখড়ার উদ্দেশে রওনা দেন বিজেপির প্রতিনিধিরা। রওনা হওয়ার আগে রাজ্য সরকারের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে নকভি বলেন, “বিরোধীদের আটকাতে প্রশাসন যে তত্পরতা দেখাচ্ছে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তার দশ শতাংশ দেখালেও মাখড়ার মতো ঘটনা ঘটত না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE